কর্মসূত্রে বিদেশ যাত্রার প্রচেষ্টায় সফল হবেন। আয় খারাপ হবে না। বিদ্যা ও দাম্পত্য ক্ষেত্র শুভ। ... বিশদ
বলেছেন— হে উদ্ধব! শ্রুতি স্মৃতি প্রবৃত্তি শ্রোতব্য বা শ্রুত বিষয় সকল পরিত্যাগ কর। আমি সকল দেহীর আত্মস্বরূপ, তুমি একনিষ্ঠ ভক্তিবলে একমাত্র আমারই শরণ লইয়া আমার প্রসাদেই অকুতোভয় হও। মানুষকে তার অক্ষমতার কথা স্মরণ করিয়ে তাকে শরণাগতির পথ ধরিয়ে দেবার জন্যই বোধহয় শ্রীরামকৃষ্ণ লীলায় গিরীশ ঘোষের নেমে আসা। শ্রীঠাকুর একদিন বললেন—গিরীশ, সকাল সন্ধ্যায় স্মরণ মনন করবে। চিন্তামগ্ন গিরীশের দুচোখ মৌন অক্ষমতা। তাই দেখে ঠাকুর বললেন—আচ্ছা, খাবার শোবার আগে তাঁকে ডাকবে। খাওয়া শোয়ার নিয়ম বন্ধনহীন গিরীশ ব্যথাভরা দৃষ্টিতে চেয়ে থাকলেন আর আস্তে আস্তে মাথা নেড়ে জানালেন, তাও তিনি পারবেন না। সহসা করুণাময়ের করুণ কণ্ঠে জেগে ওঠে গভীর আশ্বাস—“তবে আমায় বকল্মা দাও” (সেই মামেকং শরণং ব্রজ)। গিরীশ পেলেন দিশা। ভরাডুবির হাত থেকে তরণী যেন বেঁচে উঠলো। গিরীশ লুটিয়ে পড়লেন ঠাকুরের চরণে। কিছু না পেরে তিনি সব পারলেন। অবশ্য এই পারার মূলে রয়েছে শ্রীঠাকুরের প্রতি গভীর বিশ্বাস—একেবারে পাঁচসিকে পাঁচআনা বিশ্বাস। তাঁরই জীবনের আর একটি ঘটনার কথা বলি। এক বিশেষ দিনে গঙ্গা স্নানে পবিত্র হ’তে নরনারী চলেছেন গঙ্গার দিকে। গিরীশ ঘোষেরও ইচ্ছা হয়েছে সেদিন গঙ্গা স্নানের। গঙ্গার ঘাটে নামতে গিয়ে হঠাৎ মনে হয়েছে—একি? আমার আবার গঙ্গা স্নানের কি প্রয়োজন? আমি যে সাক্ষাৎ ভগবানের আশ্রয় পেয়েছি। গঙ্গা-স্নান তো ভাবের ঘরে চুরি বই আর কিছু নয়। ব্যস্ থমকে দাঁড়িয়ে পড়লেন।। অথচ গঙ্গা স্নানে এসে স্নান না করেও ফিরে যাবার ইচ্ছা নাই। তখন মা গঙ্গাকে বললেন — মা, তুমিই আমার স্পর্শে পবিত্র হও, বলে গঙ্গায় নেমে স্নান করে চলে এলেন। বিশ্বাসের এত গভীরতা যেখানে সেখানেই প্রকৃত শরণাগতি সম্ভব। তাই গিরীশ ঘোষের মত শরণাগতি সহজ মনে হলেও খুবই কঠিন।
গিরীশ ঘোষ পরবর্তী জীবনে নিজেই বলেছেন—ভেবেছিলাম বকল্মা দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হলাম, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই বুঝছি যে, কত কঠিন।
শরণাগতির সঙ্গে অহংকারের চিরন্তন শীতযুদ্ধ। এ সংঘর্ষ মিটেও মেটে না। এ বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দের জীবন আমাদের অনুধাবনের বস্তু। স্বামীজির জীবনের যে বিরাট অহং-এর স্ফুরণ ও বিলাস আমরা দেখি তার পিছনে রয়েছে শরণাগতিরই সাধনা। প্রতিপদে তাঁর গগনচুম্বী অহংকার শ্রীঠাকুরের চরণে হয়েছে চরণায়িত। শ্রীঠাকুরের প্রথম স্পর্শেই অহং এত ঘা খেয়েছে যে, সেটি সইতে না পেরে বলে উঠেছেন— ঠাকুর, তুমি আমার একি করলে! আমার বাবা আছে মা আছে! ঠাকুরও বলেন, আচ্ছা, থাক্ থাক্ পরে হবে। পরের বার স্বামীজি খুব দৃঢ় চিত্ত ও পরিপূর্ণ সম্বিৎ নিয়েই এসেছেন— মায়াবী ঠাকুরের স্পর্শের প্রভাব থেকে নিজেকে মুক্ত রাখবেনই।