কর্মসূত্রে বিদেশ যাত্রার প্রচেষ্টায় সফল হবেন। আয় খারাপ হবে না। বিদ্যা ও দাম্পত্য ক্ষেত্র শুভ। ... বিশদ
বরানগরের আশ্রমে বারান্দায় শ্রীঠাকুর বসেছেন ভক্ত—পরিবৃত হয়ে। নিত্যদিনের মতো গোপালজীর ভোগ রাগ পূজা আরতি ইত্যাদি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মূল মন্দিরে। বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেছে। হঠাৎ ঠাকুরকে একজন চুপি চুপি জানালো—‘ঠাকুর, গোপাল সোনার ভোগ হচ্ছে না। মায়েরা অনেক করে চেষ্টা করলেন, গোপাল কিছুতেই ভোগ নিচ্ছেন না।’ হ্যাঁ, মায়েরা সত্যিই এটা স্পষ্ট এবং সঠিক অনুভব করতে পারতেন ঠাকুরের কৃপায়। ঠাকুর উঠে গিয়ে গোপাল সোনার ছোট্ট ধাতু বিগ্রহটিকে হাতে তুলে নিয়েই বললেন—‘কোনও ভক্ত গোপালকে ভোগ দেবে মনে করেও ভোগটি আনে নি। তাই গোপালের অভিমান হয়েছে।’ সবাই ভাবে, কে সেই ভক্ত? ঠাকুর সর্বান্তর্য্যামী। বাইরে বেরিয়েই মেডিকেল কলেজের ওয়ার্ডমাষ্টারকে ধরলেন। তিনি তো হতভম্ব। হন্তদন্ত হয়ে বললেন—‘ঠিক ঠাকুর, একদম ঠিক। আমি আসবার সময় মনে করেছিলাম গোপালের ভোগের জন্য কিছু মিষ্টি নিয়ে যাবো। কিন্তু আনা হয়নি ঠাকুর। আমায় ক্ষমা করুন। আমি এক্ষুনি আনিয়ে দিচ্ছি।’ ছুটে গেল কোনও সেবক। ওয়ার্ডমাষ্টারের টাকায় আনা মিষ্টি ভোগ দিতেই গোপালজীর ভোগ হয়ে গেল।
বাতিকারের শতখোল উৎসবের সময় গ্রামে মেলা বসেছে। শ্রীঠাকুর নোতুন আশ্রম থেকে পুরোনো আশ্রমের দিকে হেঁটে যাচ্ছেন সন্ন্যাসিনী, সন্ন্যাসী, ভক্তমণ্ডলী পরিবৃত হয়ে। বহু দোকানের সারি রয়েছে রাস্তার দুপাশে। কয়েকটি মিষ্টির দোকানের কাছ দিয়ে যাচ্ছেন সবাই। একজন বৈষ্ণব মিষ্টান্ন বিক্রেতা তার দোকানের সামনে জোড়হাত করে দাঁড়িয়ে মায়েদের উদ্দেশ করেই বললো—‘মা, আমার দোকান থেকে গোপালের জন্য কিছু নেবেন না, মা? টাটকা ক্ষীরের মিষ্টি আছে, মা।’ মায়েরা বললেন, ‘এখন দরকার নেই। আশ্রমে অনেক মিষ্টি রাখা আছে। যদি দরকার হয় পরে নেবো।’
আর যায় কোথা! গোপাল সোনার ভোগ দিতে বসে মায়েরা বুঝলেন গোপালজীর ভোগ হচ্ছে না। ঠাকুরকে জানানো হ’ল। ঠাকুর মুহূর্তের মধ্যেই বললেন—‘গোপাল ঐ বৈষ্ণবের দোকানের ক্ষীরের মিষ্টি খাবে। ওটি না হ’লে ভোগ নেবে না।’ তাড়াতাড়ি ভক্তরা ছুটে গিয়ে সেই মিষ্টি কিনে এনে নামিয়ে দিতেই স্বছন্দে ভোগ হয়ে গেল।
এইভাবে অনেক ঘটনাই নিত্য ঘটতো। গোপালের ভোগের থালায় চুল পড়ে রয়েছে। কেউ জানে না। গোপালের ভোগ হচ্ছে না দেখে ঠাকুর জানলেন কারণটি। দেখা গেল, ঠাকুর যা বললেন তাই ঠিক। থালা ধুয়ে সব ভোগ পালটে দিতে হ’ল।
এরকম ঘটনা রোজদিনই শুনতে শুনতে ঠাকুরেরি সেজভাই
আমাদের সেজকা’র মনে একদিন চাক্ষুষ পরীক্ষার ইচ্ছা জাগলো। সত্যিই কি মায়েরা বুঝতে পারেন? আর সত্যিই কি ঠাকুর সেই কারণটা জানতে
পারেন ভোগ না হবার? ব্রহ্মার মনেও সংশয় জেগেছিল বৃন্দাবন লীলায়। এই সংশয় না থাকলে, সপ্রমাণ ভগবৎলীলার প্রতিষ্ঠা হয় না। তাই পরীক্ষারও প্রয়োজন আছে।