কাজকর্মে আকস্মিক বিঘ্ন ও ভোগান্তি। আইনজীবী ও মুদ্রণ, কাগজ ও কৃষিজ পণ্যের ব্যবসায়ীদের শুভদিন। ... বিশদ
বেদান্তে সংগ্রামের স্থান আছে, কিন্তু ভয়ের স্থান নাই। যখনই স্বরূপ সম্বন্ধে দৃঢ়ভাবে সচেতন হইতে শুরু করিবে, তখনই সব ভয় চলিয়া যাইবে। নিজেকে বদ্ধ মনে করিলে বদ্ধই থাকিবে; মুক্ত ভাবিলে মুক্তই হইবে। প্রকৃতির নিয়ম মানিয়া চলাই মুক্তি—এ ধারণার সহিত আমি একমত নই। ইহার যে কি অর্থ, বুঝি না। মানব-প্রগতির ইতিহাস অনুসারে জানা যায়, প্রাকৃতিক নিয়ম লঙ্ঘন করিয়াই প্রগতি সম্ভব হইয়াছে, উচ্চতর নিয়মের দ্বারা নিম্নতর নিয়ম জয় করা হইয়াছে, বলা যাইতে পারে। কিন্তু সেখানেও জয়েচ্ছু মন শুধু মুক্ত হইবার জন্য চেষ্টা করিতে ছিল; এবং যখনই দেখে নিয়মের মধ্য দিয়াই সংগ্রাম, মন তখনই নিয়মকেও জয় করিতে চায়। সুতরাং প্রত্যেক ক্ষেত্রেই আদর্শ ছিল মুক্তি। বৃক্ষ কখনো নিয়ম লঙ্ঘন করে না। গরুকে কখনো চুরি করিতে দেখি নাই। ঝিনুক কখনো মিথ্যা বলে না। তাই বলিয়া ইহারা মানুষের চেয়ে বড় নয়। এ জীবন মুক্তির এক প্রচণ্ড ঘোষণা; এবং এই নিয়মানুবর্তিতার বাড়াবাড়ি আমাদিগকে সমাজে, রাজনীতিক্ষেত্রে বা ধর্মে শুধু জড়বস্তু করিয়া তুলিবে। অত্যধিক নিয়ম মৃত্যুর নিশ্চিত চিহ্ন। যখনই কোন সমাজে অতি-মাত্রায় বিধি-নিয়ম দেখা যায়, নিশ্চয় জানিবে সেই সমাজ শীঘ্রই বিনাশপ্রাপ্ত হইবে। ভারতের বৈশিষ্ট্য পর্যালোচনা করিলে দেখিবে হিন্দুদের মতো আর কোন জাতির এত অধিক বিধি-নিয়ম নাই, এবং ইহার ফল জাতি-হিসাবে বিনাশ। কিন্তু হিন্দুদের একটি অপূর্ব ভাব—তাঁহারা ধর্ম-ব্যাপারে কখনো কোন মতবাদ বা গোঁড়ামির সৃষ্টি করেন নাই, তাই ধর্মের চরম উন্নতি হইয়াছে। নিয়ম চিরন্তন হইলে মুক্তি অসম্ভব, কারণ ‘চিরন্তন বস্তু নিয়মের অন্তর্গত’—এ কথা বলিলে চিরন্তনকে সীমাবদ্ধ করা হয়।
ঈশ্বরের কোন উদ্দেশ্য নাই, কারণ কোন উদ্দেশ্য থাকিলে তিনি মানুষের সমান হইয়া যাইতেন। তাঁহার কোন উদ্দেশ্যের প্রয়োজন কি? কোন উদ্দেশ্য থাকিলে তিনি তো তাহা দ্বারা বদ্ধ হইতেন। তবে তো ঈশ্বর ছাড়া কোন মহত্তর ভাব আছে বলিতে হয়। উদাহরণস্বরূপ: গালিচানির্মাতা একখণ্ড গালিচা বয়ন করে; একটা কিছু মহত্তর ভাব তাহার বাহিরে ছিল (যাহা সে গালিচায় ফুটাইয়া তুলিয়াছে)। যে-ভাবের সহিত ঈশ্বর নিজেকে মিলাইয়া চলিবেন, সেই ভাবটি কোথায়? ঠিক যেমন বড় বড় সম্রাটগণ কখনো বা পুতুল লইয়া খেলা করেন; ঈশ্বরও তেমনি এই প্রকৃতির সহিত খেলা করেন; এবং ইহাকে আমরা বিধি বা নিয়ম বলি। আমরা ইহাকে নিয়ম বলি, কারণ সেটুকু বেশ চলে। আমরা ঘটনার অংশটুকুই দেখিতে পাই; সেইটুকুর মধ্যই নিয়ম সম্বন্ধে আমাদের ধারণা নিবদ্ধ।