উচ্চশিক্ষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় দিনটি শুভ। কর্মস্থলে বড় কোনও পরিবর্তন নেই। আর্থিক দিক অপেক্ষাকৃত শুভ। ... বিশদ
ইতিহাস বলছে, ১৯৫৩ সালে যখন প্রথম রাজ্য পুনর্গঠন কমিশন তৈরি হয়েছিল তখন তার উদ্দেশ্য ছিল ভাষা ও সংস্কৃতির মিল দেখে নতুন রাজ্য গঠনের ছাড়পত্র দেওয়া। সেবছরই স্বাধীন ভারতে প্রথম ভাষাভিত্তিক রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে অন্ধ্রপ্রদেশ। ভাষার ভিত্তিতে আরও একাধিক রাজ্যের জন্ম হয়। কিন্তু পরবর্তীকালে রাজ্য গঠনের মূল ধারণাটিকেই বদলে ফেলা হয়। দেখা যায়, স্থানীয় রাজনৈতিক টানাপোড়েন, ক্ষমতালিপ্সু নেতাদের স্বার্থ, বিভিন্ন আদিবাসী গোষ্ঠীর ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে নতুন রাজ্যের জন্ম হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন রাজ্য কিংবা অটলবিহারী রাজপেয়ির আমলে বিহার ভেঙে ঝাড়খণ্ড, মধ্যপ্রদেশ ভেঙে ছত্তিশগড় রাজ্য গঠনের পিছনে মূল কারণ এটাই। আসলে প্রশাসন পরিচালনার সুবিধার সাফাই দিয়ে বিজেপি-আরএসএস বরাবরই ভারতকে ছোট রাজ্যে ভাগের সমর্থক। তাদের দর্শন হল, ভারত একটি একক রাষ্ট্র, যাকে সুশাসনের প্রয়োজনে প্রশাসনিক ভাগে বিভক্ত করা প্রয়োজন। ভারতে সবাই ভারতীয়। সুতরাং এই রাজ্য ভাগে কিছু আসে যায় না। কিন্তু এই দেশ যে অন্তত পাঁচ হাজার বছরের ঐতিহ্যকে বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা বিভিন্ন ভাষা, সংস্কৃতি ও উপাসনার সমন্বয়স্থল, এদেশের কাঠামো যে যুক্তরাষ্ট্রীর— তা মানে না হিন্দুত্ববাদীরা। তাই সুশাসন, উন্নয়নের নামে আসলে নিজেদের ভাবাদর্শ প্রতিষ্ঠা করাই গেরুয়াবাহিনীর মূল উদ্দেশ্য।
এই লক্ষ্যে দেশের সমস্ত প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে উঠেপড়ে লেগেছে মোদিবাহিনী। কৌশল হল, জনসংখ্যার ভিত্তিতে এমনভাবে লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস ও রাজ্য ভাগ করো যাতে আজকের বিরোধীরা ক্রমশ শক্তি হারিয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে। বিনিময়ে নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। যেমন অঙ্কের বিচারে দক্ষিণের রাজ্যগুলির তুলনায় হিন্দিবলয়ের রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যার হার অনেক বেশি। সুতরাং জনসংখ্যার ভিত্তিতে আসন পুনর্বিন্যাস হলে দক্ষিণের রাজ্যগুলিতে আসন তো বাড়বেই না, উল্টে কমতেও পারে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ডের মতো গো-বলয়ের রাজ্যগুলিতে আসন বাড়বে অনেকটাই। এতেই লাভ বিজেপির। কারণ ঐতিহাসিকভাবে দক্ষিণে তারা দুর্বল। কিন্তু হিন্দিবলয়ে তাদের একচেটিয়া রাজত্ব। ঠিক একই ভাবে রাজ্য পুনর্গঠনের কাজ তারা এমনভাবে করতে চাইছে যাতে আখেরে লাভ হয় তাদের। যেমন, বিহারে তিনটি ও পশ্চিমবঙ্গের দুটি জেলা নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের দাবি উঠেছে বিজেপির এক নেতার তরফে। এই পাঁচটি জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যালঘুরা। একইভাবে দাবি উঠেছে গ্রেটার কোচবিহার রাজ্যের। কৌশল খুব পরিষ্কার। রাজ্য ছোট হলে তার প্রভাব প্রতিপত্তি কম হয়। অর্থনীতি দুর্বল হয়। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে কর্তৃত্ব করা অনেক সহজ হয়। কেন্দ্রীভূত স্বৈরাচারী শাসন কায়েম করার সুবিধাও হয়। এটাই বিজেপির আদর্শ ‘রাম-রাজ্য’।