আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
এই দুটি নমুনা মাত্র। টানা ২০ দিন যাবৎ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলির এটাই সাধারণ এবং অতিকরুণ ছবি। জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রথম ১৫ দিনে রাজ্যে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ। সাধারণ সময়ে ২৪টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের আউটডোরে ১৫ দিনে ১০ লক্ষাধিক রোগী পরিষেবা পান। সেখানে কর্মবিরতির প্রথম এক পক্ষকালে আউটডোর পরিষেবা পেয়েছেন তার অর্ধেকেরও কম মানুষ। সাধারণ দিনে গড়ে সাড়ে ছ’হাজার মানুষ মেডিক্যাল কলেজগুলিতে ভর্তি হন। তা এখন মাত্র চার হাজারে নেমে এসেছে। সেই হিসেবে ২৩ আগস্ট পর্যন্ত ভর্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন সাড়ে ৩৭ হাজার মানুষ। এমনকী, ইমার্জেন্সিতেও ২৫ হাজার রোগী কম হয়েছে। অপারেশন কমেছে অন্তত আড়াই হাজার। রাজ্যের বড় সরকারি হাসপাতালগুলিতে রোজ গড়ে ৫৭ হাজার জনের ল্যাব টেস্ট হয়। নিখরচার সেই সুবিধালাভও কমে অর্ধেক এখন। ভাটা পড়েছে রক্ত সংগ্রহেও।
আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে ডাক্তারদের কর্মবিরতির শুরু ৯ আগস্ট। আজ, বুধবার এই অব্যবস্থার ২০ দিন। স্মরণকালের মধ্যে সাধারণ মানুষের চিকিৎসা পরিষেবা এইভাবে নস্যাৎ হওয়ার দৃষ্টান্ত বেনজির। শুরুর দিকে তাঁদের সমর্থন করছিলেন বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ। এমনকী, ভোগান্তি সত্ত্বেও বহু রোগীর পরিজনও এই লড়াইয়ের পাশে ছিলেন। কিন্তু আজ বেশিরভাগ মানুষই বিরক্ত। ডাক্তার, হাসপাতাল, চিকিৎসা প্রভৃতির মূল লক্ষ্য মানুষ। হালফিল আন্দোলনের ফলে সেটাই বহুলাংশে নস্যাৎ হতে বসেছে। মানুষ আজ বড় অসহায়। তরুণী মহিলা ডাক্তারের সঙ্গে নৃশংসতার ঘটনার সুবিচার সকলেই চান। প্রত্যেকেই চান দোষীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তদন্ত ও বিচার প্রক্রিয়া অবশ্যই চলবে। এগুলি শেষও করতে হবে অতিদ্রুত। এই দাবির সঙ্গে সহমত সকলেই। পাশাপাশি, চিকিৎসা পরিষেবাও স্বাভাবিক রাখার পক্ষে তাঁরা। পরিস্থিতির ভয়াবহতা অনুধাবন করে ইতিমধ্যেই বিষয়টিতে মত প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টও। বিচারের সর্বোচ্চ আসন থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, ডাক্তাররা যেন অবিলম্বে তাঁদের কাজে ফিরে যান। রাজ্য সরকার তো বটেই, কেন্দ্রও একই আবেদন রেখেছে। কিন্তু কারও কথাতেই কর্ণপাত করছেন না আন্দোলনরত ডাক্তাররা। এমনিতেই আমাদের দেশে ডাক্তারের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য এবং সরকারি চিকিৎসা পরিকাঠামো অত্যন্ত দুর্বল। ফলে গরিব এবং প্রান্তিক মানুষজন সাধারণভাবেই উপযুক্ত চিকিৎসা পান না। ‘বিকল্প’ চিকিৎসার নামে বহু গরিব লোক আঁকড়ে রয়েছেন ঝাড়ফুঁক বা ওঝা-গুনিনের কেরামতি। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসবের সুবিধা বঞ্চিত বহু মা। ডাইনি প্রথা থেকেও মুক্ত নয় সমাজ। এমনই এক করুণ পরিস্থিতিতে ডাক্তারদের একাংশের অবিবেচক ভূমিকায় রাজ্যের বিনামূল্যের সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা অনেকাংশেই নস্যাৎ হয়ে যাচ্ছে। সচেতন, সংবেদনশীল মানুষের প্রশ্ন, আন্দোলনকারীরা কী চান? গরিব প্রান্তিক মানুষজন কি ফের কুসংস্কারের অন্ধকার আবর্তে ফিরে যাবেন? এই অপরাধের দায় তাঁরা নেবেন তো?