আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
এই ভয়াবহ প্রতিযোগিতার বাজারে মোদি জমানায় আমদানি ঘটেছে ‘ডাবল ইঞ্জিন’ নামক এক বিপজ্জনক তত্ত্বের। অর্থাৎ কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের হাতেই যেন রাজ্য সরকারগুলি থাকে। তাহলে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের উপর দিল্লির কৃপা বর্ষিত হবে অবাধে। আর সেই রাজ্যের মানুষ যদি দিল্লিওয়ালাদের বিমুখ করার মতো ‘ভুল’ করে বসে তবে তাকে ভুগতেই হবে। এমন শাস্তির খাঁড়া যতগুলি বিরোধী সরকারের ঘাড়ে একদশক যাবৎ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে, তাদের মধ্যে প্রথম নামটি হল পশ্চিমবঙ্গ। কারণ পঞ্চায়েত, পুরসভা থেকে বিধানসভা, লোকসভা—প্রতিটি নির্বাচনে মোদির পার্টি বাংলার শক্ত মাটিতে নাস্তানাবুদ হয়েছে। মোদি-শাহদের বঙ্গবিজয়ের স্বপ্ন চুরমার হয়েছে বারবার। আর যায় কোথায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সবক শেখাতে গিয়ে নানা খাতে বাংলার প্রাপ্য অর্থ দিল্লি থেকে বারবার আটকে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী রাজ্যগুলির সঙ্গে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার সময় একাধিক অজুহাত তোলা হচ্ছে। তার মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ খরচের হিসেব সময়মতো না-দেওয়া কিংবা আর্থিক দুর্নীতি বা অস্বচ্ছতা। যেমন ২০২২ সালে বাংলায় প্রতিনিধি দল পাঠিয়ে চার জেলায় মোট ৫.৩৭ কোটি টাকা অপব্যবহারের অভিযোগ তোলে নয়াদিল্লি। ইতিমধ্যে ১.৬৭ কোটি টাকা উদ্ধারও করেছে রাজ্য। বাকি মাত্র ৩.৬৪ কোটির জন্য জারি রয়েছে চাপসৃষ্টি। দিল্লির সাফ কথা, এই পুরো টাকা উদ্ধার হলে তবেই মনরেগায় টাকা পাবে নবান্ন! অথচ, খোদ মনরেগার অডিটেই প্রকাশ, বিজেপি এবং বিরোধী শাসিত একাধিক রাজ্যে একই প্রকল্পে বরাদ্দ বহু কোটি টাকার অপব্যবহার ঘটেছে। সেখানে বাকিদের ক্ষেত্রে সাত খুন মাফ হয়ে গেলেও ভোগানো হচ্ছে শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গকেই! নবান্নের অভিযোগ, মনরেগায় এখনও পর্যন্ত বাংলার প্রতি মোদি সরকারের বঞ্চনার অর্থাঙ্ক প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার! সহজেই অনুমান করা যায়, বিজেপি সরকারের ভ্রান্ত রাজনীতির কী সাংঘাতিক বলি বাংলার গরিব জনগণ। কারণ আটকে দেওয়া টাকার মধ্যে রয়েছে মনরেগা (বছরে ১০০ দিনের কাজের নিশ্চয়তার প্রকল্প) এবং আবাস যোজনা (গরিবের জন্য বিনামূল্যে পাকাবাড়ি তৈরির প্রকল্প)। হকের বাড়ি না-পেয়ে বহু মানুষের শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কাটছে খোলা আকাশের নীচে কিংবা বিপজ্জনক কাঁচাঘরে অথবা নোংরা বস্তিতে। এই কারণে বহু মানুষের অকাল মৃত্যুও হচ্ছে। অন্যদিকে, মনরেগায় রাজ্যকে টাকা না-দেওয়ায় বহু মানুষ কাজ পাচ্ছেন না। কাজের সুযোগ আটকে দেওয়ার পরিণাম যা হওয়ার হচ্ছে সেটাই—জোয়ার সঞ্চারিত হচ্ছে বেকারত্বে। গরিব মানুষের হাতে পয়সা না-থাকায় তাঁরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারছেন না। সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে উৎপাদন ব্যবস্থা ও বাজার। উৎপাদন ও বাজারের উপর নেমে আসা এই ধাক্কাতেও আর একদফা আঘাতপ্রাপ্ত হয় শ্রমের বাজার।
অর্থাৎ মোদি সরকারের রাজনৈতিক সংকীর্ণতার নীতি বেকারত্বকেই নিরন্তর প্রোমোট করে চলেছে। সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (সিএমআইই) তথ্য বলছে, গত মে মাসে দেশে বেকারত্বের হার ছিল ৭ শতাংশ। জুনে সেটা এক ধাক্কায় ৯.২ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে। কনজিউমার পিরামিডস হাউসহোল্ড সার্ভেতে দেখা যাচ্ছে, বেকারত্বের হার মহিলাদের ক্ষেত্রে আরও ভয়াবহ—১৮.৫ শতাংশ। সংখ্যাটি একবছর আগের ওইসময়ে ছিল ১৫.১ শতাংশ। অর্থাৎ গত একবছরে কাজের বাজারে মহিলাদের আরও পিছনের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে! বাছাই করা একাধিক বিরোধী দলকে টাইট দিতে গিয়ে এইভাবে যে দেশের অর্থনীতিরই সাড়ে সর্বনাশ ঘটছে, এই বোধ পদ্মপার্টির কোনোদিনই হবে বলে ভরসা হয় না। মোদিবাবুরা বারবার প্রমাণ দিচ্ছেন, দেশ নয়, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দখলদারিই তাঁদের সংবিধানের শেষকথা!