আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
হাসপাতাল যে কর্মবিরতি বা ধর্মঘট করার জায়গা নয় সেই সহজ কথাটা সোজা ভাষায় আরও একবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বিচারপতিরা বলেছেন, ‘বিচার ও চিকিৎসা ধর্মঘটে যেতে পারে না।’ এই জন্যই হাসপাতাল, ‘জরুরি পরিষেবা’র আওতায় পড়ে। যে কোনও রাজনৈতিক দল যখন ধর্মঘট বা বন্ধ ডাকে তখন চিকিৎসা পরিষেবাকে ‘ছাড়’-এর আওতায় রাখা হয়। ভেবে দেখা দরকার, সরকারের কাছে কোনও দাবি জানিয়ে যদি পুরসভার কর্মীরা পানীয় জল সরবরাহ বন্ধ করে দেন, আগুন নেভানো যাঁদের দায়িত্ব সেই দমকল কর্মীরা ধর্মঘট শুরু করেন, যদি বিদ্যুৎ কর্মীদের ন্যায্য দাবিতে ধর্মঘটের কারণে ধসে পড়ে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা— তা কি অভিপ্রেত হবে? এ নিয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই যে, ন্যায্য দাবিতে ক্রমাগত চাপ তৈরি করা গেলে যে কোনও সরকার পিছু হটতে বাধ্য হয়। আর জি করের ঘটনা সেই বিরলের মধ্যে বিরলতম ঘটনা যার সুবিচার চেয়ে লাগাতার আন্দোলন হচ্ছে। এটা সময়ের দাবি এবং এই কারণেই সমাজের সর্বস্তরের মানুষ পথে নেমেছেন। একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিবর্তন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ আন্দোলন চলুক, চান প্রায় সকলে। কিন্তু প্রশ্নটা অন্যখানে, আন্দোলনের ধরন নিয়ে। প্রশ্ন হল, সরকারি হাসপাতালে যাদের চিকিৎসা পাওয়া সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, টানা কর্মবিরতি চালিয়ে এবং তা অনির্দিষ্টকালের জন্য চালানোর কথা জানিয়ে কি লক্ষ কোটি মানুষকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না? দশ দিনে সিবিআইয়ের একজনকেও গ্রেপ্তার করতে না পারার দায়ভার কেন হাসপাতালে চিকিৎসা করতে আসা গরিব-মধ্যবিত্ত মানুষ নেবেন? তাঁদের অপরাধ কী?
এমন নয় যে ঘটনার পর দু’ সপ্তাহের আন্দোলনে সরকারকে একটুও টলানো যায়নি। বরং দেখা যাচ্ছে, ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একজন গ্রেপ্তার হয়েছে। পুলিসের ব্যর্থতা মান্যতা পেয়েছে আদালতে। দাবিমতো তদন্তভার গিয়েছে সিবিআইয়ের হাতে। যে নিরাপত্তার দাবি নিয়ে গোটা দেশ উত্তাল, সেই হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্ব থেকে পুলিসকে সরিয়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে (সিআইএসএফ) আনা হয়েছে, ডাক্তারদের দাবি মেনে হাসপাতালের চার মাথাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ‘কুখ্যাত’ সন্দীপ ঘোষকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে রাজ্যের তরফে ‘সিট’ গঠন করা হয়, শুক্রবার আদালতের নির্দেশে এই তদন্তভারও যায় সিবিআইয়ের হাতে। হাসপাতালের পরিষেবা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারি করেছে সরকার ও পুলিস। গোটা দেশে ডাক্তারদের নিরাপত্তা জোরদার করতে জাতীয় কমিটি তৈরি করেছে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট। তার মানে, আন্দোলনের চাপে নড়েচড়ে বসেছে সব মহল। এবার হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসার পরিবেশ ফিরিয়ে দিয়ে মানবিকতা ও দায়বদ্ধতা দেখানোর সময় জুনিয়র ডাক্তারদের। তাতে সমর্থন বাড়বে ছাড়া কমবে না।