আয় বৃদ্ধি ও গৃহসুখ বৃদ্ধি। কর্মস্থলে সাফল্য ও প্রশংসা লাভের সম্ভাবনা। শরীর-স্বাস্থ্য বুঝে চলুন। ... বিশদ
দেরিতে হলেও আমরা উপলব্ধি করেছি যে—না, পৃথিবীটা সকলকে নিয়েই সুন্দর ও বাসযোগ্য। কোনও একটিকে ছেঁটে ফেলতে গেলেই এই গ্রহ টলে উঠবে, হারিয়ে ফেলবে তার শৃঙ্খলা, ভারসাম্য। এই যেমন দূষণ এখন লাগাম ছাড়া। বাড়ছে তাপমাত্রা। ঝড়বৃষ্টি শীত-গ্রীষ্ম ছন্দ হারিয়ে ফেলেছে। অসময়ে বন্যা এবং খরার কোপে নানা দেশ। বেড়ে চলেছে বজ্রপাতের ঘটা, সুনামি, ভূমিকম্প, ভূমিধস ও মেঘভাঙা বান। সবসময়ই ভয় হয়, এই বুঝি বাসযোগ্যতা হারাল পৃথিবীটা! বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে চলেছেন—নদী, জলাশয়, পাহাড়, জঙ্গল প্রভৃতি নির্বিচারে ধ্বংসেরই পরিণাম এসব। তাঁদের পরামর্শ, বাঁচার একটাই উপায় আরণ্যক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। শহর এবং গ্রামের সৌন্দর্য অক্ষুণ্ণ রেখেই তা সম্ভব। প্রচুর চারা রোপণ এবং গাছ বড় করতে হবে। আর জলাভূমি ধ্বংস নয়। যেখানে যতটুকু জলা, নদ-নদী আছে সেসব রক্ষা করতে হবে। এই উপলক্ষ্যে অনেক সরকারি কর্মসূচিও চালু হয়েছে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটুকু হচ্ছে তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তারই মাঝে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পুরুলিয়ার প্রকৃতি প্রেমিক দুখু মাঝি। এই অশীতিপর বৃদ্ধকে সবাই ‘গাছদাদু’ নামে চেনে। ছোটবেলায় শুনেছিলেন, ‘গাছ অক্সিজেন দেয়। গাছ লাগালে সভ্যতা বেঁচে থাকবে।’ সেই কথাকেই শিরোধার্য করে আপন কর্তব্যজ্ঞানে রোজ গাছ লাগান তিনি। সকাল হলেই সাইকেলে গাছের চারা, কোদাল, গাঁইতি প্রভৃতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন বৃদ্ধ। একটি-দুটি করে গাছ লাগাতে লাগাতে পুরো বাঘমুন্ডিকে সবুজ করে তুলেছেন একাই। এবছরও হাজার দশেক চারা রোপণ করেছেন। পরিবেশরক্ষায় তাঁর এই জানকবুল লড়াইয়ের কাহিনিই তাঁকে ‘পদ্মশ্রী’ করে তুলেছে। কিন্তু ব্যক্তিজীবনের দুঃখ রয়েই গিয়েছে তাঁর। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা তাঁর পেরয় একটি দরমার বেড়া, ত্রিপলের ছাউনিতে। বর্ষায় জল পড়ে যে ছোট্ট ঘরে সেখানে পদ্মশ্রী স্মারক রাখাই দায়! দুখু মাঝি ভাবেন, একটা পাকা বাড়ি যদি থাকত তাঁর! দেশ দুনিয়াকে ভালো রাখার ব্রত যিনি নিয়েছেন, তাঁকে ভালো রাখার একটি বাড়ি সরকার তাঁকে দেয়নি।
‘জীবনস্মৃতি’তে রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘একবার মাঘোৎসবে সকালে ও বিকালে আমি অনেকগুলি গান তৈরি করিয়াছিলাম। তাহার মধ্যে একটা—‘নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে, রয়েছ নয়নে নয়নে।’ পিতা তখন চুঁচুড়ায় ছিলেন। সেখানে আমার এবং জ্যোতিদাদার ডাক পড়িল। হারমোনিয়মে জ্যোতি-দাদাকে বসাইয়া আমাকে তিনি নূতন গান সব-কটি একে-একে গাহিতে বলিলেন। কোনো কোনো গান দু’বারও গাহিতে হইল। গান গাওয়া শেষ হইল। তখন তিনি বলিলেন, ‘দেশের রাজা যদি দেশের ভাষা জানিত ও সাহিত্যের আদর বুঝিত তবে কবিকে তো তাহারা পুরস্কার দিত। রাজার দিক হইতে যখন তাহার কোনো সম্ভাবনা নাই তখন আমাকেই সে কাজ করিতে হইবে।’ এই বলিয়া তিনি একখানি পাঁচশো টাকার চেক্ আমার হাতে দিলেন।’ মোদি সরকার বাঙালির প্রেমে গদগদ ভাব দেখায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেকে রবীন্দ্রপ্রেমী প্রমাণে ব্যস্ত হন কখনও। কিন্তু বাস্তবে তার কোনোটাই নয়—না সরকার, না প্রধানমন্ত্রী। তাঁরা বাংলার ভাষা জানেন না এবং আদর বোঝেন না বঙ্গসংস্কৃতিরও। অতএব, মানবিক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি দুখু মাঝির দুঃখমোচনে উদ্যোগী হন তবে খুব ভালো হয়। তিনি নিছক এক ‘গাছদাদু’ নন, প্রকৃতই ‘পৃথিবীর বন্ধু’।