কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। ব্যবসায়ীদের উন্নতির আশা রয়েছে। বিদ্যার্থীদের সাফল্যযোগ আছে। আত্মীয়দের সঙ্গে মনোমালিন্য দেখা দেবে। ... বিশদ
অন্যতম ট্যুর অপারেটর সংস্থা ব্যানার্জি স্পেশালের কর্ণধার মৃদুল বন্দ্যোপাধ্যায় কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ও বিরক্ত। আগামী মার্চ এবং এপ্রিল মাসে মোট চারটি কাশ্মীর ট্যুরের বুকিং শেষ হয়ে গিয়েছে। জওয়ানদের উপর হামলার ঘটনার একদিনের তফাতেই হু হু করে বাতিল হচ্ছে সেই বুকিং। মৃদুলবাবুর কথায়, এভাবে আচমকা ব্যবসা মার খাবে, ভাবতেও পারিনি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে যাচ্ছে, আমাদের মনোবল ভেঙে যাচ্ছে।
কুণ্ডু স্পেশাল চার বছর আগেই কাশ্মীরে পর্যটক নিয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। সংস্থার কর্ণধার সৌমিত্র কুণ্ডু বলেন, আমাদের সংস্থা ১৯৩০ সাল থেকে কাশ্মীর নিয়ে যাচ্ছে পর্যটকদের। আমরাই প্রথম এমন সংগঠিতভাবে অমরনাথ দর্শনে নিয়ে যাই ১৯৩৮ সালে। এরপর প্রতি মরশুমে আমাদের অন্তত ১২টি ট্যুর করানো হতো ভূস্বর্গে। কিন্তু ১৯৮৯ সালের পর থেকে আমরা তা বন্ধ করে দিয়েছিলাম আস্তে আস্তে। ২০০০ সালের পর থেকে আবার চালু করি ঠিকই, কিন্তু অরাজক পরিস্থিতি বাড়তে থাকায় আমরা আর সাহস পাই না। কিন্তু এরপরও তো অনেক সংস্থাই কাশ্মীরে ট্যুর করিয়েছে এবং নির্বিঘ্নেই মিটেছে সেই ট্যুরগুলি। কুণ্ডু স্পেশাল তবে কেন দমে গেল? সৌমিত্রবাবুর কথায়, আসলে এখন কাশ্মীরের অশান্তিতে অনেক সাধারণ মানুষ অংশ নিচ্ছে। সেটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় আশঙ্কার। বছর দু’য়েক আগে যখন আমরা লাদাখ থেকে ফেরার সময় শোনমার্গ হয়ে শ্রীনগর আসতে বাধ্য হয়েছিলাম, তখন আমাদের কনভয় রাতে চলাচল করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। দিনের বেলা পাথর ছোঁড়া হচ্ছিল গাড়িতে। সে এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা। আমরা সেই ঝঞ্ঝাট এড়িয়ে চলতে চাই। প্যাকেজ ট্যুর না করালেও, আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রাখি সেখানকার পর্যটন শিল্পের সঙ্গে। সেখানকার অতি বিশ্বাসভাজন বন্ধুরা এখনও ভরসা জোগাতে পারেন না। অপর একটি পর্যটন সংস্থার কর্তা সুদেব বর্মনের কথায়, আমরা কাশ্মীর প্যাকেজ ট্যুর বাতিল করার জন্য ফোন পেতে শুরু করেছি। কিন্তু এখনই তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে বারণ করছি পর্যটকদের। দেখা যাক কী হয়।
ট্রাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গলের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সিনহা রায় বলেন, পুলওয়ামার জঙ্গি হানার পর দু’দিনও কাটেনি। এরই মধ্যে একটা থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে কাশ্মীর পর্যটনকে ঘিরে। তাঁর কথায়, শীত শেষের এই সময় কাশ্মীর বেড়ানোর জন্য বা বুকিংয়ের জন্য প্রচুর ফোন আসে বা সাধারণ মানুষও অফিসে এসে খোঁজ করেন। হামলার পর একটি ফোনও আসেনি, জানিয়েছেন প্রবীরবাবু।
কাশ্মীরের পর্যটনশিল্প যে এই জঙ্গি হানায় ধাক্কা খাবে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না, এ কথা স্বীকার করেছেন সেখানকার পর্যটন দপ্তরের এক আমলা। শনিবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্তা ফোনে বলেন, কাশ্মীর শব্দটির সঙ্গেই গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে একটা আতঙ্ক জড়িয়ে গিয়েছে। কিন্তু তার পরেও বহু পর্যটক এখানে এসেছেন এবং নিরাপদে ফিরে গিয়েছেন। এখন কাশ্মীরে যে ঠান্ডা পড়ে, তা এদেশীয়দের জন্য মোটেই সুখকর নয়। তাই দেশীয় পর্যটক এই সময় কম থাকে। কিন্তু গুলমার্গকে কেন্দ্র করে বিদেশি পর্যটক আসেন যথেষ্ট। এবারও তার অন্যথা হয়নি। মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশীয় পর্যটকরা ভিড় জমাতে শুরু করেন ভূস্বর্গে। তার মধ্যে যে একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গ থেকে যান, এ ব্যাপারে সন্দেহ নেই, দাবি করেছেন ওই আধিকারিক। তিনি বলেন, এবার সেই পর্যটক সংখ্যা যে কমবে, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু একই সঙ্গে এটাও সত্যি, কাশ্মীরের একটি ছোট এলাকায় সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়েছে। তার মানে কাশ্মীরজুড়েই অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়েছে, এমন নয়। ওই কর্তার আহ্বান, এখানে এলে নির্বিঘ্নেই কাশ্মীর উপভোগ করতে পারবেন পর্যটকরা। তাই অহেতুক ভয় পাওয়ার কোনও কারণ নেই, অভয় নিচ্ছেন ওই সরকারি কর্তা।
সত্যিই কি আশঙ্কা ঝেড়ে ফেলতে পারবে ভ্রমণ পিপাসু বাঙালি? যেটুকু আভাস মিলছে পযর্টনশিল্প থেকে, তাতে আসন্ন মরশুমে পর্যটকের সংখ্যা যে টাল খাবে, তাতে সন্দেহ নেই। বাকিটা বলবে সময়, বলছেন পর্যটন বিশেষজ্ঞরা।