নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: অপরাধমূলক কাজের জন্য বৈষ্ণবনগর বা চোপড়া অনেক আগেই পুলিসের খাতায় জায়গা করে নিয়েছে। জালনোট, অস্ত্র এবং মাদক পাচারের জন্য এই দু’টি এলাকার দিকে দেশের তাবড় গোয়েন্দা আধিকারিকদেরও নজর রয়েছে। ট্যাব কেলেঙ্কারির ঘটনা সামনে আসার পর ওই দু’টি এলাকার মুকুটে অপরাধের নতুন পালক সংযোজন হয়েছে। সাইবার অপরাধে এই দু’টি এলাকার সঙ্গে শিলিগুড়িও জায়গা করে নিয়েছে। ওই এলাকাগুলির দিকে বিশেষ নজরদারি চালানোর জন্য পুলিসের শীর্ষস্তর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উত্তর দিনাজপুর নিয়ে আধিকারিকদের চিন্তা বেড়েছে। এক পুলিস আধিকারিক বলেন, চোপড়া বা বৈষ্ণবনগর যাতে জামতাড়া হয়ে উঠতে না পারে তারজন্য লাগাতার অভিযান চালানোর নির্দেশ এসেছে। ট্যাব কেলেঙ্কারিতে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের সকলকে দ্রুত গ্রেপ্তারের জন্য বলা হয়েছে। তাদের ধরেই পুলিস ওই সমস্ত এলাকা থেকে সাইবার ক্রাইমের শিকড় উপড়ে ফেলতে চাইছে। এধরনের সাইবার ক্রাইম করার জন্য উচ্চশিক্ষিত হওয়ার দরকার হয় না। ‘টেকনিক্যাল সাউন্ড’ হলেই সাফল্য আসে। উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় এসে জামতাড়া গ্যাংয়ের দুষ্কৃতীরা অনেক আগে ডেরা বেঁধেছিল। তাদের কাছে থেকেই স্থানীয়রা সাইবার অপরাধে হাতেখড়ি নিয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিসের এক আধিকারিক বলেন, প্রতারকরা শুধু ট্যাবের টাকা হাতিয়ে থেমে থাকত না। তারা কিছুদিনের মধ্যে আরও একটি সরকারি প্রকল্প টার্গেট করেছিল। সেই অ্যাকাউন্টেও তারা অ্যাকসেস নিত। সেকারণে সরকারি প্রতিটি পোর্টাল সাইবার অডিট করার জন্য বলা হয়েছে। বৈষ্ণবনগর এবং চোপড়ার প্রতারকরাই বিভিন্ন স্কুলের পড়ুয়াদের অ্যাকাউন্ট সাফ করেছিল। তাদের মধ্যে কয়েকজন সদ্য এই কাজে নেমেছিল। তাদের অতীত কোনও রেকর্ড নেই। পিন্টু শেখ, শ্রবণ সরকার নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিস। তাদের অতীতে কোনও ক্রাইম রেকর্ড নেই। এবারই তারা প্রথম ট্যাবের টাকা হাতানোর চেষ্টা করেছিল। তবে কয়েকজন এর আগে ওটিপি হাতিয়ে বা লিঙ্ক পাঠিয়ে অনেকের অ্যাকাউন্ট সাফ করেছে।
হাসেম শেখ নামে ধৃত এক যুবক এই কাজে সিদ্ধহস্ত। সে জেরায় জানিয়েছে এলাকার অনেকেই সাইবার অপরাধ করার জন্য প্রশিক্ষণ নিয়েছে। কীভাবে এক অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যত্র টাকা হস্তান্তর করা যায় সেই কৌশল সে পুলিসের সামনে দেখিয়েছে। ট্যাব প্রতারণায় ধৃতদের জেরা করে পুলিস চোপড়া, বৈষ্ণবনগর বা শিলিগুড়ির সাইবার গ্যাংয়ের সম্পর্কে জানতে পেরেছে। বিভিন্ন জেলার পুলিস কলকাতায় ‘ইনপুট’ শেয়ার করেছে। তারপরই সাইবার অপরাধীদের দমন করতে পুলিস কোমর বেঁধে ময়দানে নামছে। ঝাড়খণ্ড থেকে সাইবার অপরাধীরাও ওই এলাকায় আশ্রয় নেয়। তাদেরও পাকড়াও করতে পুলিস মরিয়া হয়ে উঠেছে।