সম্মানরক্ষায় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শত্রুর সঙ্গে সম্মানজনক সমঝোতা। বাড়ি ঘর বাহন কেনার যোগ। কর্মে সংস্থাগত ... বিশদ
এবার সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী করেছিল প্রাক্তন বিচারপতি তথা রাজ্যের ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান আব্দুল গনিকে। তাঁর বিরুদ্ধে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী ছিলেন ঈশা খান চৌধুরি। আব্দুল গনি এই আসনে পেয়েছেন এক লক্ষ ৫২ হাজার ৪৪৫টি ভোট। অন্যদিকে ঈশা’র ভোট পাঁচ অঙ্কও পেরোয়নি। তিনি পেয়েছেন মাত্র ২২ হাজার ২৮২টি ভোট। কংগ্রেস এই আসনে হেরে গিয়েছে এক লক্ষ ৩০ হাজার ১৬৩ ভোটে। এই সুবিশাল ব্যবধানে পরাজয় কল্পনাতেও ছিলনা কংগ্রেস প্রার্থী থেকে সমর্থক – কারোরই। তবে তাঁদের সান্ত্বনা একটিই – এই আসনে পরাজিত সব প্রার্থীরই জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবার।
উল্লেখ্য, ১৯৬২ সাল থেকে সুজাপুর বিধানসভা কেন্দ্রে একটানা জিতে এসেছে কংগ্রেস। ১৯৬৭ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত দু’টি অকাল নির্বাচন সহ মোট পাঁচবার এই কেন্দ্র থেকে জিতেই বিধায়ক ও রাজ্যের বিদ্যুৎ এবং সেচ দফতরের মন্ত্রী হয়েছিলেন বরকত গনিখান চৌধুরি। ১৯৯১ থেকে ৩০ বছর ধরে এই কেন্দ্রে জিতে বিধায়ক থেকেছেন বরকত গনিখানেরই নিকটাত্মীয়রা।
অত্যন্ত লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, ১৯৮৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে সারা রাজ্যের সঙ্গে মালদহেও বাম-ঝড় চলেছিল। জেলার তৎকালীন ১১টি বিধানসভা কেন্দ্রের ১০টিতেই জিতেছিলেন বাম প্রার্থীরা। কিন্তু সেই ঝড়ের সামনেও মাথা নোয়ায়নি একমাত্র মালদহের সুজাপুর। সেবার জিতেছিলেন কংগ্রেস প্রার্থী হুমায়ুন চৌধুরি।
শুধু তাই-ই নয় ২০০৬ সালে গনিখানের মৃত্যুর পরে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্বয়ং সুজাপুরে সিপিএম প্রার্থীর হয়ে প্রচারে এসেছিলেন। আবেদন করেছিলেন, এখন বরকত সাহেব নেই। সুজাপুরের অভিভাবক হিসাবে আমাদের গ্রহণ করুন। তখনও সাড়া দেয়নি সুজাপুর। শূন্য হাতেই ফিরতে হয়েছিল বুদ্ধবাবুদের।
এই সুজাপুরে ২০১৬ সালে তৃণমূলের হয়ে লড়াই করেছিলেন গনিখানের ভাই আবু নাসের খান চৌধুরি (লেবু)। কিন্তু ভাইপো ঈশা খান চৌধুরির কাছেই ৪৭ হাজার ভোটে হেরে যেতে হয়েছিল গনির ভাইকেও। সুজাপুর তখনও কংগ্রেসের ‘হাত’ ছাড়েনি।
তবে পাশার দান উল্টে গেল এবার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পছন্দের প্রার্থী আব্দুল গনিকেই শেষ পর্যন্ত এক অভূতপূর্ব ব্যবধানে জিতিয়ে দিল সেই সুজাপুরই। এত বিপুল ব্যবধানে হার যেন নিজেদের প্রাণকেন্দ্র সুজাপুরেই মেরুদণ্ড ভেঙে দিল কংগ্রেসেরই।
এই বিষয়ে ফোন করেও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি জেলা ঈশা খান চৌধুরির। তবে জেলা কংগ্রেসের কার্যকরী সভাপতি কালীসাধন রায় স্বীকার করেছেন, সারা জেলায় কংগ্রেসের এই অভাবনীয় ব্যর্থতা বিস্ময়কর হলেও দলের কাছে সবচেয়ে বড় ধাক্কা সুজাপুরের ফল। তিনি বলেন, কিছুতেই মানতে পারছিনা সুজাপুরও এভাবে আমাদের থেকে বিশেষতঃ কোতোয়ালি পরিবারের যোগ্য প্রার্থী ঈশা খানের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে। আমরা সকলেই চরম ভারাক্রান্ত। কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো অবস্থায় নেই। তবে জেলা তৃণমূল সভানেত্রী মৌসম নুর বলেন, এই জয় আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই জয়। তাঁর ওপরেই ভরসা করে সুজাপুরকে তৃণমূলের হাতে তুলে দিয়েছেন এলাকার মানুষ।