বিদ্যার্থীরা পড়াশুনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবে। নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অতিরিক্ত চিন্তার জন্য উচ্চ ... বিশদ
ধূপগুড়ির ময়নাতলিতে বউভাতের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যাওয়ার সময়ে জলঢাকা সেতু পেরতেই রাতে ভয়াবহ দুর্ঘটনার মুখে পড়ে কনেযাত্রীর গাড়ি। সবমিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ১৪। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন এখনও কয়েকজন।
বুধবার ধূপগুড়িতে পাত্রের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পড়ে রয়েছে রান্না করা হরেকরকমের খাবার। পাত্র-পাত্রী উভয় বাড়িতেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা। যাঁরা আছেন, তাঁরাও নির্বাক। মহিলারা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। ২৪ ঘণ্টা আগেও যেখানে আনন্দে মেতে উঠেছিলেন আত্মীয়স্বজন পড়শীরা, সেখানে এখন শুধুই বিষণ্ণতা। এদিন কার্যত দুই পাড়ার কারও বাড়িতে চড়েনি হাঁড়ি। মোড়ে মোড়ে জটলা। সকলের মুখে একটাই কথা, ‘কী যে হয়ে গেল।’
সোমবার ময়নাগুড়ি রানিহাট মোড়ের জয়দেব রায়ের মেয়ে জয়ার বিয়ে হয় ধূপগুড়ির বিকাশ রায়ের সঙ্গে। বিকাশ পেশায় কৃষক। মঙ্গলবার ময়নাতলিতে ছিল নবদম্পতির বউভাতের অনুষ্ঠান। কনেপক্ষ রাতে তিনটি গাড়িতে করে বৌভাতের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য রওনা হয়। জয়দেববাবুর আত্মীয়স্বজন সহ পাড়ার কয়েকজন ধূপগুড়ির উদ্দেশে রওনা হন সাড়ে ৮টার পর। অনুষ্ঠানবাড়ি পৌঁছনোর কয়েক কিমি আগে সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়ে কনেযাত্রী বোঝাই তিনটি গাড়িই। স্থানীয় ও পুলিস সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি তিনটি জলঢাকা সেতু পেরিয়ে একটি পেট্রল পাম্পের কাছে দুর্ঘটনার মুখে পড়ে। বোল্ডার বোঝাই একটি লরির সঙ্গে কনেপক্ষের গাড়িটির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে লরিটির একাংশ ডিভাইডারে উঠে যায়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ছোট গাড়ির পিছনেই বাকি দু’টি গাড়ি আসছিল। ডিভাইডারে উঠে বোল্ডার বোঝাই লরিটি উল্টে যায় বাকি দু’টি ছোট গাড়ির উপর। বোল্ডারের নীচে কমবেশি সকলেই চাপা পড়েন। শুনশান অন্ধকার রাস্তায় চাপা পড়ে থাকা কনেযাত্রীদের কান্নার আওয়াজে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। আটকে থাকা শিশু, বয়স্ক সহ বাকিদের উদ্ধার করতে গ্রামবাসীরা হাত লাগান। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কে এমন দুর্ঘটনার পর যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য গাড়ির চালক, খালাসিরাও উদ্ধারকাজে শামিল হন। রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। এতে ঘটনাস্থলে পৌঁছতেও পুলিস, দমকলের ইঞ্জিনের কিছুটা সময় লেগে যায়। বোল্ডার সরিয়ে আহত,মৃতদের বের করে আনতে পুলিসকে বুলডোজার নিয়ে আসতে হয়। স্থানীয়রা পুলিসের সহযোগিতায় অ্যাম্বুলেন্সে জখমদের তুলে হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। সকলকে ধূপগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু ততক্ষণে প্রায় সবকিছুই শেষ।
পাত্রীর বাবা জয়দেববাবু বাকরুদ্ধ। তরতাজা ১৪টি প্রাণ ঝরে যাওয়ায় কিছু বলার মতো পরিস্থিতিতে ছিলেন না তিনি। পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব শিলিগুড়ি থেকে এলে তাঁকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। শুধু একটি কথাই বারবার বলেন, সবকিছু শেষ হয়ে গেল। পাত্র বিকাশ বলেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের বাড়িতে আসছিলেন। এমনটা যে হতে পারে, কল্পনাতেও কেউ ভাবতে পারিনি। যাঁরা খেতে বসেছিলেন, তাঁরাও না খেয়ে উঠে পড়েন। জয়াকে রাত থেকে সান্ত্বনা দিচ্ছি। জানি সান্ত্বনা দিয়ে কোনও লাভ নেই। জীবনের একটা স্মরণীয় দিনে আমাদের আঘাত করে গেল বিরাট এক দুঃখের ঘটনা। কোনওদিন ভুলতে পারব না। নিজস্ব চিত্র