নয়াদিল্লি: পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্ব আছে কি? বছরের পর বছর ধরে এই প্রশ্ন ঘিরে তোলপাড় হচ্ছে দুনিয়া। কিন্তু, কারও কাছেই এখনও সঠিক কোনও তথ্য প্রমাণ নেই। প্রথম পর্যায়ে বিজ্ঞানীরা সৌরমণ্ডলে পৃথিবীর নিকটে থাকা বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করেছিলেন। এরপরে সময়ের সঙ্গে সেই পরিধি ক্রমশ বাড়তে থাকে। প্রথমে সৌরমণ্ডলের দূরের গ্রহ, তারপরে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সি। এমনকী তার বাইরেও বহু অনুসন্ধান চলছেই। এরমধ্যেই সবথেকে চাঞ্চল্যকর তথ্য খুঁজে পেলেন একদল বিজ্ঞানী। হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ এবং চিলির আটাকামা মরুভূমিতে থাকা টেলিস্কোপের সাহায্যে পৃথিবীর একেবারে কাছের গ্রহ শুক্রতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনার কথা জানালেন তাঁরা। বিজ্ঞানী দলের দাবি, প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকতে গেলে যে সব উপাদানগুলি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তার মধ্যে অন্যতম ফসফিন গ্যাস। শুক্র গ্রহের আবহাওয়ামণ্ডলীতে সেই গ্যাসেরই অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে বিজ্ঞানী দল শুক্র গ্রহের একেবারে উপরিভাগের আবহাওয়ামণ্ডলী নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছিলেন। তাতেই এই গ্যাসের সন্ধান মিলেছে। গবেষক দলের প্রধান তথা কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ফিজিক্স অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোনমির অধ্যাপক জেন গ্রেভস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুক্র গ্রহের পৃষ্টদেশ থেকে ৬০ কিমি উচ্চতার বায়ুমণ্ডলে যে মেঘ মিলেছে, তাতেই এই গ্যাসের অস্তিত্ব মিলেছে। পৃথিবীতে জৈব উপাদান ভেঙে গিয়ে এই গ্যাস বাইরে বেরিয়ে আসে। তাহলেই প্রশ্ন উঠছে, শুক্র গ্রহেও কী কোনও জৈব উপাদান ভেঙে এই গ্যাস আসছে। যদিও সেই উত্তর এখনও গবেষকদলের কাছে নেই। তাঁদের দাবি, শুক্র গ্রহে যা গরম রয়েছে এবং বায়ুমণ্ডল প্রায় পুরোটাই কার্বন-ডাই-অক্সাইডে পরিপূর্ণ, তাতে সেখানে প্রাণের অস্তিত্ব থাকাটা প্রায় অসম্ভব বলা চলে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও ফসফিন গ্যাসের অস্তিত্ব এই গ্রহে খুঁজে পাওয়া বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার বলেই মনে করছেন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা।
গবেষক দলের দাবি, এই আবিষ্কারের ফলে এটা কোনওভাবেই বলা যাবে না যে শুক্রে প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। তবে ওই গ্রহে যেভাবে প্রতিদিন রসায়নের নয়া নয়া ঘটনা ঘটে চলেছে, তাতে ভবিষ্যতে কী হবে, কেউ জানে না। তাই সম্প্রতি নেচার অ্যাস্ট্রোনমি পত্রিকায় এই গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার পর গোটা পৃথিবীজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। শুক্র গ্রহ নিয়ে এই নয়া তথ্য বিভিন্ন দেশকে নতুন করে গবেষণায় বাধ্য করবে বলে নাসার পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রও (ইসরো) শুক্রতে উপগ্রহ পাঠানোর কাজ করছে। ইতিমধ্যে সেই কাজ যাতে দ্রুত করা হয়, সেই পদক্ষেপও শুরু হয়ে গিয়েছে। শুক্র গ্রহ নিয়ে এই নয়া তথ্য ভারতের গবেষণার কাজকে আরও গতি দেবে বলেই মনে করছেন ইসরোর বিজ্ঞানীরা।