সম্পত্তিজনিত মামলা-মোকদ্দমায় জটিলতা বৃদ্ধি। শরীর-স্বাস্থ্য দুর্বল হতে পারে। বিদ্যাশিক্ষায় বাধা-বিঘ্ন। হঠকারী সিদ্ধান্তের জন্য আফশোস বাড়তে ... বিশদ
‘নস্টালজিয়া’কে ভর করে প্রবাসি বাঙালিরা বরণ করে নেন ‘মা’কে। গা ভাসান কাঁসর, ঢাকের বাদ্যিতে। ‘বঙ্গ জীবনের অঙ্গ’ কলকাতার সঙ্গে এক সুতোয় বেঁধে দেয় আমেরিকার নিউ জার্সি, ক্যালিফোর্নিয়া, অ্যারিজোনা, টেক্সাস, ইলিনয়, নিউ ইয়র্ক, জর্জিয়া বা ফ্লোরিডাকে। বাংলায় শারদ প্রাতে রাত পোহানোর মতোই ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ বেজে ওঠে ‘আলোর বেণু’। চোখের সামনে পট পাল্টাতে থাকে সেখানকার বেঙ্গলি কমিউনিটিগুলি। শিউলি ফুলের গন্ধ ছাড়াই মাতৃ আরাধনায় মেতে ওঠে কলকাতা থেকে হাজার হাজার কিমি দূরের বাঙালি মহল্লা। যতটা সম্ভব নিয়ম মেনেই প্রবাসে দুর্গতিনাশিনীর আরাধনায় শামিল হন তাঁরা।
তবে, আমেরিকার পুজোয় সবসময় পঞ্জিকা মেনে দিনক্ষণ পালন করা সম্ভব হয় না। তাই পুজো হয় সপ্তাহান্তে। ওই দু’তিন দিনেই হয় চারদিনের পুজো। সবশেষে ধুনুচি নাচ ও সিঁদুর খেলা। আমেরিকার সেরকমই একটি পুজো কমিটি ‘সৈকত’। ফ্লোরিডার ট্যাম্পা বে অঞ্চলে অবস্থিত। এবার ১৯ বছরে পা দিচ্ছে তাদের দুর্গোৎসব। জোর কদমে তার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য অনুসূয়া চট্টোপাধ্যায়। ২৮ সেপ্টেম্বর ভোরে মহালয়ার মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে কাউন্টডাউন। পুজো ৪ থেকে ৬ অক্টোবর। সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা, খাওয়া-দাওয়া, সিঁদুর খেলা আর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুসূয়ার কথায়, ‘শনিবার সৈকতের আসর জমাতে থাকবেন কিঞ্জল চট্টোপাধ্যায়। আর রবিবার মাকে বিদায়ের বিষাদ দূর করে মঞ্চ মাতাবেন কবিতা কৃষ্ণমূর্তি।’
মার্কিন মুলুকের আরেকটি বড় পুজো হল, অ্যারিজোনার ফিনিক্সের পুজো। তিনদিন ব্যাপী দুর্গাপুজোর আয়োজন করে বেঙ্গলি কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যারিজোনা (বিসিএএ)। এবার তাদের ৩৫ বছরের পুজো। তিন মাস আগে থেকে মণ্ডপ তৈরির কাজে হাত লাগিয়েছেন এখানকার বাঙালি সদস্যরা বলে জানিয়েছেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলার মূল পুজোর দিনের কাছাকাছি কোন এক উইকএন্ডে পুজোর দিন ঠিক করা হয়। শুক্র থেকে রবিবার চলে পুজো, খাওয়া-দাওয়া, গান-বাজনা, ফ্যাশন শো আর বিভিন্ন প্রতিযোগিতা। বসে শাড়ি-গয়না-বইয়ের দোকান। শুক্রবার সকাল থেকেই আরম্ভ হয়ে যায় রান্নার জোগাড়। কিছু খাবার যদিও রেস্তরাঁ থেকে আসে। তবে, বাঙালিদের প্রিয় কিছু খাবার যেমন খিচুড়ি, লাবড়া, মাছভাজা, বেগুনি, পাঁপড়ভাজা— এসব নিজেরাই রান্না করা হয়। সংগঠনের আরেক সদস্য প্রবীর চৌধুরীর কথায়, বোধন আর ষষ্ঠীর পুজো সেরে আরম্ভ হয় আনন্দমেলা। স্থানীয় রন্ধনশিল্পীদের হাতে রান্না হরেকরকম সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায় আনন্দমেলায়। শনিবার সকাল থেকেই পুজোর পাশাপাশি চলতে থাকবে বাচ্চাদের আঁকার প্রতিযোগিতা। পুজো, অঞ্জলি, দুপুরের খাওয়া শেষে বিকেল গড়াতেই শুরু সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এবছরের প্রধান আকর্ষণ লোপামুদ্রার গান। রবিবার সকাল থেকে আবার আরম্ভ হয় পুজোর ধুম। সন্ধ্যের আগেই ফিনিক্সের বাঙালিরা মা দুর্গার বিসর্জন সেরে বিজয়া, মিষ্টিমুখে মেতে ওঠেন।’
উত্তর আমেরিকার ছোট্ট রাজ্য ডেলাওয়্যার। সেখানকার নেওয়ার্ক শহরের ‘উড়ান’-এর এবার ষষ্ঠ বছরের পুজো। বয়সে নবীন হলেও পুজোর আয়োজনে খামতি নেই। নিয়ম মেনে এখানে ১১, ১২ ও ১৩ অক্টোবর দেবীর বোধন, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পালন করা হবে। কুমোরটুলি থেকে আনা হয়েছে নতুন প্রতিমা। দুর্গার ভোগের পাশাপাশি পুজোকে কেন্দ্র করে থাকছে বিশাল ভূরিভোজের আয়োজন। আর মনোরঞ্জনের জন্য বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। উড়ানের এক কর্তা সুদীপ্ত জানা জানিয়েছেন, ‘মার্কিনি ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় অর্থাৎ ১১ তারিখ দর্শক-ভক্তদের মনোরঞ্জনে থাকবেন বাংলা সঙ্গীত জগতের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র লগ্নজিতা। পরের দিন আসর জমাবেন ‘নাইনটিজ নটআউট’ কুমার সানু। এভাবেই পাঁচদিনের পুজোকে তিনদিনে পালন করা হবে।’
আমেরিকায় আর যে সমস্ত জায়গায় দুর্গাপুজো হয়, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— নিউ জার্সির ‘গার্ডেন স্টেট কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন’। এবার তাদের ২৮ বছর। ৫ ও ৬ অক্টোবর সেখানে ধুম মাচাবেন সঙ্গীতশিল্পী হরিহরণ ও ইমন চক্রবর্তী। পাশাপাশি, ১৯৭৫ সাল থেকে হিউস্টনে দুর্গা আরাধনা করে আসছে হিউস্টন দুর্গাবাড়ি সোসাইটি। বর্তমানে এটাই নর্থ আমেরিকার বৃহত্তম দুর্গা পুজো। এখানে পশ্চিমবঙ্গের মতোই ৩ থেকে ৭ অক্টোবর পুজো। ষষ্ঠী থেকে দশমী। এছাড়া রয়েছে নিউ জার্সির ইন্ডিয়ান কমিউনিটি সেন্টার অব গার্ডেন স্টেটস, কল্লোল, দক্ষিণেশ্বর রামকৃষ্ণ সঙ্ঘ আদ্যাপীঠ, জর্জিয়া প্রদেশের আটলান্টা বেঙ্গলি ফোরাম, পূজারি, ক্যালিফোর্নিয়ার মিলপিটাসের সংস্কৃতি, নর্থ ক্যারোলিনার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন, ইলিনয়ের শিকাগো কালী বাড়ি প্রভৃতি। সব মিলিয়ে ‘দুনিয়া ডট কম’-এ ভর করে আমেরিকার দুর্গোৎসবে শুধুই বং কানেকশন।