কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
নামে অবশ্যই এসে যায় বিজেপির। মোদি জমানার ১০ বছরে এলাহাবাদ, মুঘলসরাই, আওরঙ্গাবাদ, ওসমানাবাদ কত শহরের নাম বদলেছে তাদের সরকার। হায়দরাবাদকে ভাগ্যনগর বানানোর কম চেষ্টা হচ্ছে না। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন কেরলের ছোট্ট নিপাট পরিচ্ছন্ন জনপদটি। নামটা আম বাঙালি জানে কি না সন্দেহ! কিন্তু এটাই এবার লোকসভা ভোটের ‘হেভিওয়েট’ কেন্দ্র ওয়েনাড়ের অন্যতম নির্বাচনী ইস্যু। কারণ, বিজেপির প্রার্থী তথা রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন ঘোষণা করেছেন, ‘জিতে এলেই সুলতান বাথেরির নাম বদলে গণপতি ভাত্তোম করে দেব।’ আর তাতে বাজার এক্কেবারে গরম!
এ জনপদের প্রাচীন নাম হেন্নারাদু বিধি, যার অর্থ একডজন রাস্তা। ত্রয়োদশ শতকে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের অধীনে এখানে মন্দির গড়ে জৈন ধর্মাবলম্বীরা। ২০০ বছর আগে মালাবার দখলের সময় সেটিকে গোলন্দাজ বাহিনীর অস্ত্রঘাঁটি বানান টিপু সুলতান। ইংরেজরা গোলা-গুলি রাখার জায়গাকে ‘ব্যাটারি’ বলত। তা থেকেই অপভ্রংশে ‘সুলতান বাথেরি’। ওই অস্ত্রাগারের কাছেই মহাগণপতি মন্দির। আর সেই সূত্র ধরেই ‘গণপত্তি ভাত্তোম’ নামটির আগমন। কাট্টায়াদ রোডে ছোট্ট দোকানে দাঁড়িয়ে সেই ইতিহাসই শোনাচ্ছিলেন পার্থিবান। ইতিহাসের পড়ুয়ার সাফ কথা, ‘স্রেফ ভোটের জন্য এতদিন বাদে এসব কথা তুলছে বিজেপি।’
কর্ণাটকে টিপু সুলতান বিরোধিতায় সরব হয়েও লাভ হয়নি বিজেপির। সেই রাজনীতি কেরলে আমদানি করেছেন সুরেন্দ্রন। নির্বাচনী প্রচারের ফাঁকে সাফ জানালেন, ‘ওয়েনাড়ের লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে জোর করে ধর্মান্তরিত করেছিলেন টিপু। তাঁকে এত গুরুত্ব কেন দিচ্ছে কংগ্রেস-সিপিএম? সুলতান বাথেরি নাম আমরা বদলাবই!’ প্রয়াত বিজেপি নেতা প্রমোদ মহাজনও এই দাবি তুলেছিলেন। কালপেট্টায় বন্ধ এক শাড়ির শোরুমে তৈরি বিজেপির নির্বাচনী দপ্তরে বসে জানালেন গেরুয়া প্রার্থীর মুখপাত্র সন্দীপ ভেরিয়ার। তাঁর দাবি, উইলিয়াম লোগানের ‘মালাবার ম্যানুয়াল’-এও গণপতি ভাত্তোম নাম আছে। কেরল পর্যটন দপ্তর, এমনকী স্থানীয় পুরসভার ওয়েবসাইটে সেকথা স্বীকৃত। তাহলে নাম বদলে অসুবিধা কোথায়?’ পূর্ব পাকিস্তানে লক্ষ লক্ষ বাঙালির গণহত্যাকারী জামাতের সংগঠন এখন রাহুল গান্ধীর পাশে বলে আক্রমণও শানালেন।
সুলতান বাথেরির প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক তথা দলের জেলা সভাপতি এন ডি আপ্পাচান অবশ্য এসব কথা হেসেই উড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রদেশ দপ্তরে বসে সাফ বললেন, ‘ বিজেপির প্রচারে ভিড় হচ্ছে না। তাই বাজার জমাতে গরম গরম কথা বলছে ওরা।’ সিপিআইয়ের প্রার্থী অ্যানি রাজারও সাফ কথা, ‘কেরলের মাটিতে এরকম ধর্মের রাজনীতি চলে না।’ নাম বদলকারী সাংসদ চান না সুলতান বাথেরি পুরসভার চেয়ারম্যান টি কে রমেশও। শহরের চায়ের দোকান চালানো আবু মাথা নেড়ে জানালেন, ‘নাম বদলের কথা না বললেই হয়তো ভালো করতেন সুরেন্দ্রন। কিছু ভোট তো মিলত!’