আগ্রা ও লখনউ: থানায় চুরিকাণ্ডে এক অভিযুক্তের পুলিসি হেফাজতে মৃত্যু নিয়ে উত্তাল উত্তরপ্রদেশ। অভিযুক্ত অরুণ বাল্মিকীর মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবি করে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের বিরুদ্ধে সরব বিরোধীরা। মঙ্গলবার রাতে অরুণের মৃত্যুর পরেই এই নিয়ে প্রশ্ন তুলে টুইট করেছিলেন কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। টুইটে তিনি লেখেন, ‘আগ্রায় পুলিস হেফাজতে অরুণ বাল্মিকীর মৃত্যু নিন্দনীয়। বাল্মিকী জয়ন্তীতেই উত্তরপ্রদেশ পুলিস তাঁর আদর্শ বিরোধী কাজ করল।’ 
সোশ্যাল মিডিয়াতে বক্তব্য রেখেই থামেননি প্রিয়াঙ্কা। বুধবার সাতসকালেই লখনউ থেকে তিনি অরুণের আগ্রার বাড়ির পথে রওনা হন। কিন্তু লখনউ-আগ্রা এক্সপ্রেসওয়েতে তাঁকে থামায় লখনউ পুলিস। আগ্রার জেলাশাসকের নির্দেশিকা দেখিয়ে তাঁকে বলা হয়, অরুণের বাড়িতে কোনও রাজনীতিক যেতে পারবেন না। এতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। এরপরেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন প্রিয়াঙ্কা। পুলিসকে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘লখনউ থেকে বাইরে যেতে গেলে কি আমাকে কারও অনুমতি নিতে হবে? আমাকে আগ্রা যেতে দিলে কী সমস্যা হবে? সেখানে কি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়েছে?’ জেলাশাসকের সঙ্গে তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার জন্য পুলিসের কাছে আর্জি জানান প্রিয়াঙ্কা। এরপরেই তাঁকে আটক করে লখনউ পুলিস। এদিকে প্রিয়াঙ্কাকে আটকানো হয়েছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন বহু কংগ্রেস সমর্থক। তাঁরা সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। 
পুলিসি হেফাজতে অরুণের মৃত্যু নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন বসপা নেত্রী মায়াবতীও। এই নিয়ে তাঁর টুইট, ‘আগ্রায় পুলিসি হেফাজতে এক সাফাইকর্মীর মৃত্যু খুবই দুঃখের এবং লজ্জার। দোষীদের চরম শাস্তি দিতে হবে।’ প্রশাসন যাতে অরুণের পরিবারকে যথাযথ সহায়তা করে, তারও আর্জি জানিয়েছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। অরুণের মৃত্যুর পরেই তাঁর বাড়িতে হাজির হন বাল্মিকী সমাজের মানুষজন। তাঁরাও অরুণের মৃত্যুর যথাযথ তদন্তের দাবি করেছেন। অরুণের মৃত্যুর প্রতিবাদে বাল্মিকী জয়ন্তী উদ্‌যাপন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাল্মিকী সমাজ। 
গত শনিবার রাতে জগদীশপুর থানার মালখানা থেকে ২৫ লক্ষ টাকা চুরি যায়। বাজেয়াপ্ত করা জিনিসপত্র ওই মালখানায় রাখা হতো। ওই থানাতেই সাফাইকর্মী হিসেবে কাজ করতেন অরুণ। এই চুরির পরেই থানার ছয় পুলিসকর্মীকে সাসপেন্ড করেন আগ্রার এডিজি। সাসপেন্ড কর্মীদের মধ্যে রয়েছেন স্টেশন হাউস অফিসারও। তদন্তে বেশ কয়েকজন সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিস। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অরুণও। আগ্রার এসএসপি মুনিরাজ জি বলেন, ‘মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অরুণকে হেফাজতে নেয় পুলিস। জেরায় চুরির কথা স্বীকার করে অরুণ জানায় তার বাড়িতেই টাকা রাখা হয়েছে।’ এরপর তার বাড়ি থেকে ১৫ লক্ষ টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে পুলিসের দাবি। মঙ্গলবার রাতে অরুণ অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। বুধবার আগ্রার এসএসপি জানিয়েছেন, দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলেই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু পুলিসের এই দাবিতে সন্তুষ্ট নয় বিরোধীরা। অরুণের পরিবারও থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে।  নিহতের বাড়ির পথে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। লখনউতে পিটিআইয়ের তোলা ছবি।