কর্মে ও ব্যবসায় বাধা থাকলেও অগ্রগতি হবে। আর্থিক যোগ শুভ। ব্যয় বাড়বে। সম্পত্তি নিয়ে শরিকি ... বিশদ
তবে সময় বড় যন্ত্রণাময়। উৎসবের আসরে একে তো ভাইরাসের আতঙ্ক ছিলই, তার উপরে মানবঘাতী জঙ্গিগোষ্ঠীগুলির উস্কানি মানুষকে বড়ই পীড়িত করেছে। সেই সঙ্গে সাম্প্রদায়িক ভেদাভেদকে অস্ত্র করে অশান্তি ছড়িয়ে দেওয়ার ঘৃণ্য চক্রান্ত জারি রয়েছে। দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে যা ঘটেছে, তা অত্যন্ত নিন্দার। একশ্রেণির মৌলবাদী দস্যু সেদেশের সংখ্যালঘু মানুষের ধর্মাচরণের উপর কুৎসিতভাবে আক্রমণ করেছে। এই জঘন্য আচরণের বিরুদ্ধে নিন্দায় মুখর হয়ে উঠেছে সারা বিশ্ব। তবে এটা যে বাংলাদেশের অন্তর থেকে সম্মিলিতভাবে উঠে আসা কোনও আক্রমণ নয়, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। এর পিছনে রয়েছে এমন এক শক্তি, যারা বাংলাদেশকে বিপাকে ফেলতে চায়, ভারতের সঙ্গে হাসিনার সদ্ভাব নষ্ট করতে চায়। এর পিছনে ষড়যন্ত্র মূলত দাদা চীনের, পাকিস্তানপন্থী বাংলাদেশিদের এবং রোহিঙ্গাদের। মনে রাখা দরকার এই ধরনের কাজ ভবিষ্যতে আরও হবে। খাল কেটে কুমিরের মতো রোহিঙ্গাদের ঘরে ঢোকানোর আরও মাশুল গুনতে হবে হাসিনা সরকারকে। এই সময়ে হাসিনা সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিয়ে মৌলবাদীদের মোকাবিলা করে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে হবে। উৎসবের সময় সেখানকার বিভিন্ন মণ্ডপে, মন্দিরে যে তাণ্ডব চালানো হয়েছে, তার পিছনে একটা বড় উদ্দেশ্য রয়েছে। সেই উদ্দেশ্য রাজনৈতিক। সেই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির আগুন জ্বলেছে কুমিল্লা, নোয়াখালি, রংপুর, রাজশাহি, সিলেট, ঢাকা, মাদারিপুর, কাশিমবাজার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, চাঁদপুর, কক্সবাজার, বেগমগঞ্জে। মন্দিরে হামলা হয়েছে, মণ্ডপে হামলা হয়েছে, আক্রান্ত হয়েছে ইসকন। যেভাবে সর্বত্র একসঙ্গে আক্রমণ হয়েছে, তাতে বোঝাই যায় এর পিছনে একটা ষড়যন্ত্র রয়েছে। তবে আশার কথা বাংলাদেশেরই শুভবুদ্ধি সম্পন্ন ও শিক্ষিত সংখ্যাগুরুরাই এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। সঙ্ঘবদ্ধভাবে তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেছেন, বাংলাদেশকে মৌলবাদীদের হাতের পুতুল হতে দেবেন না। তাঁরাই পুজোর মধ্যে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়িয়ে দুর্গামণ্ডপ রক্ষা করেছেন। সারারাত দুই সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। আসলে অশুভ শক্তির কোনও জাত হয় না, সম্প্রদায় হয় না, দেশও হয় না। অশুভ শক্তি হল অসুরের জাত। তারা মানব কল্যাণ বিরোধী। সমস্ত ধর্মের মধ্যেই অসুরদের উৎপাত অনুভব করা যায়। সমস্ত শুভ শক্তিকে একত্রিত হয়ে তাকে ধ্বংস করতে হবে।
আজ কিন্তু শেখ হাসিনা সরকারের সামনে একটা বড় চ্যালেঞ্জ উপস্থিত। সেখানে ধর্মের নামে একটা উন্মত্ততা তৈরির প্রয়াস চলছে। অশুভ শক্তি চাইছে, হাসিনার ক্ষমতার ভিতকে ভেঙে গুঁড়িয়ে মৌলবাদী শাসকের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে। আমাদের এখানে যেমন ধর্মান্ধ মানুষ আছেন, আবার ধর্মনিরপেক্ষ মানুষও আছেন, বাংলাদেশেও সেরকম। সেখানকার ধর্মনিরপেক্ষরা হাসিনার পাশে দাঁড়িয়ে রাশ শক্ত করার আবেদন জানিয়েছেন। আবেদন জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, এই দেশটাকে অবিলম্বে ধর্মনিরপেক্ষ করে মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে চরম আঘাত হানতে হবে। পাশাপাশি ভারতের চাপও রয়েছে। হয়তো অচিরেই বাংলাদেশ ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার বিল আনবে। যে আদর্শকে একদিন শেখ মুজিবুর রহমান মেনে চলতেন, আজ সেই আদর্শের পথ ধরেই এগিয়ে যেতে হবে বাংলাদেশকে। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়।’ কিন্তু মৌলবাদীরা সেদিন তাঁকে খুন করে দেশের ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে দূরে সরিয়ে দিয়ে ইসলাম ধর্মকেই রাষ্ট্র পরিচালনার যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছিল। পরে হাসিনা সরকার এসে সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতার বোধকে কিছু কিছু সংযোজিত করেন। তিনি সেখানে সব ধর্মের সমানাধিকারের সুযোগ তৈরি করেছেন। সংবিধানে বলা হয়েছে, ইসলাম ধর্ম রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে স্বীকৃত হলেও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সহ অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও সমান স্বীকৃতি ও মর্যাদা দিতে হবে। সেই অধিকার শুধু কাগজে কলমে স্বীকৃত হলেই চলবে না। বাংলাদেশের প্রশাসনকে তা মেনে চলতেও হবে। চীন, পাকিস্তান চাইছে বাংলাদেশ তাদের হাতে সাজানো তামাক খাক। তাদের বশংবদ হোক। তাই এই লড়াই শুধু সেদেশের সংখ্যালঘুদেরই নয়, এ লড়াই সেদেশের মানুষ এবং প্রশাসনেরও। হয় তারা রুখে দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘুদের মর্যাদা ফিরিয়ে দেবে, না হয় তারা চীনের দাসে পরিণত হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। সেদেশের সচেতন, শিক্ষিত মানুষের কাছে এই ভবিতব্য অত্যন্ত পরিষ্কার। তাই তাঁরা নিজেদের দেশকে বাঁচাতে মৌলবাদীদের নির্মূল করতে চাইছেন দেশ থেকে। সেই বোধ জেগেছে হাসিনারও। তিনিও চাইছেন, রাষ্ট্রকে ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। অশান্তির পর একেবারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুরেই তিনি বলেছেন, ‘যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের এটাই মূলমন্ত্র।’ সুতরাং অনেকেই মনে করছেন, তিনি আবার দেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার মন্ত্রে বাঁধতে সক্ষম হবেন।
বাংলাদেশের এই পরিস্থিতিতে এদেশের বিজেপিকূল একটা ইস্যু পাওয়ার আশায় সজাগ হয়ে উঠেছে। তারা এটাকে হাতিয়ার করে বাংলার মানুষের মনে একটু সহানুভূতির ঢেউ তুলতে চাইছে। রাজ্যের গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি এখানে পর্যুদস্ত হয়েছে। সেই ক্ষততে মলম লাগিয়ে তারা নতুন করে জেগে ওঠার পরিকল্পনা করতে শুরু করেছে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। সচেতন মানুষ সমস্ত পরিস্থিতির দিকেই নজর রেখেছেন।
পুজোয় বাঙালির আনন্দে কালি ছিটিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। আবার অন্যদিকে বাঙালির আত্মহারা পুজোর মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাঙালির স্বার্থবিরোধী একটি পদক্ষেপও চুপিসারে নিয়ে ফেলেছেন। সীমান্ত থেকে ৫০ কিলোমিটার ভিতর পর্যন্ত দখলদারি বাড়ানো হয়েছে বিএসএফের। এটা আগে ছিল ১৫ কিলোমিটার। এর মধ্যেই ছিল তাদের যাবতীয় অপারেশন। বিএসএফ দেশের প্রহরীর কাজ করে, এনিয়ে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু সীমান্ত এলাকায় তাদের কাজকর্ম কিন্তু বিতর্কের ঊর্ধ্বে নয়। সীমান্ত অঞ্চলে যাঁরা থাকেন, সেই সব ভুক্তভোগী বিএসএফের একাংশের অত্যাচারের কথা জানেন। সাধারণ নিরীহ কৃষক সহ মা-বোনেরা তটস্থ হয়ে থাকেন। যেভাবে সেখানে অত্যাচার ও জোরজুলুমের ঘটনা ঘটে, তা সভ্য মানুষের পরিচয় বহন করে না। রাষ্ট্রক্ষমতা যাঁরা ভোগ করেন, তাঁরা যদি সৎ না হন, কাজের প্রতি সততা না থাকে, তবে সবকিছু বিশৃঙ্খল হতে বাধ্য। বাংলায় নির্বাচনে হারের বদলা নিতেই এটা করা হয়েছে বলে অনেকেই মনে করছেন। নানাভাবে বাংলাকে ভাতে মারার চক্রান্ত চলছে তো চলছেই। তিন রাজ্যে এই নিয়ম লাগু হয়েছে। এই তিন রাজ্য হল বাংলা, অসম ও পাঞ্জাব। তার মধ্যে বাংলা এবং পাঞ্জাবে বিজেপির ভাঙাচোরা অবস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রীয় পরিকাঠামোয় একটি রাজ্যের যে সাংবিধানিক অধিকারটুকু ছিল, সেটাকে খর্ব করতে উঠে পড়ে লেগেছেন নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ। সমস্ত সংস্থার স্বাধীনতাকে খর্ব করে তাঁরা সেগুলিকে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী ব্যবহার করে চলেছেন। ইডি, আইটি, সিবিআই, এনআইএ, এনসিবির মতো সংস্থাগুলিকে যেভাবে দাসানুদাসে পরিণত করা হয়েছে, বিএসএফকে এবার সেভাবে ব্যবহার করার পরিকল্পনা নিয়েছেন দুই কর্তা।
অথচ বাঙালির কাছে মুখ্যমন্ত্রী যে স্বস্তিটুকু এনে দিতে চাইছেন, তাতে নানাভাবে বিশৃঙ্খলা আনার চেষ্টা হচ্ছে। করোনাকালে এরাজ্যের মানুষের হাতে নগদ অর্থ পৌঁছে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছেন মমতা। বিভিন্ন খাতে মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিয়ে তাঁদের লড়াইয়ের শক্তি জোগানোর চেষ্টা করছেন। ঘরে ঘরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার গড়ে সেখানে নারীর ক্ষমতায়নের চেষ্টা করছেন। কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, দুয়ারে সরকার, স্বাস্থ্যসাথী, একশো দিনের কাজ সহ বহুমুখী প্রকল্পের মাধ্যমে সবসময় মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করে চলেছেন তিনি। বিপদকালে বা উৎসবের সময়ে তাঁর এই ভূমিকা দেখে অসহায় বিজেপি এখন শুধু ছিদ্রান্বেষীর ভূমিকা পালন করছে এবং কেন্দ্র বারবার চেষ্টা করছে রাজ্যকে বিপাকে ফেলার।
তবে আজ এই শুভক্ষণে মানুষের আকুল প্রার্থনা— সব প্রতিকূলতা কেটে যাক। অনন্ত হোক এই কোজাগরী রাত। আকাশ থেকে গলানো সোনার মতো নেমে আসুক আরও আলো, আরও শান্তি। দীর্ঘায়িত হোক জীবনের কোজাগরী আলো।