নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাংলার মানুষের আশীর্বাদে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পর এই প্রথমবার উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চারদিনের এই সফর শুরু হবে আগামী ২৪ অক্টোবর। এই পর্বে সমতলের শিলিগুড়ির সঙ্গেই পাহাড়ের কার্শিয়াংয়েও যাবেন মমতা। সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু অংশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসন প্রক্রিয়ারও তদারকি করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সফরের শেষদিন, অর্থাৎ ২৮ অক্টোবর বাগডোগরা থেকে দেশের পশ্চিম উপকূলের ছোট্ট রাজ্য গোয়ায় একগুচ্ছ রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে পৌঁছবেন তৃণমূল সুপ্রিমো। কলকাতায় ফিরবেন ১ নভেম্বর। বিজেপি শাসিত গোয়ায় সম্প্রতি রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়িয়েছে জোড়াফুল শিবির। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে এই রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মমতার দলকে ঘিরে প্রবল জনউন্মাদনা তৈরি হয়েছে। জোড়াফুল শিবিরের নতুন স্লোগান—‘গোয়াঞ্চি নভি সকাল’ (গোয়ায় নতুন সকাল) নিয়েও তুমুল আলোড়ন এখন আরব সাগর পাড়ের জনপদে। রাজনৈতিক এই আবর্তের মাঝে গোয়াবাসীর কাছে নিজের তথা দলের অবস্থান স্পষ্ট করতেই যাচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। তৃণমূল সুপ্রিমোর সফর পর্বে গোয়ার রাজনীতিতে পরিচিত বেশ কিছু মুখ সরাসরি তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন, এমন সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে। সব মিলিয়ে এই পর্বে মমতার দুই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।   
নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৪ অক্টোবর বিকেলে শিলিগুড়ি পৌঁছে পুলিস আয়োজিত বিজয়া সম্মিলনীতে যোগ দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। পরদিন উত্তরবঙ্গের প্রশাসনিক সদর উত্তরকন্যায় বৈঠক করবেন। ভার্চুয়াল মাধ্যমের এই প্রশাসনিক বৈঠকে কোচবিহার বাদে দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলা প্রশাসনের কর্তারা অংশ নেবেন। দিনহাটা বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের কারণে কোচবিহার জেলায় নির্বাচনী বিধি বলবৎ রয়েছে। নবান্নের ওই সূত্রটি জানিয়েছে, শিলিগুড়ির কর্মসূচি সেরে মুখ্যমন্ত্রী কার্শিয়াংয়ে যাবেন। সেখানে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করা ছাড়াও একটি ‘বিজনেস মিটিং’য়ে অংশ নেবেন মমতা। পাহাড়ে বিনিয়োগ টানার লক্ষ্যে আয়োজিত ওই বিজনেস মিটিংয়ে বণিক সভা ও শিল্প মহলের অনেকেই যোগ দেবেন। 
এদিকে, তৃণমূল সুপ্রিমোর প্রস্তাবিত গোয়া সফর ঘিরে পশ্চিম ভারতের রাজনৈতিক মহলে নানা জল্পনা শুরু হয়েছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, গোয়া সফরপর্বে বিজেপি বিরোধী বিশিষ্ট কয়েকজন রাজনীতিবিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন সুপ্রিমো। বিভিন্ন দল ছেড়ে জোড়াফুল শিবিরে একগুচ্ছ যোগদানও হবে এই সময়ে। এমনকী গুঞ্জন শুরু হয়েছে গোয়ার সিওলিম গ্রামের বাসিন্দা লুইস রেমো দ্য মারিয়া বার্নাদো ফার্নান্ডেজের নামটি ঘিরেও। ভারত যাকে চেনে বিখ্যাত গায়ক রেমো ফার্নান্ডেজ হিসেবেই। প্যায়ার তো হোনা হি থা... গানটি তৃণমূলের জন্য রেমো গাইবেন কি না, তা জানা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। জোড়াফুল শিবির পশ্চিম ভারতের এই রাজ্যের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মোট ৪০টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল। গোয়ার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কংগ্রেস বিধায়ক লুইজিনহো ফেলেইরো তৃণমূলে যোগদানের পর থেকে আরব সাগরের হাওয়া আরও জোরে বইছে জোড়াফুল শিবিরের তরীর পালে। নির্দল বিধায়ক প্রসাদ গাঁওকর সেই তরীতে শামিল। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে  দলের এমপি ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুখেন্দুশেখর রায়, প্রসূণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য মনোজ তেওয়ারি গোয়ায় গিয়ে জোড়াফুল চাষে মনোনিবেশ করেছেন। শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্র নয়, বিশিষ্ট ফুটবলার ডেনজিল ফ্রাঙ্কো, বক্সার লেনি দা গামার মতো গোয়ার আরও অনেক পরিচিত মুখ যোগ দিয়েছেন তৃণমূলে। 
অন্য দল থেকে তৃণমূলে আসাই শুধু নয়, জোড়াফুল শিবিরের সঙ্গে বিজেপি বিরোধী সুর বাঁধার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে দুই আঞ্চলিক দল গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টি এবং মহারাষ্ট্রবাদী গোমন্তক পার্টিও। ২০২২-এর বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার পক্ষে সওয়াল করছেন এই দুই দলের নেতারা। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মমতার সফরপর্বে সেই বিষয়টিও চূড়ান্ত হতে পারে। - ফাইল চিত্র