উচ্চতর বিদ্যায় সফলতা আসবে। সরকারি ক্ষেত্রে কর্মলাভের সম্ভাবনা। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য আসবে। প্রেম-প্রণয়ে মানসিক অস্থিরতা ... বিশদ
রাত তখন একটা। সেনা সূত্রে খবর, কুপওয়ারার মাচিল সেক্টরে টহল দিচ্ছিল বিএসএফ। তখনই নিয়ন্ত্রণ রেখায় ‘অ্যান্টি ইনফিল্টারেশন অবস্ট্রাকল সিস্টেম’-এর কাছে সন্দেহভাজন কয়েকজন যুবকের গতিবিধি তাদের নজরে আসে। তারা ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা করছিল। জওয়ানরা ‘পজিশন’ নিতেই অনুপ্রবেশকারী জঙ্গিরা গুলি চালাতে শুরু করে। তাদের আড়াল করতে গোলাগুলি ছোঁড়ে পাকিস্তানি সেনাও। পাল্টা জবাব দেয় বিএসএফ। ভোররাত পর্যন্ত চলে গুলির লড়াই। দলের একজন মারা পড়তেই পিছু হটে জঙ্গিরা। তাদের গুলিতে জখম হন বিএসএফের ১৬৯ ব্যাটালিয়নের কনস্টেবল সুদীপ। জানা গিয়েছে, তিনি এই লড়াইয়ের প্রথম সারিতে ছিলেন। গুরুতর জখম হয়েও জঙ্গিদের ধাওয়া করে যান এই বাঙালি জওয়ান। কিছু দূর গিয়ে লুটিয়ে পড়েন। এবং সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। রবিবার ভোর চারটে নাগাদ প্রথম দফার লড়াই থামে। ততক্ষণে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে দেড় কিমি দূরে একটি গোপন ঘাঁটিতে আশ্রয় নেয় জঙ্গিরা।
দিনের আলো ফুটতে না ফুটতে মাচিল সেক্টরে তল্লাশি অভিযানে নামে ভারতীয় সেনা। তখনই দ্বিতীয় দফার সংঘর্ষে জড়ায় জঙ্গিরা। ঘড়িতে তখন বেলা ১০টা ২০ মিনিট। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি চালাতে শুরু করে তারা। এদিক থেকেও বুলেটে উত্তর দেন ভারতীয় জওয়ানরা। গুলির লড়াইয়ে মৃত্যু হয় দুই জঙ্গির। তারপর আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে বাকি অনুপ্রবেশকারীরা। এলোপাথাড়ি গুলিতে ক্যাপ্টেন আশুতোষ কুমার (২৪) সহ চার জওয়ান শহিদ হন। জখম হন আরও দুই জওয়ান। তাঁদের অবস্থা গুরুতর বলে জানা গিয়েছে।
প্রতিরক্ষা মুখপাত্র কর্নেল রাজেশ কালিয়া এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, জঙ্গিরা প্রথমে নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল। তাদের সেই ছক বানচাল করে দেয় বিএসএফ। প্রাণ হারান এক জওয়ান। খতমও করা হয় এক জঙ্গিকে। ভোর চারটে নাগাদ তখনকার মতো গোলাগুলি থেমে যায়। কিন্তু সকালে তল্লাশি শুরু করলে ফের দু’পক্ষের গুলির লড়াই বাধে। তখন এক সেনা অফিসার এবং দুই সেনা জওয়ানের মৃত্যু হয়। বাহিনীর গুলিতে নিকেশ করা হয় দুই জঙ্গিকে। পরে তল্লাশি চালিয়ে ঘটনাস্থল থেকে দু’টি একে সিরিজের রাইফেল ও ৬০ রাউন্ড গুলি, একটি পিস্তল, রেডিও সেট, ৫০ হাজার টাকা মিলেছে।
এদিন যেভাবে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ রুখে দেওয়া হয়েছে, তা সাম্প্রতিক সময়ে সেনার অন্যতম বড় সাফল্য। এমনটাই মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, শীতের মরশুম শুরু হলেই ভারতে ঢোকার জন্য মরিয়া পদক্ষেপ নেয় পাক জঙ্গিরা। এই সময় রাতের সীমান্ত কুয়াশায় ঢেকে যায়। সেই সুযোগটাকেই কৌশলে কাজে লাগায় জঙ্গিরা। তাদের সহযোগিতা করতে উঠেপড়ে লাগে পাক সেনাবাহিনী। আচমকাই তারা সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করে সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে নজরদারি ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শনিবার রাতেও ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন অনুকূল আবহাওয়াকে কাজে লাগিয়ে অনুপ্রবেশের ছক কষেছিল জঙ্গিরা। কিন্তু বিএসএফের তৎপরতায় সেই ছক বানচাল হয়ে যায়। এলাকাজুড়ে তল্লাশি অভিযান অব্যাহত রেখেছে সেনাবাহিনী। মনে করা হচ্ছে, আরও কয়েকজন জঙ্গি মাচিল সেক্টরের বিভিন্ন এলাকায় লুকিয়ে থাকতে পারে। আধুনিক প্রযুক্তিতে জঙ্গিদের গতিবিধি ট্র্যাক করার চেষ্টা চলছে।