কর্মপ্রার্থীদের কোনও সুখবর আসতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতির সূচনা। গুপ্ত শত্রু থেকে সাবধান। নতুন কোনও প্রকল্পের ... বিশদ
কোভিড পরিস্থিতিতে রাজ্যে উৎসব আয়োজন ঠিক হচ্ছে না বলে জনস্বার্থে মামলা করেছিলেন অজয়কুমার দে নামে এক ব্যক্তি। এদিন সেই মামলার অন্তর্বতী রায়ে বিশেষজ্ঞ মহলের আশঙ্কাকেই কার্যত স্বীকৃতি দিল রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, স্রেফ উৎসব বলে সব কিছুতেই ছাড় দেওয়া অনুচিত। সব পুজো মণ্ডপেই ঝোলাতে হবে ‘নো এন্ট্রি জোন’ লেখা বোর্ড। শিক্ষার্থীরা সরকারি বিধি-নিষেধ মেনে প্রায় ছ’মাস স্কুলে যাচ্ছে না। তা হলে পুজোয় কেন ছাড়? রাজ্যের সতর্কতামূলক সদিচ্ছা থাকলেও, তার নীল-নকশা নেই।
এখানে থেমে না থেকেই নির্দেশ কার্যকর করতে একগুচ্ছ গাইডলাইনও বেঁধে দিয়েছে আদালত। এক, বড় পুজোর ক্ষেত্রে ১০ মিটার ও ছোট পুজোর ক্ষেত্রে ৫ মিটার দূরত্ব পর্যন্ত চত্বরকে ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ বলে চিহ্নিত করে হবে। দিতে হবে ব্যারিকেডও। দুই, ঘোষিত ওই এলাকার মধ্যে সাধারণের প্রবেশ একেবারেই নয়। কেবল পুজো উদ্যোক্তারাই ঢুকতে পারবেন। বড় প্যান্ডেলে সর্বোচ্চ ২৫ জন এবং ছোট মণ্ডপে সর্বোচ্চ ১৫ জন নির্দিষ্ট। তিন, কারা প্যান্ডেলে থাকবেন, তার তালিকা আগাম টাঙিয়ে দিতে হবে। প্রতিদিন ইচ্ছে মতো সেই তালিকা বদল করা যাবে না। চার, রাজ্যের যে সব পুজো কমিটি ৫০ হাজার টাকা করে অনুদান পেয়েছে, তাদের সকলকেই এই নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। পাঁচ, এই নির্দেশ কতটা মানা হল, তা লক্ষ্মীপুজোর চার দিন পর রাজ্যের ডিজিপি ও কলকাতা পুলিস কমিশনারের কাছে রিপোর্ট আকারে দাখিল করতে হবে। এরই পাশাপাশি, এবারের মতো সাধারণ মানুষকে পুজো-উৎসব ভার্চুয়াল মাধ্যমে উপভোগ করার জন্যও পরামর্শ দিয়েছে আদালত।
বড় পুজো কাকে বলা হবে, সেই বিষয়টিও এদিন স্পষ্ট করে দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। বলা হয়েছে, কলকাতা পুলিসের ম্যানুয়ালে যে সব পুজোর নাম রয়েছে, সেগুলিকেই বড় পুজোর প্যান্ডেল হিসেবে ধরতে হবে। এই নির্দেশের জেরে পুলিসের কাজের পরিধি আরও বাড়ল বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে আদালত। বেঞ্চ বলেছে, রাজ্যের গাইডলাইন সীমিত সংখ্যক পুলিসের পক্ষে কার্যকর করা কঠিন। একসঙ্গে পাঁচ-ছয় লক্ষ মানুষ ঠাকুর দেখতে পথে বেরিয়ে পড়লে, পুলিসের পক্ষে তা নিয়ন্ত্রণ করা দুরূহ।
আদালতের এমন অভিমত শুধু পুজো প্রসঙ্গেই নয়। শুনানি পর্বে উদ্বিগ্ন বেঞ্চের আরও পর্যবেক্ষণ, পুজোর বাজার করতে বহু মানুষ রাস্তায় বেরচ্ছেন। তা রীতিমতো আশঙ্কার। লকডাউন পর্বে রাজ্য দারুণভাবে পরিস্থিতি সামলেছে। কিন্তু এই উৎসব মরশুমে পুলিস তথা প্রশাসন কীভাবে পরিস্থিতি সামলাবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুজোর জন্য রাজ্যের ঘোষিত গাইডলাইন তৃতীয়া থেকেই কার্যকর হবে। এজন্য বিশেষ প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে। কিন্তু, বাস্তবে তা কেমন হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেছে বেঞ্চ। সেই সঙ্গে বলা হয়েছে, এমনিতেই গাড়ি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ, রোজকার নানা মামলার তদন্ত সামলাতে হয় পুলিসকে। তার উপর এমন বিপুল জনসমাবেশ নিয়ন্ত্রণ তাদের পক্ষে কঠিন। শুধু তাই নয়, চরম সঙ্কটকালে কীভাবে পুজোর অনুমতি দেওয়া হল, তা নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করে বেঞ্চ। এদিন সকালে মামলার প্রথম দফার শুনানি শেষে বেঞ্চ সম্ভাব্য নির্দেশাবলি জানিয়ে বলেছিল, রাজ্য আরও ভালো কিছু প্রস্তাব দিতে পারে। কিন্তু দ্বিতীয় দফার শুনানিতেও তেমন কোনও প্রস্তাব জমা না পড়ায় হতাশা ব্যক্ত করে বেঞ্চ।