শারীরিক দিক থেকে খুব ভালো যাবে না। মনে একটা অজানা আশঙ্কার ভাব থাকবে। আর্থিক দিকটি ... বিশদ
কালের নিয়মে তিলোত্তমা হারিয়েছে বহু প্রাচীন চায়ের আড্ডা-কেন্দ্র। হাওড়া, শিয়ালদহ স্টেশন সহ শহরের বিভিন্ন এলাকার ‘টি-জংশন’ আর সেভাবে চোখে পড়ে না। দেখা যায় না চায়ের সেই গুণ-মাহাত্ম্যের প্রচার বিজ্ঞাপন— ‘ইহাতে নাহিক মাদকতা দোষ, কিন্তু পানে করে চিত্ত পরিতোষ...।’
আবার কোথাও কোথাও জ্বলজ্বল করত—‘ইহা খাইতে বেশ সুস্বাদু...। ইহা নিম্নলিখিত রোগের আক্রমণ হইতে রক্ষা করে...ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড, কলেরা, আমাশয়, প্লেগ ও অবসাদ।’ আর সেই চায়ের প্রস্তুত প্রণালীর মূল পাত্র যদি হয় তামার, তা হলে তো আর কথাই নেই! পেট-ফাঁপা, চোঁয়া ঢেকুর তোলা বাঙালির কাছে সেই চা যেন ‘বিশল্যকরণী’।
চায়ের সঙ্গে বাঙালির ভালোবাসা মূলত ব্রিটিশদের সৌজন্যে। এর পিছনে বাণিজ্যিক কারণও ছিল। চা’কে ঘিরে লাভ-লোকসানের অঙ্ক কষত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইতিহাস বলে, বাঙালিকে চা পানের নেশা ধরাতে বহু কৌশলও গ্রহণ করেছিল ব্রিটিশরা। ভারতে রেল পরিষেবা চালু হওয়ার পর বিভিন্ন স্টেশনে তাদের মদতেই তৈরি হয়েছিল টি-জংশন। শহরের বিভিন্ন স্থানেও গজিয়ে উঠতে থাকে চায়ের দোকান। উনিশ শতকের শেষ দিকে কলকাতা শহরে হাতে গোনা কয়েকজন দোকানদার চা-প্রস্তুত প্রণালীতে একটু ব্যতিক্রমী চিন্তাভাবনা শুরু করেন। প্রথাগত পদ্ধতির বাইরে বেরিয়ে চায়ের জল ফোটাতে ব্যবহার করেন তামার পাত্র। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তামার গুণাগুনের কথা মাথায় রেখে এই বৈচিত্র এনেছিলেন তাঁরা। এখন আর সেই সব দোকান শহরে প্রায় নেই বললেই চলে। কিন্তু ইতিহাসের পাতায় নাম তুলতে আজও লড়াই চালাচ্ছে বেন্টিঙ্ক স্ট্রিটের তামার ট্যাঙ্কির চায়ের দোকান। লক্ষ্য শতবর্ষকে ছোঁয়া। বর্তমান মালিক বিহারের বাসিন্দা মহেন্দ্র সিং ধোনি বলছিলেন, ‘এই যে এত বড় তামার ড্রাম দেখছেন, এটা আমার বাবা কিনেছিলেন। আজ প্রায় ৯৮ বছর ধরে সেটি চায়ের জল ফুটিয়ে আসছে।’
বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট ধরে কিছুটা এগলেই ডান দিকে নজরে পড়বে নামজাদা একটি রেস্তরাঁ। তার ঠিক উল্টো দিকে চাঁদনি চক মেট্রোর সঙ্গে সংযোগকারী রাস্তার ঠিক মুখে ধোনির চায়ের দোকান। বসার কোনও জায়গা নেই। চায়ের আড্ডা হয় দাঁড়িয়ে। পথচলতি মানুষ, অফিস-কাছারির লোকেরা তো বটেই, ধোনির নিত্য খদ্দেরদের তালিকায় স্থানীয় আবাসিকরাও রয়েছেন। মঙ্গলবার দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হচ্ছিল ষাটোর্ধ্ব শম্ভুনাথ দাসের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘আমি যখন আঠারোর যুবক, তখন প্যারাডাইস সিনেমা হলে ছবি দেখতে এসেছিলাম। সেই থেকে এই চা দোকানের সঙ্গে আমার সখ্য। এখনও কোনও প্রয়োজনে ধর্মতলা চত্বরে এলে এখানকার চা’য়ের জন্য মনটা আনচান করে। শত ব্যস্ততা থাকলেও এখানে ঢুঁ মারবই।’ রিপন স্ট্রিটের বাসিন্দা আতেসম আলমের কথায়, ‘এখানকার চায়ের উপকারিতার টানেই সকাল-সন্ধ্যা চলে আসি।’
শম্ভুনাথ কিংবা আতেসমরা বৃদ্ধ ধোনিকে চেনেন। আর ধোনির বাবাকে চিনতেন কলকাতার তাবড় সাহেবরাও। ইতিহাসের চাকা তো এভাবেই গড়ায়!