কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
প্রায় তিন বছর ধরে কিশলয় স্কুল রোডের ওই পাঁচতলা বহুতলের দোতলায় ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিলেন ওই অবিবাহিত দুই ভাই। ফ্ল্যাটের মালিক জীবন দাসের ছেলে জয়ন্ত দাস বললেন, তিনমাস আগেই ওই দুই ভাইয়ের সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছিল। ওঁদের আমরা বলেছিলাম, ফ্ল্যাট ছেড়ে দিতে। ওঁরা তিনমাস সময় চেয়েছিলেন, ঘর খোঁজার জন্য। সেইমতো আমরা সময়ও দিই। মঙ্গলবার সেই তিনমাস শেষ হয়েছে। কিন্তু সোমবার রাত থেকেই দু’জনের কোনও দেখা মেলেনি। মঙ্গলবার আমার বাবা তিনতলা থেকে নেমে গিয়ে ডাকাডাকি করলেও তাঁরা সাড়া দেননি। আমার বাবার ডায়ালিসিস চলছে। তাই বেশি উত্তেজনা নিতে পারেন না। এদিন সকালেও বাবা আর আমি ডাকাডাকি করেছি। সাড়াশব্দ না পাওয়ায় আমরা পড়শিদের খবর দিই। খবর দেওয়া হয় থানাতেও। এরপর এলাকার লোকজন দরজা ভেঙে দেখেন, পার্থবাবু গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন, গৌতমবাবু বিছানায় পড়ে রয়েছেন। দু’জনেরই হাত ও পায়ের শিরা কাটা।
স্থানীয়রা জানালেন, দু’জনের ব্যবহারই অত্যন্ত ভালো ছিল। কিন্তু গত এক বছর ধরে কারও সঙ্গে তাঁরা তেমন কথা বলতেন না। নিজেদের মতো থাকতেন। জয়ন্ত দাসের কথায়, আমি শুনেছিলাম, দুই ভাই কোথাও ভালো চাকরি করতেন। পরে অবসর গ্রহণের পর এখানে ভাড়া নিয়ে চলে আসেন। ব্যাঙ্কে গচ্ছিত টাকা দিয়েই তাঁরা জীবনযাপন করতেন। তবে ফ্ল্যাট থেকে চলে যাবেন বলে তাঁরা তাঁদের পরিচারিকা এবং ফিজিওথেরাপিস্টদের আসতে নিষেধ করে দেন। এমনকী, স্নান করা বন্ধ করে দিয়ে তাঁরা দু’জনেই বড় চুল ও দাঁড়ি রাখছিলেন। একথা তিনি ওই দুই ভাইয়ের পরিচারিকাদের কাছ থেকে জানতে পেরেছিলেন।
এই ঘটনায় উঠে আসছে একাধিক প্রশ্ন। এটা কি আত্মহত্যার ঘটনা? যদি তাঁরা আত্মহত্যা করে থাকেন, তা হলে কেন করলেন? নাকি এর নেপথ্যে অন্য কোনও কারণ রয়েছে? দু’জনেরই হাত ও পায়ের শিরা কাটা ছিল। পার্থবাবুর দেহ ঝুলছিল। তা হলে কি তাঁর শিরা কেটেছিলেন গৌতম? তারপর নিজে আত্মহত্যা করেছেন? নাকি অন্য কোনও রহস্য রয়েছে? সবটাই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিস।
বিশিষ্ট মনস্তাত্ত্বিক ডাঃ ও পি সিং বলেন, শুনতে খারাপ লাগলেও গোটা কলকাতাই এখন ‘মিনি’ বৃদ্ধাশ্রমের চেহারা নিয়েছে। কিশোর-কিশোরী এবং বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের আত্মহত্যা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ক্ষেত্রে আত্মহত্যার চেষ্টা এবং আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধির অনেকগুলি কারণ রয়েছে। এক, নিঃসঙ্গতা। দুই, সুগার-প্রেসার-স্ট্রোক এবং বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত অসুখ। তিন, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ‘ডি জেনারেশন’-এর কারণে অবসাদ বেড়ে যাওয়া। চার, প্রিয়জনের মৃত্যু।