কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
শেওড়াফুলির রাজবাটির গরিমা স্বমহিমায় উজ্জ্বল। স্বপ্নাদেশে অসুরনাশিনী দেবীর মূর্তি পেয়ে ১১৪১ বঙ্গাব্দের ১৫ জ্যৈষ্ঠ দেবী সর্বমঙ্গলা নামে এই দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। রাজা মনোহর রায় প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়ির সেটিই ছিল প্রথম পুজো। এখানে দেবী অষ্টধাতুতে গড়া। দেবমূর্তিতে সিংহবাহিনী কেবল অসুরনিধনরত। বাকি দেবদেবী কেউ নেই। একদা লাটসাহেব ওয়ারেন হেস্টিংসের বিচার প্রক্রিয়ায় শেওড়াফুলির রাজার শংসাপত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। সেই বনেদিয়ানার ঐতিহ্য এখনও বহমান পুজোতে। শুধু কালের গতিকে রাজকীয় বৈভবটাই যা বিলীন হয়েছে। রাজ পরিবারের উত্তরপুরুষ পরমকল্যাণ রায় বলেন, সনাতনী যাবতীয় রীতির সঙ্গে এখানে দেবী সর্বমঙ্গলা রূপে পূজিতা। ক্ষত্রিয় রাজার পুজোয় এখনও বলিদান হয়।
এমনই এক বনেদি পুজো কলাছড়া মিত্র বাড়ির পুজো। বারো ভুঁইঞার অন্যতম শক্তিশালী নরপতি ঈশা খাঁয়ের সময় এই পুজো শুরু হয়েছিল বলে বংশপরম্পরায় জনশ্রুতি চলে আসছে। সনাতনী দেবীর বাহন সিংহ এখানে সাদা রংয়ের হয়। যা সাধারণত দুর্গাপ্রতিমার ক্ষেত্রে প্রায় বেনজির। ঐতিহাসিক এই পুজোর জৌলুস মলিন হলেও পুরনো নাটমন্দির, বংশগরিমা আর সনাতনী ধারায় উজ্জ্বল। মিত্র বংশের উত্তরপুরুষ অলোক মিত্র বলেন, এই গ্রামের নামকরণই আমাদের পূর্বপুরুষের নামে। ঐতিহাসিক কৌশিকী নদীর পাড়ের এই পুজো এতটাই প্রাচীন যে লেখাজোখা বিশেষ মেলে না। কোন্নগরের ঘোষাল বাড়ির জনশ্রুতি মোতাবেক তাঁদের পুজো প্রায় ৫৬৫ বছরের প্রাচীন। পূর্বজ আশুতোষ ঘোষাল স্বপ্নে দেবীকে পেয়ে নিজের জমিদারিতে পুজো শুরু করেন। দেবী এখানে নরসিংহ মূর্তিতে পূজিতা হন। আকবরের পাঞ্জায় জমিদারি পাওয়া ঘোষালদের পুজো সনাতনী রীতিতে আজও ঠাসবুনোট।
জগদ্ধাত্রী পুজোয় বিশ্বজনীনত্ব অর্জন করা চন্দননগর গত প্রায় দশ বছর ধরে থিমের দুর্গাপুজোর আয়োজন শুরু করেছে। এখানকারই বাগানবাটি সর্বজনীনের এবারের থিম জীবন দিয়ে জীবন গড়া। মাটি, গাছের নানান অংশ ব্যবহার করে অনিন্দ্যসুন্দর মণ্ডপ গড়ে উঠছে। ক্লাবকর্তারা আধুনিক নগরজীবনের বৃক্ষচ্ছেদনের সমস্যাকে দেবী পুজোর থিম করেছেন। ক্লাবকর্তা বাসুদেব কোলে বলেন, গাছ নষ্টের ভয়াবহতা থেকে দেবীর আশ্বাসে মানুষের মুক্তিকেই আমরা থিম করেছি। থিম নেই কিন্তু বারোয়ারি পুজো প্রায় গোটা গ্রামের পুজো হওয়ার নিদর্শন মেলে পাণ্ডুয়ার বেলুনে। সেখানকার হ্যাপাকালী বারোয়ারি দুর্গাপুজো বেলুড় মঠের আদর্শ অনুসারী এবং সনাতন রেওয়াজ নির্ভর। পুজো উদ্যোক্তা কেশব কর্মকার বলেন, সুপ্রাচীন কালীমন্দিরকে সাক্ষ্য রেখে এই পুজো যাবতীয় সনাতনী সংস্কৃতি মেনে করা হয়। গোটা গ্রামের মানুষ এই পুজোর অংশীদার। ফলত, বনেদিয়ানা থেকে আধুনিকতা, বারোয়ারির নানান রংয়ের রংমশালে পুজোয় গোটা জেলা আলোকীর্ণ হয়ে উঠেছে।