ভারত ১২২/৫

ওয়েলিংটন, ২১ ফেব্রুয়ারি: বেসিন রিজার্ভের সবুজ পিচ নিয়ে আতঙ্ক তো ছিলই। তার উপর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সঙ্গী দমকা হাওয়া। আশঙ্কা শেষ পর্যন্ত সত্যিই হল। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারতের টপ অর্ডার ব্যাটিং তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। একটা সময় ১০১ রানে ৫টি উইকেট হারিয়ে রীতিমতো ধুঁকছিল বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল। অবশেষে অজিঙ্কা রাহানের চোয়াল চাপা লড়াই কিছুটা স্বস্তি এনেছে ভারতীয় শিবিরে। বৃষ্টির কারণে দিনের খেলায় যখন শেষ হয়, তখন ‘টিম ইন্ডিয়া’র স্কোর ৫ উইকেটে ১২২। রাহানে ৩৮ ও ঋষভ পন্থ ১০ রানে ক্রিজে আছেন।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এই প্রথম কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে দেখা গেল কোহলিদের। এর আগে সাতটি ম্যাচেই তাঁরা সহজে জিতেছিলেন। ক্যারিবিয়ান সফরে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম দু’টি টেস্টে হারাতে খুব বেশি কসরত করতে হয়নি রবি শাস্ত্রীর ছেলেদের। ঘরের মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকা ও বাংলাদেশের দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে পয়েন্ট অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছিল ‘টিম ইন্ডিয়া’। ৭ ম্যাচে ৩৬০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শীর্ষে রয়েছেন কোহলিরা। কিন্তু নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ কতটা কঠিন হবে ভারতের কাছে, তার ট্রেলার দেখা গেল ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিনে।
রোহিত শর্মার চোট ভারতীয় ব্যাটিংকে অনেকটাই দুর্বল করেছে। একদিনের সিরিজে পৃথ্বী সাউ-মায়াঙ্ক আগরওয়ালের ওপেনিং জুটি ব্যর্থ হয়েছিল। তা সত্ত্বেও প্রথম টেস্টে তাঁদের উপরই ভরসা রাখে টিম ম্যানেজমেন্ট। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক রণকৌশল নিয়ে ভুল করেন পৃথ্বী। ১৮ বলে ১৬ রান করে তিনি সাউদির বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন। তবে মায়াঙ্ক আগরওয়াল কঠিন পিচে টেকনিকের জোরে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কিউয়ি পেসারদের সামনে। সেই সময় চেতেশ্বর পূজারা যদি উইকেটে থিতু হলে এভাবে বিপাকে পড়তে হত না ভারতকে। কিন্তু পূজারাকে দিনের সেরা বলে আউট করেন কাইল জেমিসন। তাঁর বিষাক্ত স্যুইং পূজারার (১১) ব্যাট স্পর্শ করে উইকেটরক্ষকের হাতে জমা পড়ে। ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতা জেমিসনের। যা সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়েছেন তিনি। বলের গতি খুব বেশি নয়, কিন্তু নিয়ন্ত্রিত স্যুইংয়েই তিনি বারবার বোকা বানিয়েছেন ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। এদিন তাঁর সেরা শিকার বিরাট কোহলি। গত ১৯টি ইনিংসে ভিকে’র ব্যাটে শতরানের দেখা নেই। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজে তিনি করেছিলেন মাত্র ৭৫ রান। প্রবল চাপে থেকেই এদিন ব্যাট করতে নেমেছিলেন বিরাট। কিন্তু জেমিসনের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারি দূর থেকে খেলতে গিয়ে প্রথম স্লিপে রস টেলরের হাতে ক্যাচ জমা দেন কোহলি (২)।
লাঞ্চে ভারতের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৭৯। মায়াঙ্ক আগরওয়াল এক প্রান্ত ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাকি ব্যাটসম্যানদের থেকে সেভাবে সাহায্য পাননি ভারতীয় ওপেনারটি। ফলে তাঁর ফোকাস নড়ে যায়। ট্রেন্ট বোল্টের লেগ স্টাম্পের বাইরের শর্ট বলে আচমকাই পুল করতে গিয়ে লং লেগে জেমিসনের হাতে ধরা পড়েন মায়াঙ্ক (৩৮)।
অনেকেই ভেবেছিলেন, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মনে ত্রাসের সঞ্চার ঘটাবেন ট্রেন্ট বোল্ট কিংবা টিম সাউদি। কিন্তু অভিষেক টেস্টের প্রথম দিনে ১৪ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৮ রান দিয়ে ৩টি উইকেট তুলে নিয়ে প্রচারের পুরো আলোটাই শুষে নিয়েছেন কাইল জেমিসন। দিনের শেষ উইকেটও তাঁর ঝুলিতে। হনুমা বিহারিকে তিনি সাত রানে সাজঘরে ফেরান।
অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে দুর্গরক্ষার লড়াই চালাচ্ছেন রাহানে। ১২২টি বল খেলে ৪টি বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৮ রানে ক্রিজে আছেন তিনি। সঙ্গতে ঋষভ পন্থ (১০)। চা-পানের বিরতিতে প্রবল বৃষ্টি নামায় খেলা আর গড়ায়নি। পুরো একটা সেশন ভেস্তে যায়। খানিক স্বস্তি পায় ভারতীয় দলও।
এই ম্যাচে ঋদ্ধিমান সাহার জায়গায় খেলানো হয়েছে ঋষভকে। ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক। তবে ঋষভ ভালোই জানেন, এই ম্যাচে বড় ইনিংস খেলতে না পারলে আগামী দিনে জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখা তাঁর পক্ষে কঠিন হবে।
স্কোরবোর্ড-প্রথম ইনিংসে ভারত: পৃথ্বী বো সাউদি ১৬, মায়াঙ্ক ক জেমিসন বো বোল্ট ৩৪, পূজারা ক ওয়াটলিং বো জেমিসন ১১, কোহলি ক টেলর বো জেমিসন ২, রাহানে ব্যাটিং ৩৮, হনুমা ক ওয়াটলিং বো জেমিসন ৭, ঋষভ ব্যাটিং ১০, অতিরিক্ত ৪, মোট ৫৫ ওভারে ৫ উইকেটে ১২২। উইকেট পতন: ১৬-১, ৩৫-২, ৪০-৩, ৮৮-৪, ১০১-৫। বোলিং: সাউদি ১৪-৪-২৭-১, বোল্ট ১৪-২-৪৪-১, গ্র্যান্ডহোম ১১-৫-১২-০, জেমিসন ১৪-২-৩৮-৩, প্যাটেল ২-২-০-০।