নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: বাজারে বিক্রেতার তরফে এগিয়ে দেওয়া ঝুড়িটা হাতে নিয়ে সবে গোলচে নধর আলুগুলো বাছতে শুরু করেছিলেন ক্রেতা। পাশ থেকে কেউ একজন আলু দর করতেই, বিক্রেতা তাচ্ছিল্যের সঙ্গে উত্তর দিলেন, জ্যোতি ১২ টাকা। যিনি মনোযোগ দিয়ে আলু বেছে ঝুড়িতে তুলছিলেন, চমকে উঠে বললেন, ১২ টাকা? কবে হল? এই তো ১০ ছিল। দোকানদারের উত্তর, কাকু, কত দিন বাজার আসেননি? দিন কয়েক ধরে তো ১২ টাকাই চলছে!
এখন সর্বত্র ভোটের হাওয়া। কোন দল ক’টা আসন পাবে, তার চর্চাতেই মশগুল চারদিক। অফিসে, বাসে, ট্রেনে, বাজারে কান পাতলে শোনা যাচ্ছে ভোট সংক্রান্ত নানা মুখোরোচক গল্প বা তাত্ত্বিক আলোচনা। অনেকেই আবার বলছেন, এইসব তর্ক-বিতর্ক নাকি নিজের মনকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখারই ছল মাত্র। কারণ বাজার-দোকান যেভাবে আয়ত্তের বাইরে চলে গিয়েছে, তাতে কিছু কেনার কথা মনে হলেই মধ্যবিত্তের বুকের মধ্যে খচ খচ করছে। যাঁরা রবিবার বাজার গিয়েছেন, তাঁরা দেখেছেন, বাজারে মাছ, মাংস থেকে তরিতরকারি উপচে পড়েছে সর্বত্র। ছুটির বাজারে যত বেশি ভিড়, তত বেশি দাম, তাও জানেন সবাই। কিন্তু যাঁরা রোজ বাজার করেন, তাঁরা বোঝেন, সপ্তাহের সাতদিনই এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে গিয়েছে বাজারদর।
শীত বিদায় নিয়েছে। কিন্তু কিছু শীতের আনাজ এখনও রয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম বাঁধাকপি। তার দর কেজি প্রতি ২৫ টাকা। লালচে হয়ে আসা ছোট ফুলকপির দর ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মটরশুঁটির কিলো ৬০ টাকা থেকে ৭০ টাকা। কিন্তু এসব আনাজপাতির চেহারা এমনই, তা দেখলে ক্রেতাদের ভালো না লাগারই কথা। তবে বাজারজুড়ে এখন গ্রীষ্মের আনাজ প্রচুর। কিন্তু দর দেখলে তা মালুম হবে না। পটলের কিলো ৭০ টাকা। ‘দিশি’ তকমায় কোথাও ৮০ টাকাও দর চলছে। একই হাল ঢেঁড়সেরও। সামান্য কম দাম ঝিঙের। তা ৬০ টাকার আশপাশে। চেহারা ও রঙের তফাতে বেগুন ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। রবিবারের বাজারে এঁচড় বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। বিন বিকিয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। করলার দর ৬০ টাকা। ছোট ছোট উচ্ছে বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। পেঁপে ৩০ টাকা, কুমড়ো ২৫ টাকা। সজনে ডাঁটাও ৫০ টাকার নীচে নেই। গাজরের দর লাল বা কমলা ভেদে ৩০ থেকে ৫০ টাকা। বিটের দর ৩০ টাকা। টম্যাটোও তাই। কাঁচালঙ্কার দর ৮০ থেকে ১০০ টাকা। কাঁচকলা যেমন পাঁচ টাকার আছে, তেমনই প্রতি পিস আট টাকায় কেনার অভিজ্ঞতাও হয়েছে অনেকেরই। এমনকী ছোট আঁটির লাল শাক বিক্রি হয়েছে দশ টাকায়। রবিবারের বাজারে পুঁইশাক বিক্রি হয়েছে ৩০ টাকা কেজিতে। পরিস্থিতি বুঝে পাতি লেবুও চার টাকা প্রতি পিস।
তাহলে কি সস্তা কিছুই নেই? শুনে মুচকি হাসছেন দোকানিরা। বলছেন, আছে তো! এই যে পাকা বেল দেখেছন, ১০ টাকা পিস। ক্রেতারা অবশ্য ভালো সাইজের যে বেলটি পছন্দ করছেন, তার জন্য ২০ টাকা দর উঠছে সঙ্গে সঙ্গে। তাহলে ১০ টাকা কোনটা? ছোট আকারের বেলগুলির দিকে ইঙ্গিত করে দোকানি বলছেন, ওই যে, ওইগুলো। অবশ্য পেঁয়াজের দরও ১০ টাকা। কিন্তু সেসব নতুন পেয়াঁজ। পুরনো পেঁয়াজ হলে, তার দর ১৮ থেকে ২০ টাকা। বাজার ঘুরে মধ্যবিত্তরা বলছেন, মাছ-মাংস বাদ রেখে শাক-পাতা খেয়ে পেট ভরানোও কি অসাধ্য হবে এবার?