পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
দৃশ্যত অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী তখন ফের ‘অগ্নিকন্যা’র মুডে। বললেন, অযাচিত হস্তক্ষেপ। ওরাও (কেন্দ্র) নির্বাচিত, আমরাও মানুষের ভোটে জিতে এসেছি। তবে কেন সমান্তরাল প্রশাসন চালানো হচ্ছে রাজ্যে? সমান্তরাল প্রশাসন চলছে সর্বত্র, এমনকী ইনস্টিটিউশনগুলিতেও। গলার স্বর সপ্তমে চড়িয়ে মমতা বলে চলেন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য সব ব্যবস্থা করব আমরা। আর তুমি কী করবে নরেন্দ্র মোদি, শুধুই দালালি? এরপরই নাম না করে ফের নিশানায় প্রধানমন্ত্রী— গায়ের জোর, লুট আর ভাঁওতাবাজি! চেঙ্গিস খান, হিটলার আর মুসোলিনির চেয়েও ভয়ঙ্কর! সাফ বলছি, আগুন নিয়ে খেলো না। ভিড়ে উপচে পড়া সভাস্থল সিংহগর্জন আর করতালিতে তখন সায় দিল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে। ফের বলে চলেন মমতা, কৈফিয়ত চাই, নির্বাচিত সরকার থাকা সত্ত্বেও কেন এহেন হস্তক্ষেপ? দিল্লির উত্তর আসার আগে জবাব দিলেন নিজেই। বললেন, এর প্রতিবাদে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্প থেকে রাজ্যের অংশীদারিত্ব প্রত্যাহার করে নিলাম। এবার দেখি, তুমি চালাও। শুধু প্রকল্প থেকে বাংলার অংশীদারিত্ব প্রত্যাহারের ঘোষণা করেই ক্ষান্ত থাকেননি মুখ্যমন্ত্রী। এদিনের সভা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই অংশীদারিত্ব প্রত্যাহারের সেই সিদ্ধান্ত নবান্ন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিল্লিকে জানিয়েও দেওয়া হয়।
কিন্তু মোদি সরকারের বিরুদ্ধে এহেন জেহাদ সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে কেন? জবাবও দিয়েছেন মমতা। বলেছেন, দলীয় প্রচারে সরকারকে ব্যবহার করা হচ্ছে। পোস্ট অফিসকে ব্যবহার করে চিঠি পাঠিয়ে দাবি করা হচ্ছে, এটা কেন্দ্রের প্রকল্প। তাই বাধ্য হয়েই সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লাম। কারণ এই প্রকল্পে রাজ্য সরকারেরও ভাগ আছে। প্রসঙ্গত, এর আগে ফসল বিমা যোজনা নিয়েও একইভাবে কেন্দ্রের একতরফা প্রচারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই যোজনায় বিমার প্রিমিয়ামে রাজ্য-কেন্দ্র অনুপাত যথাক্রমে ৮০ ও ২০ ভাগ। সেই বিষয়টিকে আড়াল করে বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে কৃষকদের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে যোজনাকে স্রেফ কেন্দ্রের বলে চালানো হচ্ছিল বলে অভিযোগ। বিষয়টি নজরে আসে মুখ্যমন্ত্রীর। এরপরই ক্ষুব্ধ মমতা ঘোষণা করেন, ৮০ ভাগ দিতে পারলে, বাকি ২০ শতাংশও পারব। এটা রাজ্য ফসল বিমা যোজনা। রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, ফসল বিমা যোজনার পর আয়ুষ্মান ভারত ঘিরে কেন্দ্রের সঙ্গে মমতার এই সরাসরি সংঘাত লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।
নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রাজ্যে চলা নানা প্রকল্প নিয়ে কেন্দ্রের স্বপক্ষে প্রচার শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। এই প্রচার চলছে প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে। মমতার কথা শুনতে এদিন কৃষ্ণনগরের মাঠে ভিড় জমিয়েছিলেন প্রত্যন্ত এলাকার হাজার হাজার প্রান্তিক মানুষও। তাদের সামনে মুখ্যমন্ত্রীর পাল্টা যুক্তি, সব তোমরা করছ, না? রাজ্যকে তার প্রাপ্য টাকা দিচ্ছ না, আর এখান থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছ ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকা। ফেরত দিচ্ছ কত? মাত্র কয়েক শতাংশ। তাও তো আয়কর, সেস আর কাস্টমস ট্যাক্স বাবদ আদায় করা অর্থের কিছুই দাও না। এবার তাহলে আমরাও বলি, আয়কর, সেস আর কাস্টমস ট্যাক্সের ভাগও চাই। মমতার কথায়, রাজ্য সরকারকে বাদ দিয়ে সব করবে, তা হবে না। এরকম জঘন্য আর নগণ্য সরকার আগে আসেনি। শুধুই বকবক। আর কিছুদিন পর নির্বাচন। মানুষ এবার বলবে, থাম, অনেক হয়েছে, থাম। কেন্দ্রে সরকার বদলের এই ইঙ্গিত দেওয়ার সঙ্গেই জনতাকে মমতার আশ্বাস, কেন্দ্রে নতুন সরকার এলে দেখব, যাতে মানুষের অধিকার অটুট থাকে। কেউ যেন পড়ে পড়ে মার না খায়। দেশের ঐক্য, সংহতি আর সম্প্রীতি যেন অক্ষুণ্ণ থাকে। সভাস্থলে ফের হাততালির ঝড়।