শরীর-স্বাস্থ্যের প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। কর্মক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা। গুপ্ত শত্রুতার মোকাবিলায় সতর্কতা প্রয়োজন। উচ্চশিক্ষায় বিলম্বিত ... বিশদ
দাম বাড়তে বাড়তে এখন গৌড়বঙ্গের জেলাগুলিতে খোলা বাজারে পেঁয়াজের দাম ১০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। কোথাও কোথাও তো ১২০-১৩০ টাকা দরেও খুচরো বাজারে বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। দাম বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করেও সমস্যার কোনও সুরাহা হচ্ছে না। পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনও কোনও জায়গায় সরকারি সুফল বাংলার স্টলে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে পেঁয়াজ। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা যৎসামান্য, বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই। এমনিতে বাঙালির সেন্স অফ হিউমারের সুনাম সর্বত্র। দৈনন্দিন দুঃখ ভুলতে কৌতুকের আশ্রয় নেওয়াটাই অভ্যাস রসিকতাপ্রিয় আম বাঙালির। পেঁয়াজের এই আকাশছোঁয়া দাম নিয়ে তাই নিত্য নতুন রসিকতা তৈরি হচ্ছে এবং সেসব ছড়িয়ে পড়ছে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায়।
সম্প্রতি যেমন ভাইরাল হয়েছে এমনই একটি কৌতুক ভিডিও। তাতে দেখা যাচ্ছে, কোনও এক বিয়ের আসরে সালঙ্কারা নববধূর হাতে বিয়ের উপহার হিসেবে পেঁয়াজ তুলে দিচ্ছেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। বর্তমানে পেঁয়াজের দাম যা বেড়েছে, তাতে এর থেকে ‘মূল্যবান ও প্রয়োজনীয়’ উপহার আর কী-ই বা হতে পারে? এই ভিডিও’র উৎপত্তি কোথায়, তা জানা নেই। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে দিকে দিকে। ফেসবুকে মিলেছে বিপুল পরিমাণে ‘লাইক’, ‘শেয়ার’ ও ‘হাস্যমুখের ইমোজি’। অন্য একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অটো থেকে নেমে ভাড়া মেটানোর জন্য চালকের হাতে যাত্রীরা তুলে দিচ্ছেন পেঁয়াজ। আবার ফেরত খুচরো হিসেবে সেই চালকও যাত্রীদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ছোট ছোট পেঁয়াজ। আরও একটি এধরনেরই কৌতুক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে রাতে লাঠিসোঁটা হাতে পেঁয়াজের খেত পাহারা দিচ্ছেন চাষিরা। এতো ‘দামি’ জিনিস রাতের অন্ধকারে পাছে চুরি না হয়ে যায়। এই ভিডিও শেয়ার করার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সম্প্রতি কিন্তু সত্যি সত্যিই অন্যান্য রাজ্যে পেঁয়াজ লুটের ঘটনা ঘটেছে।
যেকোনও বিষয়ে ট্রোলিং এখন নেটিজেনদের পছন্দের পাসটাইম হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোখে জল আনা পেঁয়াজের দামই বা তার বাইরে থাকবে কীভাবে? তাই কোনও পোস্টে জানানো হচ্ছে, পেঁয়াজ কেনার জন্য নাকি লোন দিচ্ছে বড় বড় ঋণদানকারী সংস্থা। কোনও পোস্টে বলা হচ্ছে, পেঁয়াজের সাংঘাতিক দামের হাত থেকে বাঁচতে মাছ-মাংস ছেড়ে এখন নাকি দীক্ষা নেওয়ার ভিড় বাড়ছে বিভিন্ন বাবাজিদের কাছে। কোথাও আবার কোনও যুবক তার স্ত্রীকে উপহার দিচ্ছে পেঁয়াজ বসানো সুদৃশ্য আংটি।
ইংলিশবাজারের বাসিন্দা শ্বেতা দাস গৌড় মহাবিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের পড়ুয়া। তিনি বলেন, আমি নিজে বাজার করতে যাই না ঠিকই, কিন্তু বাড়িতে বাবা-মায়ের মধ্যে তো এখন সবসময় এই পেঁয়াজের দাম নিয়েই কথা হচ্ছে। যখনই বাজার থেকে ফিরে বাবার মেজাজ খারাপ হয়েছে বুঝতে পারি, তখনই বাবার ফোনে পেঁয়াজ নিয়ে কোনও মিম হোয়াটসঅ্যাপ করে তাকে একটু হাসানোর চেষ্টা করি। রায়গঞ্জ শহরের বাসিন্দা নীলাঞ্জন দাস বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। তিনি বলেন, বাজার করতে গেলে মাথার ঠিক থাকে না। ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপে পেঁয়াজ নিয়ে রসিকতাগুলো দেখলে মনটা একটু হাল্কা হয়। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন কোচবিহারের শঙ্কর বসু অথবা শিলিগুড়ির প্রদীপ সাহারা। তাঁরা বলেন, প্রশাসন পেঁয়াজের দাম কমাতে না পারুক, আমরা তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করে যন্ত্রণাটুকু তো অন্তত ভুলতে পারি।