লাহোর, ৭ জুলাই (পিটিআই): ষড়ন্ত্রের শিকার হয়েছেন বাবা। তাঁকে চাপের মুখে পড়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছে বলে ভিডিও প্রকাশ করে দাবি করলেন নওয়াজ শরিফের কন্যা মারিয়ম। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারির মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে বর্তমানে জেলে রয়েছেন পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। দুর্নীতির মামলায় তাঁর সাত বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। শনিবার একটি গোপন ভিডিও প্রকাশ করে মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) নেত্রী মারিয়ম শরিফ। ওই ভিডিওতে পিএমএল-এন নেতা নাসির ভাটকে কথা বলতে দেখা যায় ইসলামাবাদের আদালতের বিচারক আরশাদ মালিককে। দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা চলাকালীন ওই বিচারক জানান, বাইরে থেকে চাপ আসছিল। ‘ব্লাকমেল’ করা হচ্ছিল তাঁকে। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে নতিস্বীকার করতে হয়েছে। দুর্নীতির উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত করে সাজা শোনাতে হয়েছে নওয়াজ শরিফকে। শনিবার লাহোরে একটি সাংবাদিক বৈঠকে ভিডিওটি প্রকাশ করেন মারিয়ম। পরে দলের ওয়েবসাইটেও ভিডিওটি পোস্ট করা হয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘বাবা ন্যায্য বিচার পাননি। তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। উপযুক্ত প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বাবাকে। বাবার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক তছরুপ, বেআইনি লেনদেনের কোনও প্রমাণ পায়নি বলে বিচারক মালিক জানিয়েছেন। একটি ব্যক্তিগত ভিডিও দেখিয়ে বিচারককে বার বার ব্লাকমেল করা হচ্ছিল। তাই একপ্রকার নিরুপায় হয়ে বাবাকে ওই সাজা দেন বিচারক।’ নওয়াজ শরিফকে সাজা শোনানোর পর ওই বিচারক একাধিকবার আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন বলেও দাবি করেন মারিয়ম। তিনি বলেন, ‘ওই ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর বাবাকে আর জেলে রাখা উচিত নয়।’ তবে হাইকোর্টে নওয়াজ শরিফের জামিন নিয়ে মামলার শুনানিতে ওই ভিডিওটি ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি ইঙ্গিত দেন। এদিকে বিচারক আরশাদ মালিক ভিডিওটি ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করেই প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলে বিচার প্রক্রিয়ার উপর আঘাত হানা হয়েছে। ওই ভিডিওতে যে কথোপকথন দেখানো হয়েছে, তা ভুয়ো। এব্যাপারে আমি আইনি ব্যবস্থা নেব।’ একইসঙ্গে মামলা চলাকালীন নওয়াজ শরিফ পরিবার তাঁকে ঘুষ দিতে চেয়েছিল বলে পাল্টা অভিযোগ করেন আরশাদ। চাপে পড়ে শরিফ জেলের সাজা দেওয়ার অভিযোগও খারিজ করে দেন তিনি।
এদিকে যে ভিডিও প্রকাশ করে নওয়াজ শরিফের মুক্তির দাবি তুলেছেন মারিয়ম, সেটি বিকৃত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইমরান খানের সরকার। বিকৃত করা ভিডিও প্রকাশ করা অপরাধ। এতে বিচার প্রক্রিয়ার উপর আঘাত হানা হয়েছে বলে জানিয়েছে সরকার। পাশপাশি ভিডিওটির ফরেন্সিক পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে ওই ভিডিও প্রকাশের জন্য ২১টি টিভি নিউজ চ্যানেলকে নোটিস পাঠিয়েছে পাক সরকার। আগামী সাতদিনের মধ্যে শোকজের জবাব না দিলে চ্যানেলগুলির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে সরকার।