সিদ্ধার্থশঙ্কর সরকার, পুরাতন মালদহ: মালদহে গরমের অন্যতম ফল আম। মালদহ জেলার আম শুধু জেলাই নয়, গোটা বিশ্বে তার কদর রয়েছে। জেলার আম বিশ্বের দরবারে যে খ্যাতি লাভ করেছে, তা চাষির আগ্রহ বাড়িয়েছে। মালদহে আম চাষের আগ্রহ নবাবি আমলের আগে থেকেই। একসময় চৈতন্য মহাপ্রভু ধর্মপ্রচারে গৌড়ে এসে সুস্বাদু আমের নামকরণও করেছিলেন বলে কথিত। এনিয়ে ইতিহাসবিদরাও তাঁদের গবেষণার মধ্যে রেখেছেন। জেলায় এই মুহূর্তে বহু প্রজাতির আম চাষ হচ্ছে। সেগুলিতে ইতিমধ্যে মুকুল চলে এসেছে। সম্পূর্ণ অংশে মুকুল না এলেও কয়েকদিনের মধ্যে সমস্ত  প্রজাতির  আমে মুকুল চলে আসবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। আমের মুকুল রক্ষা করতে কী করণীয়, কী করণীয় নয়, সে বিষয়ে আমচাষিদের সতর্ক করে দেওয়া হচ্ছে। চাষিরাও আগ্রহের সঙ্গে জেলার অন্যতম সেরা ফলে লাভের ফসল তুলতে তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন।
এবিষয়ে জেলার উদ্যানপালন দপ্তরের ডেপুটি ডিরেক্টর কৃষ্ণেন্দু নন্দন বলেন, জেলায় আমচাষের ইতিহাস বহু পুরনো। এ নিয়ে অনেক ইতিহাস রয়েছে। নবাবি আমলে আমের জাত নিয়ে চর্চা হতো। তাঁরা আম নিয়ে গবেষণা করতেন। তাঁরাই বিভিন্ন আমের জাত সংরক্ষণ করতেন। এখন বিভিন্ন ভ্যারাইটির আম নিয়ে মালদহে গবেষণা হচ্ছে। চাষিদের মধ্যে আগ্রহ প্রবল। প্রতিবছর একটু একটু করে চাষের এলাকা বাড়ছে।  বলা যেতে পারে মালদহে আম নিয়ে ইতিবাচক সাড়া রয়েছে। এই সময় মুকুল আসে। তাই কী করণীয় আর কী করণীয় নয়, সে বিষয়ে আমরা চাষিদের পরামর্শ দিচ্ছি।
মালদহে বর্তমানে ৩১ হাজার হেক্টর এলাকাজুড়ে আম চাষ হচ্ছে। যা নবাবি আমলে অনেকটাই কম ছিল। প্রতিবছর জেলায় ২৫০০ হেক্টর  এলাকাজুড়ে আম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। নবাবি আমল থেকে আম চাষের আগ্রহ যে মোটেও কমেনি তা আম চাষের এলাকা বৃদ্ধিতে বোঝা যাচ্ছে। জেলায় বিভিন্ন প্রজাতির আম ল্যাংড়া, লক্ষ্মণভোগ ক্ষীরসাপাতি, ফজলি, হিমসাগর, আসিনা, গোপালভোগ, মল্লিকা প্রভৃতি আম চাষ ব্যাপকভাবে হয়। সম্প্রতি আম্রপালি, আলফানসো প্রজাতির আম চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। আম চাষের গবেষণা নিয়ে জেলায় পৃথক কেন্দ্র গড়ে উঠেছে। সেখানে আমের উন্নত প্রজাতির জাত থেকে শুরু করে আম থেকে ভিটামিনের উৎস খোঁজা হচ্ছে। এ নিয়ে বিজ্ঞানীরা চর্চা চালাচ্ছেন।  নবাবি আমলে বিশেষজ্ঞরা আমের জাত নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতেন। তাঁদের প্রচেষ্টায় আজও বহু প্রজাতির আম টিকে রয়েছে। চৈতন্য মহাপ্রভু একসময় গৌড়ে এসে ফজলবিবির কাছ থেকে আম খেয়ে প্রশংসা করেন। সেই থেকে ফজলি আমের নামকরণ নিয়ে চর্চা আজও হচ্ছে। 
চলতি মাসেই জেলাজুড়ে আমের মুকুল চলে এসেছে। লক্ষ্মণভোগ এবং আসিনা প্রজাতির আম গাছে মুকুল ভরে গিয়েছে। বাকি প্রজাতির আম গাছে প্রায় ৫০ শতাংশ মুকুল চলে এসেছে। এনিয়ে জেলার উদ্যানপালন দপ্তরের কর্তারা আমের মুকুল ফোটার সময় আমচাষিদের পরামর্শ দিচ্ছেন।  ইতিমধ্যে অনেক আমচাষি মুকুল ফোটার জন্য  ইমিডাক্লোরোপিড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করে ফেলেছেন। বিশেষজ্ঞরা জানান, এই আবহাওয়ায় সালফার প্রয়োগ করা প্রয়োজন।