হাঁটার গল্প
সমৃদ্ধ দত্ত
অনেকবার আবেদন করেও আধার কার্ড পায়নি রতু লাল। রেশন কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড যুক্ত না করা হলে রেশনও পাওয়া যায় না। সুতরাং সে রেশন পায় না। তার খুব দুঃখ ছিল, সরকারের কোনও কাগজ তার কাছে নেই বলে। সেই কষ্ট ঘুচল। অবশেষে করোনা ভাইরাসের দৌলতে এই প্রথম সরকারিভাবে একটি স্বীকৃতি পেল রতু লাল। কোনও কাগজ, সার্টিফিকেট নয়। আরও স্পষ্ট, আরও সোজাসুজি। সরকারি স্ট্যাম্প। রতু লালের কপালে সাদা রঙের পেইন্ট দিয়ে মধ্যপ্রদেশ পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর অনিতা অগ্নিহোত্রী স্ট্যাম্পের মতো করে হাতে লিখে দিয়েছেন, ‘আমি লকডাউন অমান্য করেছি, আমার কাছে ঘেঁষবেন না কেউ। সাবধান!’ উত্তরপ্রদেশ থেকে হাঁটতে হাঁটতে মধ্যপ্রদেশের ছতরপুর জেলার সীমান্তে প্রবেশ করার পরই রাস্তা থেকে রতু লালসহ পাঁচজনকে পুলিস ধরেছে। জানতে চেয়েছে ধমক দিয়ে, কেন তারা লকডাউন অমান্য করে এভাবে হাঁটছে। তিনদিন একটানা হেঁটে আসার পর মাটিতে বসে পড়েছিল রতু লাল। তাদের গৌরীহর পুলিস স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। সরকারের আদেশ কেন মানা হয়নি? রতু লাল বলেছিল, তার কাছে পড়ে আছে ৬০ টাকা। এই টাকায় চলবে না। খাবার কিনে খেতে হচ্ছে। আর দু’দিন পর থেকে রাস্তায় সেটাও পাওয়া যাচ্ছে না। তাই তারা হাঁটা শুরু করেছে। বাড়ি ফিরতে। উত্তরপ্রদেশ থেকে মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত হাঁটার মধ্যেই কয়েক জায়গায় রতু লালদের খাবার দিয়েছে কিছু দোকান। কিন্তু থানা থেকে বেরিয়ে ফের হাঁটা শুরু করার পর তাকে আর কেউ খাবার দিতে সাহস পাচ্ছিল না। কারণ, তার কপালের ওই লেখা। ‘কাছে ঘেঁষবে না’ লেখা দেখে সকলেই ধরে নিয়েছে, তার করোনা সংক্রমণ হয়েছে। তাই কে দেবে তাকে খাবার? সুতরাং পরবর্তী ১৩ ঘণ্টার হাঁটায় কোথাও খাবার পায়নি রতু লাল। অবশেষে তার স্থান হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। কপালে সরকারি স্ট্যাম্প।
খাবার আছে, চা আছে, একটা অনেক বড় স্কুলবাড়িতে আশ্রয়ও রয়েছে। কিন্তু সামনে খাবার থাকলেও দয়াল মণ্ডলের মুখে রুচি নেই। অথচ সে ৩৫ ঘণ্টা খায়নি। কম্বল, চাদর দেওয়া হলেও তার ঘুম আসছে না। হায়দরাবাদের টুক্কুগুড়া থেকে মধ্যপ্রদেশের বেতুল যেতে হবে। ৮১০ কিমি হাঁটা। হীরাপুর গ্রামের দয়াল মণ্ডল টুক্কুগুড়া থেকে রওনা দিয়ে ১৩৫ কিলোমিটার হেঁটে আসার পর তাকে থামানো হয়েছিল। আর হাঁটা যাবে না। সরকারের বারণ বাইরে থাকা। পুলিস বলল। অতএব আশ্রয় শিবিরে। চিন্তা নেই। খাবার পাবে। কিন্তু দয়াল মণ্ডল খাবে কীভাবে? ১৯ মার্চের পর আর সে টাকা জমা করেনি ব্যাঙ্কে। তাই হীরাপুর গ্রামে থাকা তার স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে আর বিধবা মায়ের কাছে তো আর টাকা থাকার কথা নয়! তারা কী খাচ্ছে? নিশ্চয়ই খাবার শেষ হয়ে যাচ্ছে? তাই ছেলেমেয়ের কথা ভেবে দয়াল মণ্ডল খাবার মুখে দিতে পারছে না। কাঁদছে। কবে যেতে পারবে বাড়ি? গিয়ে কী দেখবে? দীপক, দয়ালদের এই গোটা ১৬ জনের দল বেতুল থেকে হায়রাবাদে গিয়েছিল কেন? সেকেন্দ্রাবাদের কাছে লাক্সারি ভিলা হাউজিং কমপ্লেক্স তৈরি করতে। তারা কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার। দয়াল আর দীপক তৈরি করছিল ফ্ল্যাট অ্যাটাচড সুইমিং পুল! দয়ালদের হীরাপুর গ্রামে জল শুকিয়ে এসেছে। তাই চাষ বন্ধ। সেই কারণে, তারা এই হায়দরাবাদে এসেছে কাজ করতে। আর এসে দেখছে প্রতিটি ফ্ল্যাটের একটি করে সুইমিং পুল থাকবে। পরিভাষায় এগুলিকে বলা হয় ব্যালকনি পুল। দয়াল মণ্ডলের মাত্র ১২ টাকা ব্যালান্স আছে মোবাইলে। সেটাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। কথা বললে শেষ যোগাযোগের মাধ্যমটিও সমাপ্ত হয়ে যাবে। তারপর? দয়াল মণ্ডল সুযোগ খুঁজছে। সে খাবার চাইছে না। ব্লক অফিসারের সঙ্গে দেখা করতে চায়। সে অনুমতি চায় বাড়ি ফেরার। বাস, ট্রেন দিতে হবে না। অনুমতি পেলেই আবার হাঁটবে। সে না গেলে বাড়ির সকলে না খেয়ে মারা যাবে। তার কাছে তবু ১২৬০ টাকা আছে। এই টাকা সে ব্যালান্স রিচার্জ করে করে শেষ করতে চায় না।
১২ জনের টিম। একটি মাস্ক। সব মিলিয়ে রয়েছে ৩৪৫ টাকা। পাঁচটি রুটি। তিন পাউচ জল। প্রভীন কুমার এবং ১২ জনের দল চারদিন ধরে হাঁটছে। ২০০ কিমি হাঁটার মধ্যে ১১ বার চেকপোস্টে পুলিস আটকেছে। আধার কার্ড দেখার জন্য। উত্তরকাশীতে প্রজেক্ট হনুমান চটিতে কাজ করছে প্রবীণ কুমার আর তার এই সঙ্গীরা। কেদারনাথ, বদ্রীনাথ, যমুনোত্রী, গঙ্গোত্রী। এটা হল কেন্দ্রীয় চার ধাম প্রকল্প। কিন্তু সেই কাজ বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠিকাদার নেমে গিয়েছে হরিদ্বারে। শ্রমিকদের এখানে রেখে। একদিন... দুদিন... খাবারের দোকানও বন্ধ। সাপ্লাই আসছে না নীচের থেকে। তাই হাঁটা শুরু করেছিল প্রভীন কুমার। অবশেষে দেরাদুনে এসে ৬৫ ঘণ্টা পর খাবার পেয়েছে তারা। পাঁচটি রুটি শেষ হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। হাঁটা শেষ হয়নি। আরও ৬০ কিমি বাকি। তারপর উত্তরপ্রদেশের কুতুবপুর গ্রামে। ৬০ কিলোমিটার। দেরাদুনে আসার পর কমিউনিটি সেন্টারে আটকে থাকা প্রবীণ কুমারদের খিচুড়ি দেওয়ার সময় বলা হয়েছিল, তিনদিন ধরে না খাওয়া, এখনই কিন্তু বেশি বেশি খিচুড়ি খেও না। আস্তে আস্তে সইয়ে খাও। নয়তো পেট খারাপ হবে। প্রবীণ কুমার মাথা নেড়ে খাওয়ার মধ্যেই সন্তর্পণে ব্যাগ থেকে জল খাবার ঘটি বের করে সেটায় খিচুড়ি সরিয়ে রেখেছে। কারণ বিশ্বাস নেই, আবার কখন খাবার পাওয়া যাবে। যদি না পায়!
হাঁটছে ব্রিজমোহন সিং, হরদোইয়ে বাড়ি। গাজিয়াবাদে কার্পেন্টারের কাজ করে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে। বেতন ৯ হাজার টাকা। ফ্যামিলি মেম্বার ১০ জন। বাড়ি থেকে ফোন এসেছে, পাড়ার মুদির দোকান আর বাকিতে জিনিস দিচ্ছে না। তাই তাকে ফিরতে হবে। অতএব হাঁটা। হাঁটছে পিলিভিটের ব্রিজপাল। গ্রেটার নয়ডায় খেলনা তৈরির কারখানার শ্রমিক। আয় কত? ২ হাজার টাকা মাসে! হাঁটছে সঈদা বাণী। সুলতানপুর যাবে। ৩০০ টাকা আয় দিনে। গাজিয়াবাদে কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কার। হাঁটছে মুকরিম আলি। মায়ের অপারেশন করতে হবে। তাই সে রোজগার বাড়াতে গিয়েছিল ছত্তিশগড়ের রায়পুর। তার মধ্যেই লকডাউন। রায়পুর থেকে বাড়ি... বারাণসী। ৬৪৪ কিলোমিটার। লকডাউনের পরদিনই ভাই ফোন করে বলেছে, মা আর নেই। মারা গিয়েছে। মুকরিম আলি মাকে শেষ দেখা দেখতে চায়। হাঁটতে শুরু করেছে। ৩১০ কিলোমিটার হাঁটার পর সে আটকে আছে কোরিয়া নামে এক ব্লক শহরে। আর যেতে দেওয়া হবে না। এটাই বর্ডার। বর্ডার সিল করে দেওয়ার নির্দেশ আছে। মুকরিম আলি থানায় বলছে একবার অন্তত বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করে দাও। মায়ের কবরে মাটি দিতে চাই। চিকিৎসা করাতে যখন পারলাম না। পুলিসকর্মীরা অসহায়। কারণ সত্যি তাঁরাও অপারগ। ঝুঁকি নেওয়া যায় না। মুকরিম আলির ভাই বারংবার ফোন করে বলছে, কী করব? মাকে গোর দিয়ে দিই? তুই তো আসতে পারছিস না?
এই যে শোনা যায় রাজ্যে রাজ্যে কিংবা কেন্দ্রে সরকার এত সব উন্নয়নের কাজ করে, উন্নয়ন নাকি উপচে পড়ছে দেশজুড়ে, তাহলে আজও এত মাইগ্রেশন হচ্ছে কেন? দেশের কোটি কোটি গরিব মানুষ কেন নিজেদের ঘর ছেড়ে শহরে আসতে বাধ্য হচ্ছে এখনও। এই যে সকলেই বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়... এই দৃশ্যটাই একটা উত্তর যে, আসলে গ্রামে গ্রামে, ব্লকে ব্লকে কাজ নেই। তাই এরা ভিনরাজ্যে। কেন কাজ নেই?
শুধু মারাঠাওয়াড়া আর তেলেঙ্গানার উদাহরণ দেখা যাক। এপ্রিল মাস এল, মে আসছে। এই সময় এই দুই এলাকায় প্রবল জলসঙ্কট শুরু হবে। আর সেই সঙ্কটের সময় দেখা যায় গ্রামগুলিতে প্রাইভেট বা সরকারি ট্যাঙ্কার আসছে। প্রতি লিটার জল সাধারণ মানুষকে কিনতে হয় ৪৫ পয়সা করে। জুন মাসে যখন তুঙ্গে উঠবে জলকষ্ট, তখনই ওই রেট হয়ে যায় লিটারে ১ টাকা। আর ঠিক এই সময়েই, এই এলাকাগুলিকেই বিয়ার এবং সুগার ফ্যাক্টরিকে জল বিক্রি করা হয় ৪ পয়সা প্রতি লিটার। তিনটি রাজ্যে কোল্ড ড্রিংক সংস্থা জল পায় ২৫ পয়সা প্রতি লিটার দরে। গোটা মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশের হিসেব হল, গ্রামের তুলনায় সরকারি জলের সাপ্লাই শহরাঞ্চল পায় ৪০০ শতাংশ বেশি।
গ্রামে জল নেই। তাই চাষ নেই। চাষ নেই। তাই কাজ নেই। কাজ নেই। তাই মাইগ্রেশন। কতরকম মাইগ্রেশন আছে ভারতে? সিজনাল, শর্ট টার্ম, সার্কুলার এবং পার্মানেন্ট। ফসল কাটার সময়টায় মাইগ্রেশন হয়। এর মধ্যে সার্কুলার মাইগ্রেশন সবথেকে দুর্ভাগ্যজনক। এই মাইগ্রেশনে একটি শ্রমিক বা গোটা পরিবার কিছু মাস অথবা কয়েক বছর পরপরই এক শহর থেকে অন্য শহরে চলে যায় কাজের জন্য। মুম্বইয়ে একটা প্রোজেক্ট শেষ। তাদের কাজ চলে গেল। তারা পুনে চলে গেল সেখান থেকে ভোপাল। তারপর সুরাত। এই সার্কুলার মাইগ্রেশনের সংখ্যা সবথেকে বেশি। আর সেই কারণে এদের কোনও স্থায়ী সংখ্যা সরকারের ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভেতে পাওয়া যায় না। তাই এই সেক্টর বিপিএল তালিকাতেও থাকে না। গরিবদের সহায়তার জন্য সরকারি যে কোনও প্রকল্পেই এই সার্কুলার মাইগ্রেশনের অনেকে বাদ চলে যায়। কারণ স্থায়ী ঠিকানা নেই, আধার কার্ড নেই।
উন্নয়ন যদি ইনক্লুসিভ হয়, তাহলে মাইগ্রেশন হওয়ারই কথা নয়। কিন্তু ২০১১ সালের জনগণনার রিপোর্টে নজিরবিহীন প্রবণতা দেখা গিয়েছে। জনগণনা যতদিন ধরে চলছে ভারতে, সেখানে সর্বদাই দেখা গিয়েছে গ্রামের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার সর্বদাই শহরের তুলনায় বেশি হয়েছে। একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল ১৯২১। সেটার কারণ ভারতে ছড়িয়ে পড়া স্প্যানিশ ফ্লু। ওই রোগের কারণে গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহরে চলে আসে কয়েক বছরে। তাই ১৯২১ সালের জনগণনায় দেখা যায়, গ্রামের তুলনায় শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি হয়েছে। কিন্তু ওই একবারই। আর কোনওদিন নয়। অভাবনীয় ব্যতিক্রম দেখা গেল সর্বশেষ জনগণনায়। ২০১১ সালের রিপোর্টে পাওয়া গেল, গ্রামে ৯ কোটি মানুষ বেড়েছে। কিন্তু শহরে বেড়েছে ৯ কোটি ১৪ লক্ষ মানুষ। অর্থাৎ শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এই প্রথম স্বাধীন ভারতে বেশি হয়ে গেল। এর এক ও একমাত্র কারণ মাইগ্রেশন। এই যে ১৯২১ সালের জনগণনা শুরু হচ্ছে, নিশ্চিতভাবে দেখা যাবে ওই প্রবণতা আরও বেড়েছে। অর্থাৎ শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধিহার বাড়ছে। কারণ বিগত ১০ বছরে মাইগ্রেশনের সংখ্যা আরও বেড়েছে। তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে সাম্প্রতিক ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভেতে। এর কারণ কি? যে কোনও সরকার বিগত ২৫ বছর ধরে লাগাতার অ্যান্টি ফার্মার, অ্যান্টি ভিলেজ, অ্যান্টি লেবার ডেভেলপমেন্ট মডেল অনুসরণ করে চলেছে। সবথেকে বড় প্রমাণ হল মাইগ্র্যান্ট লেবারদের কোনও সার্ভেই হয় না। মাইনগ্র্যান্টস লেবারার ওয়ার্কমেন অ্যাক্ট ১৯৭৯ গ্রাহ্যই হয় না ভারতের রাজ্যে রাজ্যে। তাই পৃথক সঠিক কোনও তথ্যই নেই সংখ্যাটি কত। এসবের মধ্যেই শুধু একটা প্রাপ্তি। কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে ৮০ কোটি গরিব মানুষের জন্য ১ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ। প্যাকেজটা বড় কথা নয়। ওটা সামান্য। আসল ম্যাজিক হল ওই ৮০ কোটি শব্দবন্ধটি! বহু বছর পর সরকার অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করল যে, দেশে গরিবের সংখ্যা ৮০ কোটি!
অধ্যাপক অমর্ত্য সেন ও জঁ দ্রেঁজের গবেষণামূলক গ্রন্থ ‘অ্যান আনসার্টেন গ্লোরি’তে একটি ক্ষুদ্র দৃশ্যের বর্ণনা আছে। উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র জেলায় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশনের বিদ্যু্ৎকেন্দ্র ক্যাম্পাসে একটি বিরাট গেস্ট হাউস। সেখানে অফিসাররা থাকেন, ইঞ্জিনিয়াররা ইন্সপেকশনে এলে বিশ্রাম নেন। সকালে উঠেই এই গেস্ট হাউসের কেয়ারটেকারের কাজ হল, সবকটা এয়ারকন্ডিশনার চালিয়ে দেওয়া। এমনকী ঘরে বা লবিতে কেউ না থাকলেও দিনভর এসি চলে। আর এই গেস্ট হাউসের বাউন্ডারি ওয়ালের ঠিক বাইরে রয়েছে সার দেওয়া মেকশিফট কটেজ। এখানে থাকেন পাওয়ার প্ল্যান্টের সাফাই কর্মীরা। ডোম কমিউনিটির। বাউন্ডারি ওয়ালের একদিকে দিনভর এসি চলে ফাঁকা লবিতে। আর এই অন্যদিকে এই অস্থায়ী কটেজগুলিতে বিদ্যুৎ সংযোগই নেই। এঁদের অনেকেই ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে কাজ করছেন এনটিপিসিতে। জলও আনতে হয় হেঁটে... ক্যাম্পাসের অন্য প্রান্ত থেকে। উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদ, দাঙ্গায় বাস্তুহারা, পানীয় জলের অভাব, জীবিকার সন্ধান, খরায় ফসল জ্বলে যাওয়া, বন্যায় ত্রাণ শিবিরের খেঁাজ—ভারতের ৮০ কোটির সিংহভাগ সবথেকে ভালো শিখেছে একটি স্কিল! হাঁটা!
03rd April, 2020