সংবাদদাতা, বহরমপুর: সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পেরলেও মুর্শিদাবাদ জেলার বহু জমিতে পাটগাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে। পর্যাপ্ত জলের অভাবে এখনও পাট কাটতে পারেননি বহু চাষি। জাঁক দেওয়ার জন্য বহু জায়গায় জলাশয়ের ধারেই ডাঁই করে রাখা হয়েছে পাট। জাঁক দেওয়া পাট তোলা হলে তবেই চাষিরা ওই পাট পচাতে দিতে পারবেন। জলের অভাবে পাট কাটতে ও জাঁক দিতে না পারায় এবার খরচের টাকা ঘরে উঠবে কিনা সেই আশঙ্কাতেই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে চাষিদের। পাশাপাশি চাষিদের দাবি, পাট পচাতে দেরি হওয়ার কারণে পাটের তন্তুর গুণগত মানও অনেক কমে যাবে। বাজারে সেই পাট বিকোবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। জেলা কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও প্রায় ২০ শতাংশ জমিতে পাট রয়েছে। তবে পাট পচানোর সময় চলে যায়নি বলেই কৃষি দপ্তর সূত্রে চাষিদের আশ্বস্ত করা হয়েছে।
জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা তাপস কুণ্ডু জানান, পাট কাটার সময় এখনও পেরিয়ে যায়নি। ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। ফলে চাষিদের এখনই হতাশ হওয়ার কোনও কারণ নেই।
মুর্শিদাবাদ জেলায় এবার পাট চাষ নিয়ে নাকাল চাষিরা। পাট কাটার নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও এখনও জমিতেই দাঁড়িয়ে রয়েছে বহু গাছ। অনেকে আবার জমি থেকে তুলে এনে জলের অভাবে সেগুলি জাঁক দিতে পারেননি। যার ফলে রোদেই শুকোচ্ছে পাটগাছ। চাষিদের দাবি, পাট নিয়ে এর আগে কোনওবার এত নাজেহাল হতে হয়নি। অন্য বছর আগস্ট মাসেই পাটের তন্তু ঘরে তুলে চাষিরা চড়া দামের দিকে চেয়ে থাকতেন। এবার লাভের আশা ছেড়েই দিয়েছেন বহু চাষি। খরচের টাকা ঘরে তোলা নিয়েই এখন দুশ্চিন্তায় প্রহর গুণছেন তাঁরা।
মুর্শিদাবাদ জেলায় এবার প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছিল। পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় বহু চাষি মোটা লাভের আশায় পাম্প চালিয়ে জল দিয়ে পাট পচিয়েছেন। জুলাই মাসে বৃষ্টির ঘাটতি ৪৪ শতাংশ ছাড়িয়েছিল। মাসের শেষ দিকে সেই ঘাটতি ৩০ শতাংশের নীচে নামায় দিন কয়েক পাট পচানোর হিড়িক পড়ে যায়। কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, তাতেও ৭০ শতাংশ জমির পাট পচাতে পারেননি চাষিরা। কারণ জলের অভাব। নওদার পাট চাষি রসুল বিশ্বাস বলেন, গতবছর পাট চাষ করে ৭০ হাজার টাকা লাভ হয়েছিল। এবার অর্ধেক জমির পাট এখনও জাঁক দিতেই পারিনি।
জেলার নওদা, হরিহরপাড়া, বেলডাঙা, বহরমপুরের শিয়ালমারা চারাতলা এলাকায় এখনও বহু জমিতে পাটগাছ দাঁড়িয়ে রয়েছে জমিতেই। এই এলাকার রাজ্য সড়কের দু’পাশে ডাঁই হয়ে জমে রয়েছে জমি থেকে কেটে আনা পাট। জাঁক দেওয়ার জলের অভাবে রোদেই সেগুলি শুকোচ্ছে। চারাতলা এলাকার চাষি মিজানুর রহমান বলেন, জমি থেকে তুলে এনে জলের ধারে সাতদিন ফেলে রেখেছি। এরপর এই পাট থেকে যে তন্তু বের হবে বাজারে তার দাম মিলবে না। ফলনও অনেক কমে যাবে। ফলে এবার মহাজনের ঋণ নিয়ে পাট চাষে যে টাকা খরচ করেছি তা উঠবে না। পাট চাষ করে ঋণ পরিশোধ নিয়েই এখন ঘুম ছুটেছে চাষিদের। আগস্ট মাসের মধ্যেই চাষিরা তন্তু শুকিয়ে ঘরে তোলেন অন্যান্যবার। এবার সেপ্টেম্বরেও প্রায় ২০ শতাংশ জমিতেই রয়ে গিয়েছে গাছ। এই পরিস্থিতিতে অনেকে আবার পাট না কাটারও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হরিহরপাড়া এলাকার এক চাষি বলেন, এরপর জমিতে নামলে পরিশ্রমের খরচও উঠবে না।  নিজস্ব চিত্র