কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
দেব পরিবার এস্টেটের সদস্য লক্ষ্মণচন্দ্র দেব বলেন, আমাদের আদি দেবতা ছিল শালবনীর জয়পুরে। পরবর্তীকালে বর্গী আক্রমণের কারণে জঙ্গলে ঘেরা এই গড়সেনাপেত্যা গ্রামে পূর্বপুরুষরা এসে পুজো শুরু করেছিলেন। এখানে দেবী অষ্টদশভুজা। সপ্তমীর দিন থেকে ছাগ বলি শুরু হয়। নবমী পর্যন্ত চলে। নবমীর দিন প্রায় ৮৪টি ছাগ বলি হয়। পরিবারের যেসব আত্মীয়স্বজন বাইরে থাকেন পুজোর সময় তাঁরা সকলেই গ্রামের বাড়িতে আসেন। পুজোর ক’দিন সকলেই আনন্দে কাটান।
কেশপুর ব্লকের আনন্দপুর থানার পারুলিয়া গ্রামের মিত্র পরিবারে ১২০৩ বঙ্গাব্দে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। সেই সময় বাড়ির কর্তা ব্রাহ্মণভূম পরগনার জমিদার ছিলেন। মিত্র পরিবারের সদস্য প্রণবেশ মিত্র বলেন, জন্মাষ্টমীর দিন মন্দিরে কাঠামো পুজো হয়। মহালয়ার পরেরদিন মন্দিরে নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। সাবেকি একচালার প্রতিমা। পুরনো নিয়ম মেনে সপ্তমী, অষ্টমী এবং নবমীর দিন ছাগল বলি হয়। এছাড়া নবমীর দিন চালকুমড়ো বলি হয়। এই মিত্র পরিবারে মহালয়ার পরের দিন থেকে নহবতের আসর বসে। দশমীর দিন সদর পুকুরে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়। এখন আর সেই জমিদারি নেই। তবে, মন্দিরের নামে তিনটি পুকুর রয়েছে। তাতে মাছচাষের আয় থেকে পুজোর খরচ চালানো হয়।
মেদিনীপুরের নন্দীবাড়িতে এখন পুরনো ঐতিহ্য মেনেই ওড়িশা থেকে পুরোহিত এনে দেবীর পুজো করা হয়। নন্দীবাড়ির কনিষ্ঠতম সদস্য সৌম্যদীপ নন্দী বলেন, সাড়ে তিনশো বছর আগে রামচাঁদ নন্দী ওড়িশা থেকে মেদিনীপুরে এসে নন্দীপাড়ায় এই পুজো শুরু করেছিলেন। এখনও সেই নিয়ম নীতি মেনে পুজো হয়ে আসছে। দশমীর দিন সিঁদুর খেলায় পরিবারের মহিলা সদস্যরা মেতে ওঠেন। ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় মন্দিরে নবপত্রিকা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুজোর সময় পরিবারের যাঁরা বাইরে থাকেন, তাঁরা সকলে বাড়ি ফিরে আসেন। বাড়ির সদস্যরা পুজোর পাঁচদিন পাতপেড়ে খাওয়াদাওয়া করি। কংসবতী নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
অন্যদিকে, মেদিনীপুরের মানিকপুর চিনাগলিতে স্বপ্নাদেশ পেয়ে ১৯৩৭ সালে পশুপতিনাথ শাস্ত্রী পুজো শুরু করেছিলেন। সেই নিয়ম মেনেই এখনও এই পরিবারে পুজো হয়ে আসছে। এখানে দেবী দশভুজা নয়, অষ্টভূজা। সাধারণত বাঁদিকে অসুর থাকে। এই পরিবারের বিগ্রহে ডানদিকে অসুর থাকে। তন্ত্রক্ত বিধি মেনে পুজো হয়। পরিবারের বর্তমান সদস্য দুর্গাপ্রসাদ ভট্টাচার্য বলেন, আগে নবমীর দিন ছাগল বলি হতো। এখন তা উঠে গিয়েছে। এখন কুমড়ো, আখ বলি হয়। আর অষ্টমীর দিন মাকে শোল মাছ পোড়া, পান্তাভাতে দই দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়। সেই ভোগ ভক্তদের দেওয়া হয়। নবমীর দিন শতাধিক মানুষ অন্নভোগ খান। তবে, এই পরিবারের দেবীর নিত্যপুজো হয়। দশমীতে প্রতিমা নিরঞ্জন হয় না। বারো বছর অন্তর কাঠামো সহ বিগ্রহ পরিবর্তন করে নতুন বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুরনো ঐতিহ্য মেনে পুজো হয় গোয়ালতোড়ের এড়িয়ামারা গ্রামের ঘোষবাড়িতে।
পরিবারের প্রবীণ সদস্য দেবীপ্রসাদ ঘোষ ও শিশিরকুমার ঘোষ বলেন, এবার আমাদের পুজো ১৪৫ বছরে পড়ল। নবমীর দিন আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের লোকজনকে মায়ের প্রসাদ খাওয়ানো হয়। রাতে যাত্রা এখানের অন্যতম আকর্ষণ।