পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূল কংগ্রেসের মোশারফ হোসেন বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এরাজ্যের কৃষকদের জন্য বিনা পয়সায় শস্যবিমার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। দেশের আর অন্য কোনও রাজ্যে এমনভাবে শস্যবিমা হয় বলে আমার জানা নেই। ২০১৭ সালে জেলা অতিবৃষ্টির জেরে প্রচুর কৃষকের খেতের ফসল নষ্ট হয়। যেসব কৃষক বিমার আওতায় ছিলেন তাঁরা সকলেই ক্ষতিপূরণ পাবেন। এতে গরিব কৃষকরা চাষবাসে আরও বেশি করে উৎসাহিত হচ্ছেন। যদিও এই বিমার টাকা পাওয়ার আগে ওই সময়েই রাজ্য সরকার জরুরিভত্তিতে কৃষকদের কিছু আর্থিক সাহায্য করেছিল।
উত্তর দিনাজপুর জেলার উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) মীর ফরহাদ হোসেন বলেন, জানুয়ারি মাস থেকে বিমাকৃত টাকা ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। জেলায় ঋণ নেওয়া প্রায় ৭৫ হাজার কৃষককের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে বাংলা ফসল বিমার টাকা ঢুকেছে। এখনও পর্যন্ত কালিয়াগঞ্জ, রায়গঞ্জ, ইটাহার ও গোয়াল পোখর-১ ব্লকের প্রায় ১২০০ কৃষক ওই টাকা পেয়েছেন। পর্যায়ক্রমে সব জায়গার কৃষকই বিমার টাকা পাবেন। এর আগে রাজ্য সরকার স্টেট ডিজাস্টার রিলিফ ফান্ড থেকে ১০১ কোটি টাকা এই জেলার কৃষকদের চেকের মাধ্যমে বিলি করেছে। সেসময় ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮২৯ জন কৃষক ক্ষতিপূরণ পেয়েছিলেন।
উত্তর দিনাজপুর জেলা কৃষিদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলাজুড়ে শস্যবিমার টাকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে গোটা উত্তরবঙ্গেই ভারী বৃষ্টিপাত হয়। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে ওই বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই জেলার প্রচুর কৃষিজমি জলের তলায় চলে গিয়েছিল। সেসময়ে জমিতে চাষ করা ধান, পাট, ডালশস্য নষ্ট হয়ে যায়। কৃষিদপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী, ওই বৃষ্টিতে জেলার প্রায় দেড় লক্ষ কৃষিজীবী মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন। রাজ্য সরকার সেসময় নিজস্ব তহবিল থেকে চাষিদের কিছু আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে পাশে দাঁড়ায়। ওই ক্ষতিপূরণের অর্থ দিয়ে চাষিরা কিছুটা হলেও সুবিধা পান। অনেকেই ওই টাকায় নতুন করে চাষবাস শুরু করেন। কিন্তু সকলের পক্ষেই ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি। তাঁরা শস্যবিমার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছিলেন। এবার ওই টাকাই দেওয়া শুরু হয়েছে। যাঁরা শস্যবিমা করিয়ে রেখেছিলেন তাঁদের ফসলের ক্ষতিপূরণ বাবদ অর্থ শীঘ্রই দেওয়া কাজ শুরু হবে বলে সেসময়ে জানানো হয়েছিল। শস্যবিমা নিয়ে রাজ্য সরকার কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন সময়ে নানারকম প্রচারমূলক কর্মসূচি নেয়। তারই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার ঋণ গ্রহণকারী কৃষক এবং ৭৫ হাজার ঋনহীন কৃষক ফসল বিমার ফর্ম পূরণ করেছিলেন। যেসব কৃষকেরা ব্যাঙ্ক থেকে ইতিমধ্যেই ঋণ নিয়েছেন তাঁদের শস্যবিমা স্বাভাবিকভাবেই হয়ে গিয়েছে। কিন্তু যারা ঋণ নেননি তাঁদের নতুন করে ফর্মফিলাপ করিয়ে বাংলা ফসল বিমার আওতাভুক্ত করা হয়। এই বিমার অধীনে আসতে হলে কৃষকদের আলাদা করে কোনও অর্থকরি লাগে না। গরিব কৃষকদের জন্য রাজ্য সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানিকে প্রত্যেক নথিভুক্ত কৃষকের প্রিমিয়াম দিয়ে থাকে। সেই হিসেবে প্রতি হেক্টরে ৬৮ হাজার টাকা বিমাকৃত রাশি ধরা হয়। বিপর্যয়ে ফলে ফসল নষ্ট হয়ে গেলে কৃষকেরা সেই বিমাকৃত রাশির ৭০ শতাংশ টাকা ক্ষতিপূরণ বাবদ পায়। শস্যবিমার মাধ্যমে উত্তর দিনাজপুরের কৃষকদের এখন বিঘা প্রতি প্রায় ৮৫০০ টাকা করে ক্ষতিপুরণ মিলছে। এই জেলার প্রায় ১২০০ কৃষকের জন্য ৮৪ লক্ষ টাকা চুক্তিবদ্ধ বিমা সংস্থার পক্ষ থেকে সম্প্রতি জেলায় চলে এসেছে। সেটাই এখন কৃষকদের দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। কৃষিদপ্তরের দাবি, বেশিরভাগ টাকাই কৃষকদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চলে গিয়েছে। পরবর্তীতে আরাও টাকা এলে ওই টাকাও বাকিদের মিটিয়ে দেওয়া হবে।
২০১৭ সালে উত্তর দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতর জেরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন ইটাহার ব্লকের কৃষকরা। এছাড়াও রায়গঞ্জ ও ইসলামপুর মহকুমায় বিস্তীর্ণ অংশ টানা ১৫ দিন জলের তলায় ছিল। জেলার বিস্তীর্ণ অংশের জমিতে লাগানো ধান, পাট, ডালশস্য নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়াও শাকসব্জিও ওই জলের তলায় থেকে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। উদ্যানপালন দপ্তর থেকে রাজ্যে রিপোর্ট পাঠিয়ে সাময়িকভাবে কিছু ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয়। কৃষিদপ্তরের দাবি, গরিব কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান সেকারণে তাঁদের শস্যবিমার আওতায় আনার জন্য সরকারি স্তরে সবসময়েই প্রচার চলছে। এজন্য দপ্তর বিভিন্ন এলাকায় শিবিরও করছে।