কর্মরতদের ক্ষেত্রে শুভ। উপার্জন ভাগ্য ভালো। কর্মে উন্নতির যোগ আছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা মিলবে। ব্যবসা ... বিশদ
দুপুর থেকে রাত—দীর্ঘসময় ধরে এই শব্দগুলিই আছড়ে পড়ল মাঠে। মাঠ বলতে হায়দরাবাদের লালবাহাদুর স্টেডিয়াম। সেখানেই বিকালে সভা করার কথা তেলুগু সুপারস্টার পবন কল্যাণের। সেই সভামুখী কাতারে কাতারে ভিড়। সভা কখন শুরু হবে? কেউ বললেন, বিকেল চারটে। কেউ বা জবাব দিলেন, ছ’টাও হতে পারে। অর্থাৎ পবন কল্যাণ ঠিক কখন স্টেডিয়ামের মঞ্চে হাজির হবেন, তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। তিনি সশরীরে আসবেন। হাত নাড়বেন। কথা বলবেন। এটাই দারুণ রোমহর্ষক ব্যাপার। দুপুর তিনটেতেই তাই স্টেডিয়াম ভিড়ে ঠাসা। জমায়েতের সিংহভাগ যুবক। প্রায় সবার মাথায় সাদা কাপড়। তাতে গ্লাস চিহ্ন। ওই প্রতীকেই এবার ভোটে লড়ছেন পবন কল্যাণ। সেই কাপড়েই আঁকা তাঁর ছবি। মাঠজুড়ে তাঁর মুখ আঁকা সাদা পতাকা। মাঠে আসার জন্য অবশ্য টিকিট মাস্ট। কারও হাতে ভিআইপি, আবার কারও হাতে ভিভিআইপি টিকিট। সুপারস্টারকে কাছ থেকে দেখার বাসনা সবার। তাই ভুল টিকিটের ফাঁক গলে কেউ ভুল পথে মাঠে চলে গেল কি না, সেদিকে কড়া নজর কয়েকশো পুলিসের। যেন মনে হবে জনসভা নয়, আইপএলের ম্যাচ চলছে শহরে।
দুপুর তিনটেও হয়নি, তারস্বরে মাইকে গান বাজতে শুরু করল স্টেডিয়ামে। একের পর এক গায়ক গায়িকা তেলুগু ভাষায় এমন সব গান ধরলেন, যা শুনলে তালে তালে যে কারও কোমর দুলতে বাধ্য। সেসব গানের সঙ্গে এমনভাবে বাজনদার বাজনা বাজাতে লাগলেন, বুকে এসে ধাক্কা দিল আওয়াজ। নাচ এবং গানের নাটকীয়তা এমনই, যেন এখনই এসে পড়বেন নায়ক। পুলিস ও কম্যান্ডোদের তৎপরতা, স্টেজ আগলানো ও নেতাদের ব্যস্ততার হিড়িক প্রতি মুহূর্তে বুঝিয়ে দিতে লাগল, তিনি আসছেন। কিন্তু ওইটুকুই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। উত্তেজনা বাড়তে লাগল। কিন্তু এলেন না পবন। তাতে কী! তিনি যে না থেকেও আছেন। অনেকগুলো জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠছেন নানা মুহূর্তে। আর জনতার একটাই চিৎকার— পবন স্যার সিএম। প্রায় সবার হাতে ধরা একটা করে পোস্টার। সেখানেও লেখা ওই একই কথা। অবশেষে যখন সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ মঞ্চে এলেন, পবন কল্যাণকে তখন সিএম বা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখার বাসনা গোটা স্টেডিয়ামে চিৎকারে হয়ে আছড়ে পড়ছে। স্টেডিয়ামের ফ্লাডলাইটে উজ্জ্বল জনতার উৎসাহ। যতক্ষণ মঞ্চে রইলেন, চলল ওই একই স্লোগান... পবন স্যার সিএম। এবার অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নাইডুর দল তেলুগু দেশমকে হারিয়ে তাঁর দল জনসেনা পার্টি ক্ষমতায় আসবে কি না, তা ভবিষ্যৎ বলবে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে আগাম যে উন্মাদনা বয়ে গেল হাজার হাজার জনতার অভিব্যক্তিতে, তা মনে রাখার মতো।
দক্ষিণের আরও এক সুপারস্টার চিরঞ্জীবীর ভাই পবন রাজনীতিতে আসেন কয়েক বছর আগে। দাদার সঙ্গেই আঞ্চলিক দল করতেন তিনি। কিন্তু চিরঞ্জীবী কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যাওয়ায় তিনি দাদার সঙ্গ পরিত্যাগ করেন। ২০১৪ সালে সরাসরি ভোটে না দাঁড়ালেও চন্দ্রবাবু নাইডু এবং বিজেপির সমঝোতায় তিনি সঙ্গ দিয়েছিলেন। কিন্তু নানা দাবিদাওয়া ও সমাজের নিচু শ্রেণির বঞ্চনাকে সামনে রেখে তিনি দূরত্ব বাড়ান বিজেপি ও তেলুগু দেশমের সঙ্গে। এবার তিনি সরাসরি নেমেছেন ভোটযুদ্ধে। তাঁর জনসেনা পার্টির সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছে সিপিআই, সিপিএম এবং মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির। অন্ধ্রে লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের পাশাপাশি তিনি তেলেঙ্গানাতেও এমপি পদে প্রার্থী দিয়েছেন কয়েকটি আসনে। তবে তিনি নিজে অন্ধ্রে বিধানসভা প্রার্থী। তাই ফোকাস মূলত বিধানসভা। চন্দ্রবাবু নাইডু এবার কৃষক ও শ্রমিক সম্প্রদায়ের ভোট পাবেন না ধরে নিয়েই নির্বাচনে এগচ্ছে পবনের জনসেনা। মায়াবতীও বলতে শুরু করেছেন, এবার নতুন মুখ্যমন্ত্রীর নাম পবন কল্যাণ। মানুষ মনেপ্রাণে যে সে কথা বিশ্বাস করছে, তা বোঝা যায় স্টেডিয়ামের উন্মাদনা দেখে। কখনও কাঁধ ঝাঁকিয়ে বা চুলে আঙুল বুলিয়ে যখন নায়কোচিত কণ্ঠে রাজনীতির কথা বলেছেন মঞ্চে দাঁড়িয়ে, উত্তেজনায় কেঁপেছে জনতা। নিছক আবেগেই তাঁকে আগেভাগে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসিয়ে রাখতে চাইছে তারা। হোক না চন্দ্রবাবু এ রাজ্যের পোড় খাওয়া রাজনীতিক। করুন না তিনি হায়দরাবাদকে হাইটেক সিটি। তাও এবার এই স্টেডিয়াম ঘিরে বাজছে অন্য সুর। ভোট নিয়ে আপাত নিরীহ হায়দরাবাদ শহর বুঝিয়ে দিচ্ছে, রাজনীতিতে সত্যিই সুপারস্টারের বিকল্প নেই। চন্দ্রবাবুকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তেও।