নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: এ রাজ্যে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা দ্রুতহারে কমছে। বিজেপি সেই ফাঁকা জায়গায় ঢোকার চেষ্টা করছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের একের পর এক জনবিরোধী নীতি, বিভাজনের রাজনীতি এবং গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য মানুষ বিজেপি’র উপরও ক্ষুব্ধ। ফলে রাজ্যের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটা ফাঁকা জায়গা তৈরি হচ্ছে। কত দ্রুত সেই ফাঁকা জায়গাটা আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ ও কর্মসূচি দিয়ে ভরাট করতে পারছি— সেটাই এখন আমাদের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ। প্রয়াত সিপিএম নেতা নিরুপম সেনের স্মরণসভায় কলকাতা প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবনে দলীয় নেতা-কর্মীদের বললেন দলের রাজ্য সম্পাদক, পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র। তিনি বলেন, তৃণমূল এবং বিজেপি যে একই মুদ্রার দু’পিঠ— তা এখন দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট। সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে তাঁকে বাঙালি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। সেই কথা উল্লেখ করে মিশ্র বলেন, আরএসএস-এর অনুমোদন না থাকলে ওঁর পক্ষে এই কথা বলার সাহস হত না। ফলে সব কিছুই স্পষ্ট এখন। রাজনৈতিক তত্ত্বে দখল এবং সাংগঠনিক দক্ষতা— দুইয়ের মিশেলেই একজন প্রকৃত কমিউনিস্ট নেতা তৈরি হন। নিরুপমবাবু সেরকম নেতাই ছিলেন বলে তাঁকে স্মরণ করেন তাঁর এক সময়ের সতীর্থ। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির কোন প্রেক্ষাপটে ২০০৮ সালে এ রাজ্যের বামফ্রন্ট সরকার সিঙ্গুর সহ সারা রাজ্যে শিল্পায়নের পথে হেঁটেছিল, এদিন তা ফের ব্যাখ্যা করেন সূর্যকান্তবাবু।
এদিন স্মরণ অনুষ্ঠানের মুখ্য বক্তা ছিলেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। তিনি এদিন সাফ জানিয়ে দেন, এ রাজ্যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে আসন সমঝোতা বা জোট হবে কি না, সেই ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেবে রাজ্য নেতৃত্ব। কারণ নির্বাচনের আগে সারা দেশে কোনও ঐক্যবদ্ধ জোট হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের লক্ষ্য, যেখানে যতটা সম্ভব, বিজেপি-বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় আনা। এ রাজ্যে আমাদের লক্ষ্য, তৃণমূল, বিজেপি বিরোধী ভোটকে এক জায়গায় আনা। এদিন সীতারামকে সরাসরি প্রশ্ন করা হয়, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চাইলে আপনি কেন দিল্লিতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে কথা বলছেন না এ ব্যাপারে? সেই প্রশ্নের জবাবেই তিনি জোটের বল ফের রাজ্য কমিটির কোর্টেই পাঠিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, দেশের এখন নেতা নয়, নীতি চাই। সেই নীতির ভিত্তিতেই দেশ চালিত হবে। উত্তরপ্রদেশে বিএসপি এবং এসপি’র জোটকে তিনি ইতিবাচক ঘটনা বলে বর্ণনা করেন। তাঁর আশ্বাস, বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী ভোটকে ভাগ না হতে দেওয়ার জন্য নানা উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এটা তার শুরু বলা চলে। দেখতে থাকুন, আরও অনেক কিছুই ঘটবে। এবং ২০১৯ সালে একটি অ-বিজেপি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসবে।