সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: স্পর্শকাতর এলাকা, কারা গোলমাল পাকাতে পারে তাঁদের চিহ্নিতকরণ, অশান্তি পাকানোর পুরনো অভিযোগ আছে এমন দাগীদের ধরপাকড় ও টানা নজরদারির কাজ চলছে সর্বত্র। এই কাজে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় এখনও পর্যন্ত প্রায় ১২ হাজার ব্যক্তিকে নজরদারির আওতায় রাখা হয়েছে। পুলিসের পরিভাষায় একে বলে ‘বাউন্ড ডাউন’। অর্থাৎ চিহ্নিত করা ব্যক্তিরা যদি কোনও অশান্তি করার চেষ্টা করেন তৎক্ষণাৎ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হবে। সূত্রের খবর, যাঁদের বাউন্ড ডাউন করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে শাসকদলের বড় সংখ্যক নেতা-কর্মীও রয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে পূর্বে কখনও না কখনও গোলমাল করার অভিযোগ উঠেছিল। তার ভিত্তিতে মামলাও রুজু হয়েছিল। এদের প্রত্যেককেই ১০৭ ও ১১০ ধারায় সমন দেওয়া হয়েছে। পুলিসের একটি সূত্র বলছে, কমিশনের নির্দেশ রয়েছে যে, দাগী অপরাধী বা গোলমাল পাকাতে পারে এমন লোকজন ভোটারদের যাতে হুমকি দেওয়া ইত্যাদি কাজ না করে, তার জন্য আগাম ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজনীতির ঊর্ধ্বে গিয়ে এই কাজ করতে হবে বলে কমিশন স্পষ্ট জানিয়েছিল। সেই নির্দেশ মতোই রাজনৈতিক রং না দেখেই যাঁদের বিরুদ্ধে পূর্ব নির্বাচনগুলিতে অশান্তি তৈরির অভিযোগ বা মামলা রয়েছে তাঁদের প্রত্যেককেই এভাবে শর্তসাপেক্ষে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। এখনও এই জেলায় নির্বাচনের মাসখানেক বাকি। ফলে বাউন্ড ডাউনের সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়বে বলে মনে করছেন পুলিসের পদস্থ কর্তারা। তিনটি পুলিস জেলা সূত্রে খবর, ক্যানিং মহকুমা, ডায়মন্ড হারবারের একটি অংশ, বারুইপুর, কুলতলি ইত্যাদি থানা এলাকায় এই ধরনের গোলমাল পাকানোর অভিযোগ থাকা লোকজনের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি।
জানা গিয়েছে, সোনারপুরের এক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা যিনি এক সময় গ্রামীণ এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতেন তাঁর বিরুদ্ধেও ১০৭ ধারায় বন্ড কাটা হয়েছে। সোনারপুর গ্রামীণ এলাকার এক বিজেপি নেতাকেও এইভাবে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে। অন্যদিকে ক্যানিং মহকুমায় গোলমাল পাকাতে পারে এমন প্রায় হাজার খানেক লোকজনকে নজরদারির মধ্যে রাখা হয়েছে বলে খবর। এখানেও বেশিরভাগ শাসক দলের নেতা-কর্মী রয়েছেন। পুলিসের বক্তব্য, এই প্রক্রিয়া এখনও চলবে। দিনের শেষে কমিশনের কাছে বাউন্ড ডাউন নিয়ে রিপোর্ট পাঠাতে হয়। তাতে কোনওভাবে এই বিষয়ে ছাড় দেওয়া যাবে না। তৃণমূলের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিরোধী পক্ষের এমন বহু লোকজন রয়েছে যাঁরা এলাকায় অশান্তি করে পুলিসের খাতায় নাম লিখিয়েছিলেন। তাঁদের কাছেও বাউন্ড ডাউন করার চিঠি যাচ্ছে। আরও একটি তথ্য বলছে, রাজনৈতিক গোলমাল ছাড়াও যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে সাধারণ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে তাঁরাও রেহাই পাননি পুলিসের হাত থেকে। এমন অনেককেই আগাম শর্ত দিয়ে নজরদারি মধ্যে রেখে দেওয়া হয়েছে।