কর্মরতদের সহকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা ও ব্যবহারে সংযত থাকা দরকার। ... বিশদ
বেঙ্গালুরু, ১৯ জানুয়ারি: তারকারা বরাবরই পছন্দ করেন বড় মঞ্চে জ্বলে উঠতে। আর সেই কারণেই হয়তো রবিবারের চিন্নাস্বামীকে বেছে নিয়েছিলেন রোহিত শর্মা। প্রথম দু’টি ম্যাচে নামের প্রতি সেভাবে সুবিচার করতে পারেননি ‘হিটম্যান’। নিন্দুকেরা অনেক কথা বলছিলেন। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সিরিজের নির্ণায়ক ম্যাচে দুরন্ত শতরান হাঁকিয়ে নায়ক সেই রোহিতই। দুরন্ত ৮৯ রানের ইনিংস উপহার দিলেন বিরাট কোহলিও। পেলেন সিরিজের সেরা পুরস্কার। রোহিত-বিরাটের যুগলবন্দিতে অস্ট্রেলিয়াকে তৃতীয় ম্যাচে ৭ উইকেটে দুরমুশ করে ‘টিম ইন্ডিয়া’ ২-১ ব্যবধানে সিরিজে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করল।
ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অ্যারন ফিনচ, ডেভিড ওয়ার্নারদের দাপটে ভারত ১০ উইকেটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর ‘গেল গেল’ রব উঠেছিল। মনে হচ্ছিল, গত কয়েক বছর ধরে দেশে-বিদেশ ঘুরে কোহলিরা যে সাফল্য অর্জন করেছেন, সবই যেন পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনা। বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি অবশ্য বলেছিলেন, ‘কোহলিরা ঘুরে দাঁড়াবেই।’ মহারাজের ভবিষ্যদ্বাণী মিলে গেল। মুম্বইয়ের ব্যর্থতা ভুলে রাজকোটে রাজকীয় জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল ‘মেন ইন ব্লু’। রবিবাসরীয় রাতে বিরাটদের সাফল্যে বাগিচা শহর বেঙ্গালুরু হয়ে উঠল রঙিন।
চোট শঙ্কা নিয়েই এদিন মাঠে নেমেছিল ভারত। টস ভাগ্য সাথও দেয়নি ক্যাপ্টেন কোহলির। তার উপর ফিল্ডিং করতে গিয়ে ফের আঘাত পান শিখর ধাওয়ান। এক্স-রে করতে যেতে হয় তাঁকে। তাই ২৮৭ রানের টার্গেট তাড়া করতে ওপেনিং জুটিতে রোহিতের সঙ্গী হন লোকেশ রাহুল। গত তিনটি ম্যাচে লোকেশ তিনটি পজিশনে ব্যাট করে সফল হয়েছিলেন। এদিন অবশ্য ১৯ রানেই তাঁকে থামতে হয়। ভুলের পুনরাবৃত্তি না ঘটিয়ে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন বিরাট কোহলি। দ্বিতীয় উইকেটে রোহিত-কোহলি জুটি ১৩৭ রান যোগ করে দলের জয় প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেন। ১১০ বলে শতরান পূর্ণ করার সঙ্গে ওয়ান ডে ফরম্যাটে ৯ হাজার রানের মাইলস্টোনও স্পর্শ করেন ‘হিটম্যান’। ওয়ান ডে ফরম্যাটে তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ২১৭টি ইনিংসে এই নজির গড়লেন রোহিত। ভেঙে দিলেন সৌরভ গাঙ্গুলি, শচীন তেন্ডুলকরের রেকর্ড। এই তালিকায় শীর্ষে আছেন বিরাট। ১৯৪ ইনিংস খেলে তিনি ওয়ান ডে’তে ন’হাজার রান পূর্ণ করেছিলেন।
রোহতি আটটি চার ও ছ’টি ছক্কার সাহায্যে ১১৯ রানে আউট হওয়ার পর ব্যাটন তুলে নেন বিরাট। একটা সময় মনে হয়েছিল, তিনি আরও একটি শতরান লিখবেন নামের পাশে। কিন্তু ৮৯ রানে হ্যাজলউডের বলে তিনি বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন। চাপমুক্ত হয়ে ব্যাট করেছেন শ্রেয়াস আয়ারও। ৩৫ বলে ৪৪ রান করে অপরাজিত থাকেন তিনি। মণীশ পাণ্ডে (৮) বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ১৫ বল বাকি থাকতেই দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের কাজটা অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিলেন বোলাররা। নতুন বলে এক প্রান্ত দিয়ে যশপ্রীত বুমরাহ রান আটকে রাখেন (১০-০-৩৮-০)। আর এক দিক দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ে ধস নামান মহম্মদ সামি (১০-০-৬৩-৪)। দুই পেসারের যুগলবন্দিতে শুরুতেই বেশ চাপে পড়ে যায় অজিরা। সামির দুরন্ত ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হন ডেভিড ওয়ার্নার (৩)। অ্যারন ফিনচ ১৯ করে রান আউট হয়ে মাঠ ছাড়েন স্মিথের ভুলে। আসলে, সিঙ্গলস নেওয়ার জন্য কলটা করেছিলেন স্মিথই। নন স্ট্রাইকার এন্ডে প্রায় পৌঁছে গিয়েছিলেন ফিনচ, তখন স্মিথ তাঁকে ফিরে যেতে বলেন। ফিনচ ফেরেন একেবারে সাজঘরে।
যদিও ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করেছেন স্মিথ। গত ম্যাচে অল্পের জন্য তিনি সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেছিলেন। এদিন তিনি তৃতীয় উইকেটে লাবুশানেকে নিয়ে ১২৭ রান তোলেন। তখন মনে হয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার স্কোর তিনশো টপকে যাবে। ঠিক তখনই জাদেজার বলে লাবুশানের (৫৪) দুরন্ত ক্যাচ ধরে বিপক্ষের পালের হাওয়া কেড়ে নেন কোহলি। ওই ক্যাচটা ধরে তিনি কতটা তৃপ্ত, তা ফুটে ওঠে তাঁর শরীরী ভাষায়। মিচেল স্টার্ককে পাঁচ নম্বরে নামিয়ে ফাটকা খেলতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কাজে দেয়নি। ৩২তম ওভারেই জাদেজা স্টার্ককে (০) ফেরান। অ্যালেক্স কেরিকে (৩৫) আউট করেন কুলদীপ। মাত্র ৪ রান করেন অ্যাস্টন টার্নার। ডেথ ওভারে বরাবরই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেন সামি। এদিনও তাঁর প্রমাণ পাওয়া গেল। চারটি উইকেটের মধ্যে তিনটি উইকেটই তিনি পেয়েছেন শেষ দিকে। তাঁর বলে বাউন্ডারি লাইনের ধারে স্মিথের ক্যাচ অসাধারণ দক্ষতায় তালুবন্দি করেন শ্রেয়াস। ১৩২ বলে ১৪টি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারি দিয়ে সাজানো স্মিথের দর্শনীয় ইনিংসের অবসান ঘটে ১৩১ রানে।