বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে আজকের দিনটা শুভ। কর্মক্ষেত্রে আজ শুভ। শরীর-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। লটারি, শেয়ার ... বিশদ
গতকাল কারাওয়াল নগরে বাড়ির ছাদ থেকে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের উপর অ্যাসিড হামলা চালানো হয়। আহত হয়ে জিটিবি হাসপাতালে শতাধিক। কয়েকজন ভর্তি আছেন এলাকার বেসরকারি হাসপাতালে। সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক সাংবাদিকও। গোকুলপুরী টায়ার মার্কেটে জ্বলছে আগুন। বন্ধ এলাকার মেট্রো স্টেশন। জাফরাবাদ, মৌজপুর, বাবরপুর, গোকুলপুরী, করদমপুরী, জহুরি এনক্লেভ, কবীরনগর, চান্দবাগ, দয়ালপুর, খাজুরি খাস, ভজনপুরা এলাকার ছবি বদলাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে। হিংসা ছড়াচ্ছে পূর্ব দিল্লিতেও।
গোটা এলাকায় কখনও শুনশান শ্মশানের চেহারা, আবার পুলিস সামান্য আড়াল হতেই গলি, মহল্লা থেকে লাঠি হাতে রাস্তায় নেমে আসছে উত্তেজিত জনতা। উঠছে স্লোগান। বাড়ছে হর্ষধ্বনি। উত্তর-পূর্ব দিল্লির কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে যাবতীয় দোকানপাট বন্ধ। ঘরে তালা ঝুলিয়ে এলাকা ছেড়েছেন অধিকাংশ বাসিন্দা। পোড়া গন্ধও পাওয়া যাচ্ছে। জারি করা হয়েছে ১৪৪ ধারা। যমুনা-বিহারের এসপি জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে হিংসা কবলিত এলাকাগুলিতে দেখামাত্রই গুলি করার নির্দেশ জারি করেছে উত্তর-পূর্ব দিল্লির জেলা প্রশাসন। ড্রোনের সাহায্যেও চলছে পরিস্থিতির উপর নজরদারি।
‘জো ভি হো, হট যাইয়ে। গুলি চলেগি।’ সতর্কবার্তা দেওয়া শেষ হতে না হতেই পরের পর ছোঁড়া হল কাঁদানে গ্যাস। প্রাণ হাতে দৌড়ল উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা। লুকিয়ে গেল গলির মধ্যে। এই প্রতিবেদকের পায়ের কাছেও এসে পড়ল কাঁদানে গ্যাসের শেল। মৌজপুর-বাবরপুর মেট্রো স্টেশনের নীচে প্রবল শব্দে ফেটে উঠল অন্য একটি। মৌজপুর চকে গিয়ে পড়ল অন্য একটি। ফাটল এলাকা কাঁপিয়ে। ধোঁয়ার মধ্যেই রাস্তা চিরে চলে গেল দিল্লি পুলিসের জিপ। ভিতরে ঠাসা ব্যাটন আর ফাইবারের ঢাল। মৌজপুর চকে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণকারী ভ্যান। আর তার সামনেই পড়ে রয়েছে পোড়া মোটরবাইক।
অন্যদিকে, জাফরাবাদে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্যেই এসে দাঁড়াল ডিটিসির তিন বাস ভর্তি সশস্ত্র সীমা বল। সাইরেন বাজিয়ে মৌজপুর মেইন রোড দাপিয়ে বেড়াল পুলিস ভ্যান। ঘণ্টা বাজিয়ে ছুটে গেল দমকলের তিনটি ইঞ্জিন। উত্তেজিত জনতা আগুন ধরিয়েছে কারওয়াল নগরে। সেখানেও নামানো হল আধাসেনা। প্রতিবাদে জাফরাবাদে ক্রিসেন্ট স্কুলের সামনে সরব হল সিএএ বিরোধীরা। জুড়লেন হল্লা। তুললেন জাতীয় পতাকা হাতে স্লোগান। আওয়াজ উঠল আজাদির। ব্যারিকেড হটানোর চেষ্টা করছিল বিক্ষোভকারীরা। আমিন মসজিদ থেকে শান্তির বার্তা দিলেও, তা তেমন কাজে দিল না। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে থেকেও উত্তেজিত জনতাকে শাহিনবাগের অনুকরণে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার আবেদন চলল ঘনঘন। কিন্তু সশস্ত্র পুলিস আর নিরস্ত্র জনতার মধ্যে বজায় রইল নার্ভের লড়াই। মুখোমুখি।
এদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের মধ্যেই রাজধানী দিল্লির একটি অংশে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি হওয়ায় অস্বস্তিতে মোদি সরকার। সেই কারণে গতকাল দিল্লি পুলিসের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় ভাল্লা লাগাতার যোগাযোগ রাখলেও আজ মাঠে নামলেন স্বয়ং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এদিন দুপুরে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের নিয়েও বৈঠক করলেন তিনি। ছিলেন দিল্লির পুলিস কমিশনার অমূল্য পাঠকও। প্রায় আড়াই ঘণ্টার বৈঠকে সকলেই প্রায় একবাক্যে শান্তি রক্ষার পক্ষে সওয়াল করেন। এদিন পরিস্থিতি এতটাই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে যে, আধা সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রধারী ওই আধাসেনা নেমেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। সবার আগে সরিয়ে দেয় জমায়েত। জানিয়ে দেয়, দাঁড়িয়ে দেখার কিছু নেই। আগে বাড়িয়ে! বহু মানুষই বলছেন, গত ৩৫ বছরে এমন গোষ্ঠী সংঘর্ষ তাঁরা দেখেননি। শান্ত শহরটা হঠাৎ-ই কেমন যেন অচেনা, অশান্ত হয়ে গিয়েছে।