সংবাদদাতা : কম খরচে বেশি লাভ পেতে চাষিরা মুড়ি আখ চাষে আগ্রহী হলে ভালো লাভ পাবেন। মুড়ি আখ লাগানোর উপযুক্ত সময় মাঘ-ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি। মুড়ি আখ চাষ হল, আগের বছরের আখ কেটে ফেলার পর, সেই আখের গোড়া বা মুড়ি থেকে নতুন ফসল নেওয়া। মুড়ি আখ চাষে প্রথমবার আখ লাগানো থেকে প্রয়োজনে দু’বার পর পর মুড়ি কেটে নিয়ে চাষ করা যেতে পারে। কোনওভাবেই রোগাক্রান্ত জমি ও রোগাক্রান্ত আখ থেকে মুড়ি কেটে মুড়ি আখ চাষ করা যাবে না। এছাড়া পোকায় ক্ষতিগ্রস্ত জমিতে মুড়ি আখ চাষ না করাই ভালো। কৃষি আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মুড়ি ছাঁটাই নিয়ম মেনে করতে হবে। সঠিক পদ্ধতি মেনে জমিতে বসাতে হবে। সারের প্রয়োগ করতে হবে সুষম মাত্রায়। তা হলে মুড়ি আখ চাষে ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মুড়ি আখ চাষ করতে যথাসম্ভব মাটি ঘেঁষে, মাটির আড়াই সেমি গভীরে আখগাছ পুঁততে হবে। যাতে মাটির নীচে আখের চোখ থেকে কল গজাতে পারে। প্রথমবার আখ কাটার পরেই প্রতিটি মুড়িকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এমনভাবে ছাঁটতে হবে, যাতে মাটির উপরে আখের কোনও চোখ না থাকে। জমি তৈরি করতে নিয়ম মেনে আখ কাটার পর জমিতে পড়ে থাকা আখগাছের শুকনো পাতা পুড়িয়ে ফেলতে হবে। লাঙল দিয়ে ভেলি ভেঙে জমি সমান করে নিতে হবে। এর ফলে মাটির নীচে থেকে চারা বেরতে সুবিধা হবে এবং শিকড়ও মাটির গভীরে যেতে পারবে। জমি তৈরির সময় একর প্রতি ২-৩ টন কম্পোস্ট সার বা গোবর পচা ভালো করে জমিতে দিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে হবে। সুপারিশ অনুযায়ী, নিমখোল ব্যবহার করতে পারলে ভালো হয়। মুড়ি আখ লাগানোর পর যেসব জায়গায় কল শুকিয়ে যাবে বা কল মোটেই বের হয়নি, সেইসব জায়গায় আবার মুড়ি আখের নতুন টুকরো বসিয়ে ফাঁক পূরণ করে দিতে হবে।
মুড়ি আখের ফলন পাওয়া যায় ১০-১২ মাসের মাথায়। সে কারণে জমির টানের উপর নির্ভর করে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। সেচ দেওয়ার পর কিংবা বৃষ্টি হলে অতিরিক্ত জল জমি থেকে বের করে দিতে হবে। জমিকে সবসময় আগাছামুক্ত রাখা জরুরি। অতিরিক্ত বৃষ্টি বা ঝড় হলে আখগাছ পড়ে গিয়ে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। মুড়ি আখ চাষে জৈব, জীবাণুসার, সালফার ও অনুখাদ্য প্রয়োগ করা প্রয়োজন। রাসায়নিক অর্থাৎ এনপিকে হিসেবে ২৯ কেজি নাইট্রোজেন, ৪৪ কেজি ফসফেট ও ১১ কেজি পটাশ একর প্রতি প্রথমে গাছের গোড়ায় প্রয়োগ করতে হবে। প্রথম সার প্রয়োগের ৪৫ দিন পরে ২৯ কেজি নাইট্রোজেন ও ২২ কেজি পটাশ প্রথম চাপান হিসেবে এবং ২৯ কেজি নাইট্রোজেন ও ১১ কেজি পটাশ দ্বিতীয় চাপান হিসেবে আরও ৪৫ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। তা হলেই ভালো উৎপাদন পাওয়া যাবে।