বেশি বন্ধু-বান্ধব রাখা ঠিক হবে না। প্রেম-ভালোবাসায় সাফল্য আসবে। বিবাহ যোগ আছে। কর্ম পরিবেশ পরিবর্তন ... বিশদ
হ্যাঁ। আমার জন্ম, বড় হয়ে ওঠা, পড়াশুনো— সব কলকাতায়। আমার যখন চার বছর বয়স মা হঠাৎ মারা যান। আমরা দু’বোন। আমি ছোট। বাবা ও পিসি আমাদের মানুষ করেন। তখন বেলগাছিয়ায় থাকতাম। আমার মা খুব ভালো নাচতেন। প্রখ্যাত অভিনেতা প্রয়াত কালী ব্যানার্জী মাকে অভিনয়ের কথা বলেছিলেন। তরুণ মজুমদারের ছবিতে মা একটা ভালো রোলও পেয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত করা হয়নি। তাই রক্তের একটা ব্যাপার হয়তো আছে। গান, অভিনয়, পরিচালনা এসবের প্রতি আগ্রহ সম্ভবত মায়ের কাছ থেকেই পাওয়া।
কোথায় পড়াশুনো?
বউবাজারের লরেটোতে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস টুয়েলভ। স্কুলের নাটকে নিয়মিত অভিনয় করছি। ‘মার্চেন্ট অব ভেনিস’-এ শাইলক হয়েছিলাম। ইন্টার স্কুল ড্রামা কম্পিটিশনেও যোগদান করেছি। নাটকের প্রতি ক্রমশ আকর্ষণ বাড়তে লাগল। এরকমই সময়ে গানও গাইছি। তখন ক্লাস এইটে পড়ি। ‘ও আমার দেশের মাটি’- এই দেশাত্মবোধক গানটি গেয়ে স্কুলে গানের কম্পিটিশনে প্রথম হয়েছিলাম।
গানের প্রথাগত শিক্ষালাভ কার কাছে?
ক্ল্যাসিকাল শিখেছিলাম শ্রদ্ধেয় সুনীল ভট্টাচার্যের কাছে। কিরানা ঘরানা। আমার দিদি রূপরেখাও ক্ল্যাসিকাল শিখেছে। আমি রবীন্দ্রসঙ্গীতও শিখেছি।
গানের জন্য পড়াশুনোর ক্ষতি হয়নি?
পড়াশুনোর ব্যাপারে কখনও অমনোযোগী হইনি। বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে জুলজিতে গ্র্যাজুয়েশন করেছি। তারপর কম্পিউটার ট্রেনিং। চাকরি করতে করতে এমবিএ করলাম। সেইসঙ্গে গানটাও চালিয়ে গিয়েছি। ২০০০ সালে প্রথম স্টেজ পারফরমেন্স রবীন্দ্রসদনে। আধুনিক গান গেয়েছিলাম। শিশিরমঞ্চেও গানের অনুষ্ঠান করেছি। ফ্রান্স ও ইংল্যান্ডেও ছিলাম কিছুদিন। তখন ছোট ইলেকট্রনিক তানপুরায় রেওয়াজ করতাম।
আপনার গানের অ্যালবামও তো বেরিয়েছে?
গাথানি রেকর্ডস থেকে আটটা গানের একটা সিডি বেরিয়েছিল। নাম ‘ছোট্টবেলায়।’ ছোটদের গান। কসমিক হারমোনি থেকে রোমান্টিক গানের সিডি ‘পথে ফেলে’। কথা ও সুর রাজেশ রায়। এই অ্যালবামের ‘নীল পাখি’ গানটির জন্য ২০১৬ সালে হরিয়ানা ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা গায়িকার পুরস্কার পেয়েছিলাম।
গানের জগৎ থেকে অভিনয়ের জগতে এলেন কী করে?
আমি কিছুদিন ‘চার্বাক’ নাট্যগোষ্ঠীতে ছিলাম। শ্রদ্ধেয়া চন্দ্রা দস্তিদারের কাছে অভিনয় শিখেছি। পরিচালক বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় আমায় যোগাযোগ করিয়ে দেন পরিচালক মনোজ মিসিগানের সঙ্গে। মনোজ তাঁর ‘হ্যালো কলকাতা’ ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছিলেন। আমি অভিনয় করলাম। শতরূপা সান্যালের ‘যতীন দাস’ ডকু-ফিচারেও অভিনয় করেছিলাম। তারপর পরিচালক সুশান্ত পালচৌধুরির ‘হৃদয়ের একূল ওকূল’, ‘আজও দু’চোখে তুমি, ‘অপরাজিতা তুমি’, ‘হৃদয়ের শব্দ’ এইসব ছবিতে প্রধান চরিত্রে কাজ করেছি। কলকাতা দূরদর্শনের ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ ধারাবাহিকে সৌদামিনীর ভূমিকায় ছিলাম।
অভিনয়ের কোনও স্মরণীয় অভিজ্ঞতা?
শ্রদ্ধেয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে অভিনয়ের কথা ভুলতে পারি না। ‘হৃদয়ের একূল ওকূল’ ছবিতে উনি আমার দাদু হয়েছিলেন। এত বড় অভিনেতা। খুব নার্ভাস ছিলাম। যেভাবে সৌমিত্র আঙ্কেল আমার সঙ্গে সহযোগিতা করেছেন ভাবতেও পারি না। সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও খুব ভালো।
তারপর?
মেন স্ট্রিম ছবিতে কাজ করতে করতে মনে হল, যদি ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে থেকে নতুন কিছু করা যায়। পরিচালনার স্বপ্ন দেখা তখন থেকেই শুরু।
শুনলাম আপনার প্রথম ছবিই উচ্চ প্রশংসিত হয়।
হ্যাঁ। প্রথম ছবির নাম ‘পরি’। আমারই লেখা গল্প। অভিনয়ও করেছিলাম। একটি বাচ্চা মেয়ের ব্রেন টিউমার। অপারেশন করিয়ে তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য এক মায়ের লড়াই। ২০১৫ সালে গোয়া ইন্টারন্যাশনাল শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ছবিটি দেখানো হয়। সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার নিয়েছিলাম গোয়ার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী লক্ষ্মীকান্ত পারসেকরের হাত থেকে। এরপর করলাম ‘মাই লিটল ক্যান্ডেল’। মা-বাবার মনোমালিন্যের প্রভাব তাদের সন্তানের ওপর কীভাবে পড়ে তা নিয়েই কাহিনী। পুনে চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছিলাম।
আপনার ‘লীলা’ ছবিটিও তো প্রচুর প্রশংসা পেয়েছে।
সেরিব্রাল পালসিতে আক্রান্ত এক যুবতীর জীবনের করুণ কাহিনী নিয়ে ছবি। নানা ধরনের নিউরো সমস্যা নিয়েই মেয়েটি বেঁচে আছে। আমারই লেখা গল্প। মেয়েটির চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সত্যিই এক অন্য ধরনের অনুভূতি হয়েছিল আমার। কলকাতা ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল (২০১৬) ছবিটি দেখানো হয়েছিল। আরও কয়েকটি ফেস্টিভ্যালেও দেখানো হয়। এ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর মোট ৪টে পুরস্কার পেয়েছি। কলকাতায় ইন্ডিয়ান শর্ট ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল দ্বিতীয় সেরা ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয়। সেরা এডিটিং-এর পুরস্কারও পায়।
আপনি তো ইংরেজিতেও ছবি করেছেন।
২০১৭ সালে তৈরি এই ন্যারেটিভ ডকুমেন্টারির নাম ‘ইট্স আ ফ্যাক্ট।’ একটি মেয়ে জীবনে অনেক কিছু পেয়েও একসময় আত্মহত্যা করতে যায়। শেষপর্যন্ত একটি বাচ্চা ছেলে মেয়েটির হাত ধরে বলে— ‘দিদি তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমার বাবা বলে জীবনে কখনও আশা ছাড়তে নেই। তুমি আমার বাড়িতে এসো।’ এই ছেলেটির বাবা প্রতিবন্ধী। ওইটুকু ছেলের কথা মেয়েটিকে নাড়িয়ে দেয়। আর আত্মহত্যার কথা ভাবে না মেয়েটি।
নিজের লেখা গল্প নিয়ে একের পর এক ছবি করছেন। উৎসাহ পান কোথা থেকে?
আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকেই গল্প উঠে আসে। গল্প আমাদের আশপাশে ঘোরে। আবার আমার ভেতরের কষ্টটাই কখনও গল্প হয়ে ধরা দেয়। অনেকের মুখে একসময় শুনেছি— ‘এটা পারছ না। এটা হবে না।’ চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম জীবনে কিছু করে দেখাব। তারপর হাতে-কলমে কাজ করতে করতে যেটুকু শিখেছি। চাকরিটা ঠিক রেখে পরিচালনা ও অভিনয় দুটোই করে চলেছি।
আমার মেয়ে আরাধিতা ক্লাস নাইনে পড়ে। মেয়েও আমাকে খুব উৎসাহ দেয়। ওর ইচ্ছে আমারই মতো ছবি তৈরি করবে। অভিনয় করবে। ছোট ছোট ছবি মোবাইলে শ্যুট করে। এডিট করে।
স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির ভবিষ্যৎ কী?
সত্যি কথা বলতে কি, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির বাজার এখনও তৈরি হয়নি। শুধু ফেস্টিভ্যালেই দেখানোর সুযোগ পাওয়া যায়। যত ভালোই বিষয়বস্তু হোক, স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবির প্রযোজক পাওয়া একটু মুশকিল। তবে ইদানীং অবস্থার সামান্য পরিবর্তন লক্ষ করছি। দু-চার জন প্রযোজক আসছেন যাঁরা শর্ট ফিল্মে টাকা ঢালতে আগ্রহী। দেখি কী হয়।
আপনি তো ক্রিকেটার গৌতম গম্ভীরের হাত থেকে ‘রাইজিং ডিরেক্টর’-এর পুরস্কারও নিয়েছেন।
২০১৬-তে কলকাতার একটি রেডিও চ্যানেল থেকে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের পাঁচ জন মহিলাকে তাঁদের কাজের স্বীকৃতি জানিয়ে পুরস্কৃত করা হয়। সেরিব্রাল পালসি নিয়ে কাজ করার জন্যই এই পুরস্কার পেয়েছিলাম।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
ভালো ভালো ছবি করব। সমাজে ভালো বার্তা যাবে এ ধরনের ছবি। পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি করারও ইচ্ছে আছে। পাশাপাশি অভিনয়ও করব।
পাতার ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে
জন্ম তারিখ: ২০ জুলাই।
ভালো নাম: সুদীপ্তা।
ডাক নাম: রুনা (মা রেখেছিলেন)।
রাশি: বৃশ্চিক।
প্রিয় পরিচালক: সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, মণিরত্নম।
প্রিয় অভিনেতা: মহানায়ক উত্তমকুমার, শাম্মীকাপুর।
প্রিয় অভিনেত্রী: সুচিত্রা সেন, মধুবালা, টাবু।
প্রিয় গায়ক: কিশোরকুমার, মহম্মদ রফি।
প্রিয় গায়িকা: কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, আরতি মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, আশা ভোঁসলে।
প্রিয় ছবি: দীপ জ্বেলে যাই, সাত পাকে বাঁধা, গ্ল্যাডিয়েটর।
হবি: লেখালেখি, গান গাওয়া, ছবি দেখা।
প্রিয় খাবার: চিকেনের যে কোনও প্রিপারেশন।
প্রিয় ফুল: গোলাপ।
প্রিয় ফল: আপেল।
প্রিয় রং: নীল।
অপছন্দ: ভণিতা ও অসাধুতা, নিজেকে জাহির করা।
প্রিয় বন্ধু: আমার মেয়ে।
স্বপ্ন: একদিন পরিচালনার জন্য জাতীয় পুরস্কার পাব।
জীবনের সংজ্ঞা: প্রতিভাকে সঠিক কাজে লাগাতে চাই।
সেরা কমপ্লিমেন্ট: প্রতিভার ছাপ রেখেছ তুমি।