নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভারতীয় দলের কোচ রবি শাস্ত্রীর সঙ্গে সৌরভ গাঙ্গুলির সম্পর্ক যে ভালো নয়, তা সবারই জানা। ২০১৬ সালে ‘টিম ইন্ডিয়া’র কোচ নির্বাচন ঘিরে দু’জনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। তারপর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়েছে। সৌরভ, শচীন, লক্ষ্মণদের পছন্দের কোচ অনিল কুম্বলে শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েছিলেন পদত্যাগ করতে। তারপর কোহলির ইচ্ছাকে গুরুত্ব দিয়ে বিসিসিআই রবি শাস্ত্রীকে হেড কোচ নিযুক্ত করেছিল। মেয়াদ পূর্তির পর রবি শাস্ত্রী ফের বিরাট কোহলিদের হেডস্যারের দায়িত্ব নিয়েছেন। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু নাটকীয়ভাবে সৌরভ গাঙ্গুলি বোর্ড সভাপতি হওয়ায় ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে গুঞ্জন, শাস্ত্রীকে হয়তো এবার সবক শেখাবেন সৌরভ। হয়তো কোচের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সেই সম্ভাবনায় জল ঢেলে মহারাজ শুক্রবার শহরে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘এটা অনেকের অনুমান। এই ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কেউ যদি ভালো পারফর্ম করে, তাহলে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমিও যখন খেলতাম, তখনও একই নিয়ম ছিল। তাই অনেকে অনেক কথা বলবেন, তাতে কান দেওয়ার দরকার নেই। বাইশ গজে ভালো পারফর্ম করার দিকেই নজর দেওয়া দরকার।’
ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন সৌরভ। তিনি জানিয়েছেন, ‘বিরাট তরুণ প্রজন্মের রোল মডেল। শুধু মাঠে নয়, মাঠের বাইরেও ওকে অনেকে ফলো করে। বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার পর বলেছিলাম, ভারতীয় দলের সাফল্যের জন্য বিরাট, রবির যাবতীয় চাহিদা মেটানো হবে।’ আগামী বছর অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে টি-২০ বিশ্বকাপে বিরাট কোহলিদের খোলা মনে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার পরামর্শ দিয়েছেন সৌরভ।
বোর্ড সভাপতি হিসাবে সৌরভ গাঙ্গুলির মেয়াদ শেষ হবে জুলাইয়ে। তবে সংবিধান সংশোধনের জন্য ফের সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছে বিসিসিআই। এই প্রসঙ্গে সৌরভ বলেছেন, ‘আদালতে আবেদন জানানোর অধিকার রয়েছে সবার। আমরাও সেই পথেই হেঁটেছি। সুপ্রিম কোর্ট যদি আমাদের আবেদন সাড়া দেয়, তাহলে তিন বছর সভাপতি হিসেবে কাজ চালাতে পারব। না হলে দশ মাস পর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেব।’
মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে সৌরভ বলেছেন, ‘ধোনি মহান ক্রিকেটার। ওকে নিয়ে সব কথা সবার সামনে বলা উচিত নয়। আমরা ওর সঙ্গে আলোচনা করেছি। ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির অবদান কখনও ভোলার নয়। আগেও বলেছি, ধোনির উপরই সব কিছু নির্ভর করছে। সিদ্ধান্ত ওকেই নিতে হবে।’
গোলাপি টেস্ট নিয়ে ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির ভিন্ন মত পোষণ করেছিলেন বোর্ড সভাপতি। এবার ঋষভ পন্থকে নিয়ে বর্তমান ও প্রাক্তন অধিনায়ক দুই মেরুতে। গতকালই বিরাট বলেছিলেন, ‘ঋষভ যখন খেলতে নামে তখন গ্যালারি থেকে ধোনি...ধোনি... চিৎকার করা হয়। যা কাম্য নয়। ঋষভকে খোলা মনে খেলতে দেওয়া দরকার।’ সৌরভ অবশ্য মনে করছেন এই ধরনের চাপ তরুণ ক্রিকেটারদের পক্ষে ভালো। তাঁর যুক্তি, ‘চাপ কাটিয়ে ওঠার উপায় জানতে হবে। গত আইপিএলে দিল্লির অন্যতম সেরা ক্রিকেটার ছিল ঋষভ। গ্যালারি ভর্তি মাঠে ওর খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। আমি যদি কোহলি হতাম, তাহলে ওকে পরামর্শ দিতাম যে, এগুলো নিয়েই সাফল্যের পথ খুঁজে বের করো। তবে আমি ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের বলতে চাই, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ক্রিকেটার একবারই আসে। তাই মাহির সঙ্গে ঋষভের তুলনা টানা অনুচিত। ধোনি হয়ে উঠতে ১৫ বছর সময় লেগেছিল মাহির। আর ধোনি সাফল্যের যে শিখর স্পর্শ করেছে, সেখানে পৌঁছাতে ঋষভেরও ১৫ বছর সময় লাগবে।’
এদিকে, ২০২১ সালে অস্ট্রেলিয়ায় মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারত। এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে, অ্যাডিলেডে বিরাট কোহলিরা গোলাপি বলে দিন-রাতের টেস্ট খেলবেন। কিন্তু ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া বিসিসিআইয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে, দু’টি দিন-রাতের ম্যাচ খেলার জন্য। কিন্তু বোর্ড সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলি ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সেই অনুরোধ সটান প্রত্যাখান করে দিয়ে বলেছেন, ‘আমরা অস্ট্রেলিয়ায় চারটি টেস্ট খেলব। তার মধ্যে দুটি দিন-রাতের হলে একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। তবে আমরা চাইছি, প্রত্যেক সিরিজেই একটা করে দিন-রাতের টেস্ট খেলতে।’