বিদ্যুৎকান্তি বর্মন, ফালাকাটা: চালের গোডাউনে কাজ করে বাবা কোনওরকমে সংসার চালান। মা সেলাই মেশিন চালিয়ে সামান্য কিছু অর্থ উপার্জন করেন। যা সামান্য উপার্জন হয় তা দিয়ে মেয়ের পড়াশোনার খরচ চালান কুণ্ডু দম্পতি। এই প্রতিকূলতার মাঝে ঋত্বিকার পিঠে বছর খানেক আগে শুরু হয় অসহ্য যন্ত্রণা। ডাক্তারের পরামর্শে তড়িঘড়ি শিরদাঁড়ায় জটিল অস্ত্রোপচার করতে হয়। সেই অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে ধারদেনা করতে হয়েছে। পাশাপাশি মেয়ের স্কুল সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সাহায্য নিতে হয়েছে। ফালাকাটা পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের অরবিন্দপাড়ায় বাস ওই পরিবারের। নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। কিন্তু সমস্ত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে ঋত্বিকা কুণ্ডু এবার মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬৫২। মা কাকলি কুণ্ডু বলেন, মেয়ের মেরুদণ্ডে জটিল অস্ত্রোপচার হয়েছে। কমপক্ষে পাঁচ বছর বিশ্রাম নিতে বলেছেন ডাক্তার। ফলে সেভাবে প্রতিদিন ও স্কুল যেতে পারিনি। গত বছর বেঙ্গালুরুতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। মেয়ে বাড়িতেই পড়েছে। ওর সাফল্যে আমরা গর্বিত। বিজ্ঞান নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চায়। তবে এই আর্থিক অনটনের মধ্য মেয়ের স্বপ্ন কতটা পূরণ করতে পারব, জানি না।
ফালাকাটা গার্লস হাইস্কুলের ছাত্রী ঋত্বিকা বাংলা ও ইংরাজিতে ৯০, অঙ্কে ৯৮, ভৌতবিজ্ঞান ও ইতিহাসে ৯১, জীবনবিজ্ঞানে ৯৫ এবং ভূগোলে ৯৭ নম্বর পেয়েছে। ঋত্বিকা বলে, বাবা-মা, স্কুলের শিক্ষিকা ও গৃহশিক্ষকদের কথা মতো পড়ে এই নম্বর পেয়েছি। মূলত রাত জেগে পড়েছি। ভবিষ্যতে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। বাবা নারায়ণ কুণ্ডু বলেন, মেয়ের সাফল্যে আমরা গর্বিত। পড়াশোনার আর্থিক খরচ চালানো যদিও এখন চিন্তার মূল কারণ। তবে চেষ্টা করব মেয়ের স্বপ্ন পূরণের। সরকারি আর্থিক সাহায্য বা স্কলারশিপ পেলে সুবিধা হতো। নিজস্ব চিত্র