সম্মানরক্ষায় বাড়তি সতর্কতা প্রয়োজন। শত্রুর সঙ্গে সম্মানজনক সমঝোতা। বাড়ি ঘর বাহন কেনার যোগ। কর্মে সংস্থাগত ... বিশদ
শিলিগুড়ি দীর্ঘদিনের বাম দুর্গ হিসেবে পরিচিত। ২০১১ সালে পরিবর্তনের ঝড়ে এই দুর্গে ধাক্কা লাগে। আসন খোয়ান অশোক ভট্টাচার্য। যদিও ফের তিনি ঘুরে দাঁড়ান। তাঁর নেতৃত্বে ২০১৫ সালে শিলিগুড়ি পুরসভা এবং মহকুমা পরিষদ দখল করে বামেরা। পাশাপাশি ২০১৬ সালে তিনি ফের বিধায়ক হন। এবার এই দুর্গেই শোচনীয়ভাবে পর্যুদস্ত হলেন অশোকবাবু। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এবার এখানে প্রদত্ত ভোটের সংখ্যা ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫৭৬টি। যারমধ্যে সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপিএম প্রার্থী অশোকবাবু পেয়েছেন মাত্র ২৮ হাজার ৮৩৫টি ভোট। যা প্রদত্ত ভোটের ছ’ভাগের একভাগও নয়। কাজেই, নির্বাচন কমিশনের নিয়ম অনুসারে এখানে অশোকবাবুর জামানত জব্দ হয়েছে।
অশোকবাবু অবশ্য বলেন, এবার কোনও পারফরমেন্সের নিরিখে ভোট হয়নি। মেরুকরণের ভোট হয়েছে। ফলে আমরা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছি। শুধু শিলিগুড়ি নয়, আলিপুরদুয়ার থেকে ফাঁসিদেওয়া পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাই এটাকে রাজনৈতিক বিপর্যয় বলছি।
শিলিগুড়িতে অশোকবাবুর স্থান দাঁড়িয়েছে তিন নম্বর। ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোটে অশোকবাবু ৪৬.৩৬ শতাংশ ভোট পেয়ে ঘুরে দাঁড়ান। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট থেকে তাঁদের ভোটব্যাঙ্কে ধস নামতে শুরু করে। সেই নির্বাচনে তাঁদের ভোট কমে দাঁড়ায় ৮.২১ শতাংশ। এবারও চলে যাওয়া ভোট ফেরাতে ব্যর্থ বামেরা। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলেন, বামেরা রামে যাওয়া ভোট উদ্ধার করতে পারেনি। তাছাড়া আইএসএফের সঙ্গে বামফ্রন্টের জোট অনেকে মেনে নিতে পারেননি। তাই একসময়ের ‘লালদ্বীপ’ থেকে সিপিএম কার্যত মুছে গিয়েছে। অশোকবাবু বলেন, এবারের ভোটে গত লোকসভা ভোটের ট্রেন্ড রয়ে গিয়েছে। যা আমরা রুখতে পারিনি। বামফ্রন্টের ভোট ম্যানেজাররা অবশ্য বলেন, এবার ভোটাররা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যান। যার ফলে পুরোপুরি মুসলিম এবং কিছুটা হিন্দু ভোট তৃণমূলে গিয়েছে। আর রাজবংশী, ওপার বাংলার মানুষ সহ অধিকাংশ হিন্দু ভোট গিয়েছে বিজেপিতে। কিন্তু, আইএসএফের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বামফ্রন্টের কোনও লাভ হয়নি। অর্থাৎ ‘পেটও ভরল না, জাতও গেল’ এই প্রবাদটাই এখন বামফ্রন্টের কাছে বাস্তব। এদিকে, তৃণমূলের ভোটের গতিপ্রকৃতি প্রায় একইরকম রয়েছে। এবারের বিধানসভা নির্বাচন এবং গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করার পর রাজনৈতিক মহল এমনটাই মনে করছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখানে তৃণমূলের স্থান ছিল দ্বিতীয়। সেবার তাদের প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট দাঁড়ায় ৩৮.০১ শতাংশ। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে এখানে তারা দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও তাদের ভোট ছিল ২৩.৪৩ শতাংশ। যদিও সেই নির্বাচন প্রবল মোদি হাওয়া ও অন্য অঙ্কের উপর নির্ভর করে হয়। এবার বিধানসভা ভোটে এখানে তৃণমূলের স্থান রয়েছে দ্বিতীয়। তাদের প্রার্থী ওমপ্রকাশ মিশ্র পেয়েছেন ৫৩ হাজার ৭৮৪ ভোট। যা ৩০.৪৫ শতাংশ। এ নিয়ে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, এখানে বাম ভোট রামে চলে গেলেও তৃণমূল নিজেদের ভোটের ট্রেন্ড ধরে রেখেছে। এর থেকেই স্পষ্ট, এখানে তৃণমূলের শক্তি বৃদ্ধি হয়েছে। তৃণমূলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি (সমতল) রঞ্জন সরকার বলেন, এখনও ভোটের ফলাফল নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়নি। শীঘ্রই এ ব্যাপারে দলে আলোচনা করা হবে। তবে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, জিততে না পারলেও এখানে আমাদের ভোট প্রায় একই জায়গায় আছে।