পড়শির ঈর্ষায় অযথা হয়রানি। সন্তানের বিদ্যা নিয়ে চিন্তা। মামলা-মোকদ্দমা এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেমে বাধা।প্রতিকার: একটি ... বিশদ
নিয়মমতো এটা ‘অর্ধকুম্ভ’। ১২ বছরের মধ্যে দু’বার অর্ধকুম্ভ অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য উত্তরপ্রদেশ সরকার পাল্টে ‘কুম্ভমেলা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে। মঙ্গলবার মকর সংক্রান্তির দিন প্রথম শাহী স্নান। কুম্ভের প্রথা অনুযায়ী ১৩টি আখড়ার (সাতটি শৈব, তিনটি বৈষ্ণো, দু’টি উদাসীন এবং একটি শিখ) সাধু প্রথম শাহী পুণ্যস্নানে অংশ নেন। তারপরই সাধারণ মানুষ জলে নামেন। ১৩টি আখড়ার সাধু ভক্তিমূলক গানের সঙ্গে শোভাযাত্রা করে ঘাটে পৌঁছান। সেই শোভাযাত্রা দেখতে ভোররাত থেকেই ভক্তরা ভিড় করেছিলেন। তবে প্রতিবারের মতোই এবারও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন নাগা সন্ন্যাসীরা। সদূর জার্মান থেকে এসেছেন ম্যানুয়েল ম্যাথুস। নাগা সন্ন্যাসীদের দেখে উৎসাহিত ম্যাথুস বলেন, অতিবাস্তব ব্যাপার। ছোটবেলা থেকে ওনাদের সম্পর্কে শুনেছি। ওঁদের দেখতেই আমার এবারের কুম্ভমেলায় আসা। এটা এমন একটি উৎসব, যেখানে লক্ষ লক্ষ ভারতবাসী একত্রিত হন। আমিও পুণ্যস্নান করব। তবে, ভিড় একটু কমলে জলে নামব। বলতে বলতে ম্যাথুসের চোখ গেল তাঁর বান্ধবীর দিকে। তিনি তখন নাগা সাধুদের ছবি তুলতে ব্যস্ত। শাহীস্নানে অংশ নিতে ভোররাতেই পরিবারের সঙ্গে ঘাটে আসেন ৩৫ বছরের আয়ুষ্মান। ভেবেছিলেন ভিড় একটু কম হবে। কিন্তু বাস্তবে অন্য চিত্র। তিনি জানান, ভোর সাড়ে চারটা থেকে এসেছি। তখনই এখানে লক্ষ লক্ষ মানুষ। বিভিন্ন আখড়া মিলিতভাবে শাহীস্নানে অংশ নেওয়া সত্যি বিরল দৃশ্য। বেলা বাড়তেই উত্তরপ্রদেশ সরকারের মন্ত্রী-সান্ত্রিরা প্রয়াগে উপস্থিত হন। উত্তরপ্রদেশ সরকারের ধর্ম বিষয়কমন্ত্রী লক্ষ্মীনারায়ণ চৌধুরী আবার দাবি করেছেন, প্রয়াগরাজে প্রায় সাড়ে তিনশো বছর পর এই ধরনের ধর্মসভা অনুষ্ঠিত হল। কারণ, অতীতে প্রয়াগরাজের নাম পাল্টে এলাহাবাদ রাখা হয়েছিল। তাঁর মতে, সাড়ে তিনশো বছর আগে এলাহাবাদের নাম ছিল প্রয়াগরাজ। হিন্দু সংস্কৃতি এবং সনাতন ধর্মের পীঠস্থান ছিল প্রয়াগরাজ। বেদেও প্রয়াগরাজের নামোল্লেখ আছে। গত বছর মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশ সরকার এলাহাবাদের নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেয়। তাই সাড়ে তিনশো বছর পর প্রয়াগরাজে কুম্ভমেলা আয়োজিত হল। প্রসঙ্গত, গত ১৬ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশ সরকার ঐতিহাসিক শহর এলাহাবাদের নাম পাল্টে প্রয়াগরাজের ঘোষণা করে। কুম্ভমেলায় উপস্থিত উত্তরপ্রদেশের আর এক মন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিং বলেন, আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরে এই ‘মিনি-ভারতবর্ষ’। মানবিকতার বিকাশে কুম্ভ শান্তি এবং সম্প্রীতির নিদর্শন। ২০১৭ সালে ইউনেস্কো তাদের ‘মানবিকতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’তে কুম্ভমেলাকে স্থান দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সবটা বাস্তবায়িত হয়েছে। এবারের কুম্ভ চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। এই প্রথম ১৭২টি দেশ মেলায় অংশ নিয়েছে। দিব্য এবং ভব্য কুম্ভের পাশাপাশি স্বচ্ছ কুম্ভ হিসেবেও গণ্য হবে। ১১ হাজার সাফাইকর্মী দিনরাত মেহনত করছেন। এক লক্ষের বেশি অস্থায়ী শৌচাগার নির্মিত হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রায় একশো বছর পর এইবার প্রথম অক্ষয় বট এবং সরস্বতী কুপ সাধারণের দর্শনের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। কথিত আছে, এলাহাবাদ ফোর্টের ভিতর অবস্থিত অক্ষয় বটের কাছে মানত করলে তা পূরণ হয়। ফোর্টের ভিতরেই অবস্থিত সরস্বতী কুপেই পৌরাণিক সরস্বতী নদীর জল দেখতে পাওয়া যায়। পুরাণ অনুযায়ী, অন্তঃসলিলা সরস্বতী এখান দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে। পুরাণ এবং ভক্তিকে সাক্ষী করেই প্রয়াগে শুরু হল মানুষের উৎসব।