সুখেন্দু পাল, বহরমপুর: মুর্শিদাবাদে জয় পাওয়া তো দূরের কথা, ১৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃতীয় স্থানে চলে গেল কংগ্রেস। এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে। মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেসের এমন শোচনীয় হাল কোনওদিনই হয়নি। দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে তারা কোনওরকমে জামানত রক্ষা করেছে। হুমায়ুন রেজা, মাইনুল হক, আবু হেনা এবং মনোজ চক্রবর্তীর মতো প্রার্থীরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই দিতে পারেননি। অধীর চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত শিলাদিত্য হালদার, মোশারফ হোসেনরাও মাথা তুলতে পারেননি। তিনি তৃণমূলের প্রতীকে জিতে জেলা পরিষদের সভাধিপতি হয়েছিলেন। ভোটের কয়েকদিন আগে ‘দাদা’র আহ্বানে তিনি কংগ্রেসে যোগ দেন। দলের সর্বোচ্চ নেতা অধীর চৌধুরী তাঁর হয়ে একাধিক সভাও করেছিলেন। তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। ফিরোজা বেগমও রানিনগর থেকে বিপুল ভোটে পরাজিত হয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রে জানা গিয়েছে, ফরাক্কা, কান্দি এবং বহরমপুরে কোনওদিনই কংগ্রেসকে টলানো যায়নি। অথচ এবারের নির্বাচনে তারা তিন কেন্দ্রেই কার্যত ধুয়েমুছে সাফ হয়ে গিয়েছে। তিন কেন্দ্রে তাদের হটিয়ে বিজেপি দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। সূতি, সাগরদিঘি, মুর্শিদাবাদ, খড়গ্রাম, রঘুনাথগঞ্জে তাদের তিন নম্বরে চলে যেতে হয়েছে। বড়ঞা বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী বদলের খেসারত কংগ্রেসকে দিতে হয়েছে। এই কেন্দ্রের বিধায়ক ছিলেন প্রতিমা রজক। তাঁকে সরিয়ে শিলাদিত্য হালদারকে টিকিট দেওয়া হয়েছিল। প্রতিমাদেবী দলের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। তাঁর অনুগামী অনেকেই দলের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। এই কেন্দ্রেও কংগ্রেস তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। প্রতিমাদেবী বলেন, দলের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল। তা এদিনের ফলেই প্রমাণ হয়ে গিয়েছে। আমাকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি এলাকার মানুষজন মেনে নিতে পারেননি। আমি দলের বিরুদ্ধে কোনওকিছু করিনি। তবে ভোটের প্রচারেও সেভাবে নামিনি।
ভরতপুর, নবগ্রাম, বেলডাঙা বিধানসভা কেন্দ্রেও বিজেপি দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে উঠে এসেছে। তারা বহরমপুর এবং মুর্শিদাবাদ দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়ে নজর কেড়েছে। অতীতে এই জেলায় তাদের একটি আসনও ছিল না। ভোটের হারও কম ছিল। এমনকী আগে তাদের জমানত জব্দ হয়েছে। এবার প্রতিটি কেন্দ্রেই তারা ভোট বাড়িয়েছে।
মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০১৬সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল চারটি আসন পেয়েছিল। এবারে ১৮টি আসনে জয়লাভ করেছে। সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুর বিধানসভা কেন্দ্রে এখনও ভোট বাকি রয়েছে। এই দুই কেন্দ্রেও জয় পাওয়া সময়ের অপেক্ষা বলে শাসকদলের দাবি। কংগ্রেসের জেলা সভাপতি আবু হেনা বলেন, সারা রাজ্যে একটা ইস্যুতে ভোট হয়েছে। এই জেলাতেও তা হয়েছে। সেই কারণেই এমন ফল হয়েছে। কংগ্রেস সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, সূতি, রঘুনাথগঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদের মতো বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে তাদের সবচেয়ে খারাপ ফল হয়েছে। বামেরাও জেলায় লড়াই দিতে পারেনি। অধিকাংশ আসনেই তৃণমূল বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে। বহরমপুর শহরের এক বাসিন্দা বলেন, গত লোকসভা ভোটেই কংগ্রেস অনেকটা কোণঠাসা হয়ে গিয়েছিল। এবার বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এভাবে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে তা কল্পনাও করা যায়নি। এর জন্য দলের নেতৃত্বই দায়ী। ওদের ভুল সিদ্ধান্তের জন্যই মানুষ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রেখেছেন।
তৃণমূল নেতা নিয়ামত শেখ বলেন, এই জেলায় কংগ্রেস বিজেপিকে মদত দেওয়ার কাজ করেছে। মানুষ তা মেনে নেয়নি। তারা উন্নয়ন ও সম্প্রীতিকে সমর্থন করেছেন।