কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশ্রমে শারীরিক ও মানসিক কষ্ট। দূর ভ্রমণের সুযোগ। অর্থ প্রাপ্তির যোগ। যে কোনও ... বিশদ
শিক্ষা দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী সমাজে এই ডাইনি নিয়ে কুসংস্কারের বিলোপ ঘটানো যায়নি। তাই এই সংক্রান্ত বিষয়ে যাতে স্কুলস্তর থেকেই সচেতনতার পাঠ দেওয়া যায়, তার জন্য শিক্ষকদের তরফে প্রস্তাব দেওয়া হয়। বলা হয়, নানা সামাজিক ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়া হলেও, এই জীবন্ত ইস্যুকে কেন স্কুলপাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে না? তাই দপ্তরের কর্তারা এ নিয়ে আলোচনা করে ডাইনি নিয়ে সচেতনতার প্রচারকে সিলেবাসে আনার সিদ্ধান্ত নেন। ইতিমধ্যে সেই বই ছাপা সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে।
পাঠ্যপুস্তকে কী কী দেওয়া হয়েছে? সাধারণত সমাজে কাদের ডাইনি অপবাদ দিয়ে ‘টার্গেট’ করা হয়, কীভাবে তাদের চিহ্নিত করে সুযোগসন্ধানীরা, সবই বিস্তারিতভাবে দেওয়া হয়েছে। বইয়ে বলা হয়েছে, কুসংস্কারই এই প্রথার মূল কারণ। কীভাবে গ্রামবাসীরা জানগুরুর খপ্পরে পড়ে নিরীহ মহিলাদের এই ডাইনি অপবাদ দিয়ে অত্যাচার করে, তা বলা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্তও ঘটে। এই রকম প্রথার যে কোনও ভিত্তি নেই, তাও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কীভাবে ডাইনি চিহ্নিত করা হয়? কোনও মহিলা বা একাধিক মহিলাকে টার্গেট করতে এই জানগুরু অনেককেই ধরে আনে। তারপর তাঁদেরকে মন্ত্রঃপূত চাল খাওয়ানো হয়। তারপর বলা হয়, যার মুখ দিয়ে লাল রক্ত বেরবে, তিনিই ডাইনি। এবার যার মুখ দিয়ে সেইরকম লক্ষ্য করা যায়, তাঁকেই ডাইনি অপবাদ দিয়ে অত্যাচার করা হয়। কিন্তু আসলে সবই কারসাজি। ওই চালের সঙ্গে কোনও ধরনের কেমিক্যাল বা রং মিশিয়ে খাইয়ে দেওয়া হয়। তার জেরেই মুখ লাল হয়ে যায়। আবার আটার গুলি কিংবা চুন দিয়েও গ্রামে ডাইনি চিহ্নিত করার কাজ করে কিছু অসাধু ব্যক্তি। কিন্তু সামান্য উপস্থিত বুদ্ধি কিংবা চিন্তাধারণা এই সব ভণ্ড কাজকর্ম ঠেকানো সম্ভব বলে বইয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। অশিক্ষার কারণে যাতে গ্রামে গ্রামে মহিলাদের টার্গেট না করা হয়, তার জন্য বিশেষ বার্তাও দেওয়া হয়েছে।
সিলেবাস কমিটির সদস্য তথা অষ্টম শ্রেণীর স্বাস্থ্য ও শারীর শিক্ষা বইয়ের পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা দ্বীপেন বসুর কথায়, অন্যান্য সামাজিক সমস্যার সঙ্গে এই ডাইনি সমস্যাও গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য স্কুলস্তর থেকেই সচেতনতার কাজ শুরু করা হচ্ছে। সরকার আদিবাসী কল্যাণে নানা কাজ করেছে। আদিবাসী সমাজ থেকে যাতে এই কুসংস্কার দূর করা যায়, তারই প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে পাঠ্যপুস্তকে লিঙ্গ সমতা, কন্যাশ্রী, পথ নিরাপত্তা, পরিবেশ রক্ষা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সচেতনতার পাঠ দেওয়া হয়। তবে বর্তমানে ছেলেধরা সন্দেহে যেভাবে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে, সেটি নিয়েও সচেতনা দরকার আছে বলে মনে করছেন শিক্ষকরা। তাই আগামীদিনে এটিও পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি তোলা হয়েছে।