সন্তানের তীক্ষ্ণ বাক্য ও উদ্ধত আচরণে মনঃকষ্টের যোগ। কর্ম নিয়ে জটিলতার অবসান। অর্থকড়ি দিক অনুকূল। ... বিশদ
ওড়িশার গঙ্গারামপুরের কেন্দ্রপাড়ার পঞ্চায়েত হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র প্রাণতোষ প্রধান। পূর্ব ভারতের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মেলায় সে এসেছিল। এনেছিল আত্মহত্যা রোখার যন্ত্র। ছাত্রটি জানাল, পাখা ঝোলানোর যে রড থাকে সেখানে রাখার জন্য একটি লক সিস্টেম তৈরি করেছে সে। ১০ কিলোর বেশি ওজনের চাপ পড়লেই লকটি খুলে যাবে। বেরিয়ে আসবে স্প্রিং। খুলে যাবে দড়ি। এই প্রযুক্তি বাড়িতে থাকলে কোনও মানুষ ঝোলার চেষ্টা করলেই বিফল হবেন। পাখায় ঝোলার চেষ্টা করলে বেজে উঠবে সাইরেন। তাকে প্রশ্ন করা হল, ‘সাইরেন বাজার পর কেউ যদি উদ্ধার করতে এসে দেখে দরজা বন্ধ?’ প্রাণতোষ বলে, ‘তার জন্য স্মার্ট ডোর তৈরি করা হয়েছে। তা কোডিং করা থাকবে। কেউ ঝোলার চেষ্টা করলে নিজে থেকেই খুলে যাবে দরজা।’
প্রাণতোষের চেহারা ছোটখাট। উজ্জ্বল চোখে বুদ্ধির ঝিলিক। প্রায় সব প্রশ্নেরই উত্তর আছে মেধাবী ছাত্রটির ঠোঁটে। বলল, ‘সাইরেন বাজবে। স্মার্ট দরজা খুলে যাবে। পাখা স্প্রিংয়ের সাহায্যে খুলে পড়বে। কোডিং এমনভাবে করা যে, তার মাধ্যমে নির্দিষ্ট একটি ফোন নম্বরে ফোনও চলে যাবে। তবে আমার এই যন্ত্র একেবারেই যে ত্রুটিমুক্ত সেই দাবি করছি না। ঘরোয়া জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে তা আরও নিঁখুত করা সম্ভব। এই প্রযুক্তি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে ব্যবহার করলে আত্মহত্যা অনেকটাই রোখা যাবে।’
প্রাণতোষের বাসস্থান ছোট শহরটিতে রয়েছে কোটা হোস্টেল। সারা দেশ থেকে বহু স্বপ্ন নিয়ে পড়ুয়ারা সেখানে আসে জীবন গড়তে। সমাজের বিপুল চাহিদা অনেকের কাঁধে। তা বহু সময় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। স্বপ্ন হোঁচট খায়। আর চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে বেছে নেয় আত্মহননের পথ। চোখের সামনে এসব দেখে বড় হয়েছে প্রাণতোষ। তার শিশুমন ভেবেছে, কোনওভাবে যদি অপঘাতে মৃত্যু আটকানো যেত? বারবার কথা বলেছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে। দিন-রাত এক করে ইন্টারনেটে পড়াশোনা করেছে। সমস্যার সমাধান করতে আশ্রয় নিয়েছে বিজ্ঞানের বইয়ের খুঁটিনাটি বিষয়ে। তার কথায়, ‘আমাদের ওখানে কোটা হোস্টেল রয়েছে। সেখান থেকে আত্মহত্যার খবর পাই। তা রুখতেই কিছু তৈরির ভাবনা এসেছিল মনে।’ দশম শ্রেণির এই ছাত্রের উদ্ভাবনে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা পুরোপুরি নির্মূল হবে কি না বলা মুশকিল। কিন্তু ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য একটি কিশোরের এই মেধাবী প্রচেষ্টা নতুন দিশা দিতে পারে সমাজকে, বক্তব্য গবেষকদের।