নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলিতে ১০টি করে বেড নির্দিষ্ট করা থাকবে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের জন্য। এবারই প্রথম কলকাতা পুরসভার ওয়ার্ড স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকেও সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের রেফার করার সুবিধা চালু হচ্ছে। পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে রোগী ‘রেফার’ করলে হাসপাতালে বেড পেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয় এবং ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসায় যাতে সময় নষ্ট না হয়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসচিব রাজীব সিনহা সহ একাধিক শীর্ষস্থানীয় কর্তার সঙ্গে শুক্রবার কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং ডেপুটি মেয়র তথা স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বে থাকা অতীন ঘোষ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকের পর রাজ্য সরকার ও পুরসভার এই যৌথ তৎপরতার কথা জানিয়েছেন অতীনবাবু। পাশাপাশি পুরসভায় তৈরি হয়েছে একটি সমন্বয় কমিটি। পুরসভার বিশেষ কমিশনার তাপস চৌধুরীকে সেই কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে। এখন থেকে একেবারে ঠান্ডা না পড়া পর্যন্ত সময়কে ডেঙ্গুর মরশুম বলা চলে। এই সময়ে যাতে পুরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ইউনিট, স্বাস্থ্য বিভাগ এবং রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সবক্ষেত্রে সমন্বয় রেখে দ্রুত কাজ করতে পারে, তার জন্য তাপসবাবুর নেতৃত্বে এই কমিটি গড়া হয়েছে বলে জানান অতীনবাবু।
এদিন রাজ্য সরকারের কর্তারা পুরসভাকে জানিয়ে দিয়েছেন, ডেঙ্গু ঠেকাতে অর্থের জন্য যেন কোনও গড়িমসি না করা হয়। কোনও এলাকা পরিষ্কার থেকে শুরু করে জমা জলে লার্ভা মারা, প্রয়োজনে ড্রোন উড়িয়ে মশা মারার তেল ছড়ানো ইত্যাদি কাজের জন্য অর্থের সংস্থানের কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু কাজ করতে হবে দ্রুত। এদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ডেঙ্গুপ্রবণ বলে চিহ্নিত ৩, ৬, ৭, ১০, ১২ এবং ১৪ নম্বর বরোর চেয়ারম্যানরা। এই বরোগুলির বিভিন্ন ওয়ার্ডে গত বছরও ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা গিয়েছিল। এবার যাতে কোনওভাবে প্রতিরোধের কাজে গাফিলতি না থাকে, তার জন্য কাউন্সিলারদের প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকার জন্য আবেদন জানাবেন বরো চেয়ারম্যানরা। তাঁদের আরও বলা হয়েছে, এলাকায় যেসব পরিত্যক্ত বাড়ি, অফিসঘর কিংবা তালাবন্ধ ঘরবাড়ি রয়েছে, সেগুলির উপর যেন স্বাস্থ্যকর্মীরা নজর রাখেন। অতীনবাবু বলেন, যেসব জায়গায় আমরা কোনওভাবেই যেতে পারছি না, কিন্তু ড্রোন ক্যামেরায় নজরদারিতে মশার লার্ভা ধরা পড়ছে, সেখানে ড্রোনের সাহায্যেই আমরা মশা মারার তেল ছড়াব। কোথাও জঞ্জাল জমিয়ে রাখলে পরপর দু’বার নোটিসে কাজ না হলে পুর-আইনের সংশোধিত ৪৯৬-এ ধারা অনুযায়ী এক হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত জরিমানার পথে হাঁটবে পুরসভা। এছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত পথে যাতে ডেঙ্গু আক্রান্তের চিকিৎসা হয়, তার নজরদারিতে ১০ জনের একটি টিম ইতিমধ্যেই রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর তৈরি করেছে বলে জানান অতীনবাবু। ওই পথ ছেড়ে অন্য কোনওভাবে চিকিৎসা করলে বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারে প্রশাসন। সেই হুঁশিয়ারি আগেই দেওয়া হয়েছে।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত কলকাতায় ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ১৩২। গত বছর এই সময়ে যা ছিল প্রায় ২০০। তবে বৃষ্টি সেভাবে না হওয়ায় এবার এখনও সেভাবে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তাই এখনই আক্রান্তের সংখ্যা কমে যাওয়াকে সাফল্য বলে ধরা ঠিক হবে না বলে মনে করছেন পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগের একাধিক আধিকারিকরা।