aনিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান: উন্নয়ন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ২০১৮সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে অনুব্রত মণ্ডলের এমন মন্তব্য রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তুলেছিল। কবি শঙ্খ ঘোষ তা নিয়ে লিখেছিলেন, ‘দেখ খুলে তোর ত্রিনয়ন, রাস্তাজুড়ে খড়্গ হাতে দাঁড়িয়ে আছে উন্নয়ন।’ অনুব্রতবাবু উন্নয়নের ব্যাখ্যা দেননি। লোকসভা ভোটের আগে সেই উন্নয়নই তৃণমূলের হাতিয়ার। এখন উন্নয়ন বলতে তৃণমূলের চালু করা একাধিক জনমুখী প্রকল্প। রাস্তাঘাটের ভোল বদলে যাওয়া, ট্যাপ খুললেই বাড়িতে জল।
এবার ভোট ময়দানে অনুব্রত মণ্ডল নেই। তাঁর জায়গায় বর্ধমানের কেতুগ্রাম এবং মঙ্গলকোটে নজর রাখছেন কাজল শেখ। তিনি বলছেন, উন্নয়ন আমাদের একমাত্র তাস। এজন্যই বিরোধীরা ৪জুন ইভিএমে ভোট গণনার পর চোখে সর্ষেফুল দেখবে। কাজলবাবু ‘চড়াম চড়াম’ বা ‘গুড় বাতাসা’য় ভরসা করতে রাজি নয়। তিনি বলেন, ওসবের দরকার হবে না। আমরা যে উন্নয়নমূলক কাজ করেছি, সেটা নিয়েই মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমজনতা দু’হাত তুলে আশীর্বাদ করছেন। স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বীরভূমের দু’টি লোকসভা কেন্দ্র দেখছেন। তাই আমরা জয় নিয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।
তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, বীরভূমের পাশাপাশি বর্ধমানের মঙ্গলকোট, কেতুগ্রাম এবং আউশগ্রামে ‘কেষ্ট’ শেষ কথা ছিলেন। কীভাবে ভোট পরিচালনা করতে হবে তার উপায় বাতলে দিতেন। ভোট ময়দানে দলের অনেকেই অনুব্রতবাবুর অভাব বোধ করছেন। কাজল বলেন, উনি আমাদের রাজনৈতিক অভিভাবক। তাঁর অভাব তো অনুভব করবই। তবে সেটা হৃদয়ে। রাজনীতিতে কোনও অভাবের জায়গা নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দু’টি লোকসভা কেন্দ্রে দেখছেন। তিনি সমস্ত অভাব পূরণ করে দিয়েছেন।
আউশগ্রাম, কেতুগ্রাম এবং মঙ্গলকোট বিধানসভা বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্ভুক্ত। তিনটি কেন্দ্রই তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। বিধানসভা বা পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিরোধীরা মাথা তুলতে পারেনি। আউশগ্রামে শাসকদলের নিজেদের মধ্যে মধ্যে টানাপোড়েন রয়েছে। কিন্তু ভোটে তার প্রভাব পড়বে না বলেই নেতৃত্বের দাবি। মঙ্গলকোটের তৃণমূলের একছত্র প্রভাব রয়েছে। বিজেপির দাবি, এই বিধানসভা কেন্দ্রে তাদের কর্মীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। কেতুগ্রামেও একই কাজ হচ্ছে। বিজেপি প্রার্থী পিয়া সাহা বলেন, সন্ত্রাস ছাড়া তৃণমূলের সামনে অন্য কোনও উপায় নেই। সেকারণেই তারা ভয় দেখাচ্ছে। মানুষ তার জবাব দেবে। বর্ধমানের এই তিন বিধানসভা কেন্দ্র একসময় সিপিএমের দুর্গ ছিল। এখন তা ভেঙে সবুজ গড়ে পরিণত হয়েছে। এতদিন অনুব্রত মণ্ডলই সেই গড় রক্ষা করেছেন। কখনও গুড়-বাতাসা আবার কখনও চড়াম চড়াম টোটকা প্রয়োগ করে বাজিমাত করেছেন। এবার সেখানে উন্নয়নই তৃণমূলের হাতিয়ার।