পারিবারিক সম্পত্তি বিভাজনে আইনি চাপ বাড়তে পারে। কাজকর্মে যোগাযোগের অভাবে বিঘ্ন। ... বিশদ
সালটা ২০০৪। জেলায় সিপিএমের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াই করতে গিয়ে ওই পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল কংগ্রেস। সেটাই এখন তৃণমূলের কাছে মোক্ষম অস্ত্র। পুস্তিকার মুখবন্ধে লেখা হয়েছিল—‘কংগ্রেস দল ও তার নেতা অধীর চৌধুরীকে খুনি বলে অপপ্রচার করে সিপিএম। কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলায় ঘাতক সিপিএম বাহিনীর হাতে ২৭ বছরে নৃসংশভাবে শহিদ হয়ে যাওয়া কংগ্রেস কর্মীদের তালিকা কী প্রমাণ করে? সন্ত্রাস, খুন, ঘাতক বাহিনীর জন্ম দেয় ওরাই।’ পুস্তিকা প্রকাশের ২০ বছর পর সিপিএম সম্পর্কে কংগ্রেসের এই অবস্থান তুলে ধরে তৃণমূল বলতে শুরু করেছে, ‘খুনোখুনি করা দু’টি দল এবার জোট বেঁধেছে।’ সেই সঙ্গে বাম ও কংগ্রেসের শহিদ পরিবারের কাছে গিয়ে মন বোঝারও চেষ্টা করছে তারা। স্বাভাবিক কারণেই জোট নিয়ে খানিক বিড়ম্বনায় পড়েছে সিপিএম ও কংগ্রেস।
জানা গিয়েছে, পুস্তিকার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৩০। প্রতিটি পৃষ্ঠার পরতে পরতে সিপিএমের সন্ত্রাসের কাহিনি। ১৯৭৭ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত মুর্শিদাবাদে সিপিএমের হাত খুন হওয়া ৫৯৩ জনের তালিকাও। সেখানে মৃতের নাম, বাবার নাম, গ্রাম ও থানার নামের পাশাপাশি কোন সালে খুন হয়েছেন তা উল্লেখ রয়েছে। ২০০৪ সালের পরেও জেলায় রাজনৈতিক খুনোখুনি হয়েছে। তবে ২০১১ সালে পালাবদলের পরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটতে থাকে। গত কয়েক বছরে এই জেলায় কংগ্রেসের মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠেছে তৃণমূল। গত কয়েকটি নির্বাচনে এই জেলায় তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস এবং বামেদের সংঘর্ষ ও খুনোখুনির ঘটনা ঘটেছে। তবে আগের তুলনায় জেলায় রাজনৈতিক খুনোখুনি কমেছে বলেই দাবি প্রশাসনের।
পুস্তিকার তথ্য বলছে, ডোমকলে ৭৭ জন কংগ্রেসের নেতা-কর্মী সিপিএমের হাতে খুন হয়েছেন। লালগোলায় ৪৯ জন, বেলডাঙায় ৩৪ জন, নবগ্রামে ২১ জন, ভগবানগোলায় ৩২ জন, সালারে ২৩ জন, ভরতপুরে ১০ জন খড়গ্রামে ৩৮ জন, লালবাগে ৮ জন, বড়ঞাতে ৩৭ জন, সূতিতে ১৯ জন, কান্দিতে ১ জন, সামশেরগঞ্জে তিন জন, সাগরদিঘিতে ২৪ জন, ফরাক্কায় ১৭ জন, রেজিনগরে একজন, ইসলামপুরে ৩৫ জন, হরিহরপাড়ায় ৫০ জন, রানিতলায় ৩৩ জন, নওদায় ৩২ জন, দৌলতাবাদে ২৩ জন এবং বহরমপুরে ২৫ জন খুন হয়েছেন। এই তথ্য এবার নির্বাচনী প্রচারে জোটকে ঘায়েল করতে যথেষ্ট কার্যকর দাওয়াই বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খান বলেন, ‘আমি মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন দেখেছি, কীভাবে সিপিএমের হাতে কংগ্রেসিরা অত্যাচারিত হয়েছেন। কংগ্রেসের নেতারা নিজেদের স্বার্থের জন্য সেসব ভুলে যেতে পারেন। কিন্তু খুন হয়ে যাওয়া কংগ্রেস কর্মীর পরিবার ভোলেননি। শহীদ পরিবারের সদস্যরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন। তাঁদের পরিবারের ভোট এবার আমরাই পাব।’
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা বহরমপুর কেন্দ্রের জোট প্রার্থী অধীর চৌধুরী বলেন, ‘একসময় আমরা অবশ্যই সিপিএমের বিরুদ্ধে লড়েছি। আজ দেশের স্বার্থে আমরা একজোট হয়ে লড়ছি। দেশ আগে, পার্টি পরে। বামেদের সঙ্গে একসময় অনেক বিরোধ ছিল। লোকসভা নির্বাচনে বামদেরকে হারিয়ে আমি এসেছি। এটা বলতে আমার কোনও দ্বিধা নেই। তবে, আমার বিশ্বাস বামেরা কখনও সাম্প্রদায়িক শক্তিতে প্রশ্রয় দেয়নি। সেই কারণে একটা জায়গায় আমাদের মধ্যে ঐক্য ছিল, আজও রয়েছে। রাষ্ট্রের স্বার্থে, ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক ভারতবর্ষের স্বার্থে আমাদের সেই ঐক্য আজ শক্তিশালী।’ তিনি আরও বলেন, ‘বামেদের বিরুদ্ধে আমি লড়াই করেছি, জেল খেটেছি। অথচ, বামেদের হয়ে যাঁরা সন্ত্রাস করত, সেই হার্মাদ বাহিনী আজ তৃণমূলের ঘরের দামাত হয়েছে। তৃণমূল আগে তাদের তালিকা প্রকাশ করে মানুষকে বলুক।’
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, ‘তৃণমূলের লাগামছাড়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানুষ জোট বেঁধেছে। এটা জনগণের জোট। সেখানে ছোটখাটো ব্যক্তিগত স্বার্থ দেখে লাভ নেই। বাম-কংগ্রেস জোট শহিদ পরিবারের ভোট পাবে না, এসব আজেবাজে কথা।’